অন্দরকিলা মসজিদ

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৫:৫৮, ২ জুন ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

অন্দরকিলা মসজিদ অন্দরকিলা (অভ্যন্তরীণ দুর্গ) বলে কথিত একটি উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত চট্টগ্রাম শহরে মুগলদের প্রথম স্থাপত্যকর্ম। মসজিদের ফারসি ভাষার শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, সুবাহদার শায়েস্তা খান এটি ১৬৬৭ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করেন। মনে হয়, এ মসজিদের প্রকৃত নির্মাতা ছিলেন সুবাহদারের জ্যৈষ্ঠপুত্র ও চট্টগ্রাম বিজেতা বুযুর্গ উমেদ খান, তবে তাঁর নামের কোনো উল্লেখ শিলালিপিতে নাই।

অন্দরকিলা মসজিদ (আধুনিক রূপ), চট্টগ্রাম

মসজিদটি দীর্ঘদিন যাবৎ অব্যবহূত ছিল, এবং ব্রিটিশ সামরিক কর্মকর্তাগণ এটিকে ১৭৬১ সালে অস্ত্র ও গোলাবারুদের গুদামে রূপান্তর করেছিলেন। ১৮৫৩ সালে হামিদুল্লা খানের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় মুসলিমগণ এটিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের নিকট ছেড়ে দেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেন। ১৮৫৫ সালে মসজিদটি মুক্ত হয় এবং একটি শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, মসজিদটি সম্পূর্ণরূপে সংস্কার করা হয়েছিল। পাকিস্তান আমলে এর পরিসর বৃদ্ধি করা হয় এবং এর আদি অবয়বের অনেকটাই পরিবর্তন করা হয়। এ ইমারতের পরিবর্ধন ও সংস্কার প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত আছে এবং এটি এখন বহুতলবিশিষ্ট একটি ইমারত। বহুবার সংস্কার কাজের পরও মসজিদের মূল কাঠামো সংরক্ষিত আছে।

আদি মসজিদটি আয়তাকার। এর ভিতরের পরিমাপ উত্তর-দক্ষিণে ১৭.০৭ মি এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৭.৩০ মি। চারটি অষ্টভুজাকৃতির কোণার বুরুজগুলির মধ্যে পেছনদিকের দুটি এখনও বিদ্যমান। এগুলি অনুভূমিক বপ্র অতিক্রম করে উপরে উঠে গেছে এবং শীর্ষে রয়েছে ক্ষুদ্র গম্বুজসহ নিরেট ছত্রী, যার উপরে কলসচূড়া শোভা পাচ্ছে। পূর্বদিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ উভয়দিকে একটি করে মোট পাঁচটি খিলান প্রবেশদ্বার আছে। এগুলিকে প্রশস্ত করা হয়েছে। পূর্ব দিকের প্রতিটি প্রবেশপথ একটি অর্ধগম্বুজাকৃতির খিলান ছাদের নিচে উন্মুক্ত। পূর্বদিকের প্রবেশপথ তিনটির বরাবর কিবলা দেওয়ালের ভেতরে তিনটি মিহরাব আছে। এগুলির মধ্যে পার্শ্ববর্তী মিহরাবগুলিকে জানালায় রূপান্তর করা হয়েছে। মাঝের খিলান পথ এবং মাঝের মিহরাব দুটিই সাধারণভাবে পার্শ্ববর্তীগুলির চেয়ে বড়। প্রান্তসীমায় শোভাময় ক্ষুদ্রবুরুজসহ এগুলির বাইরের দিকে রয়েছে অভিক্ষেপ। ক্ষুদ্র বুরুজগুলি কোণার বুরুজগুলির মতোই ছাদের উপরে উঠে গেছে এবং এগুলির মাথায় ছিল কলসচূড়াসহ ছোট গম্বুজ।

বড় অভ্যন্তরীণ কক্ষটি দুটি প্রশস্ত খিলানের মাধ্যমে তিনটি ‘বে’তে বিভক্ত। মাঝের ‘বে’টি বড় এবং বর্গাকৃতির, যার প্রতিবাহু ৭.৩২ মি। অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী প্রতিটি ‘বে’ আয়তাকার। এর পরিমাপ ৭.৩২ মি × ৩.৩৫ মি। মাঝের ‘বে’ টি বৃত্তাকার পিপার উপর স্থাপিত একটি গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত। পিপাটি সরাসরি দুটি প্রশস্ত খিলান এবং মাঝের মিহরাব ও মাঝের প্রবেশপথের উপর নির্মিত বদ্ধ খিলানের উপর স্থাপিত। কোণাগুলিকে আচ্ছাদিত করা হয়েছে ক্ষুদ্র অর্ধ-গম্বুজাকৃতি স্কুইঞ্চ দ্বারা। পাশের আয়তাকার ‘বে’ গুলির ছাদ অভ্যন্তরে ক্রুশাকৃতি খিলান ছাদ ধরনের। প্রতিটি ক্রুশাকৃতি খিলান ছাদের মাঝখানে একটি ছোট কৃত্রিম গম্বুজ বসানো হয়েছে, যা শুধু বাইরের দিক থেকে দেখা যায়। এ গম্বুজগুলি বাইরের দিক থেকে মসজিদটিকে একটি ‘তিন গম্বুজ’ বিশিষ্ট মসজিদের রূপ দিয়েছে। সবগুলি গম্বুজের শীর্ষভাগ স্বাভাবিক পদ্ম ও কলস চূড়া দ্বারা পরিশোভিত।

পেছন দিকের ছাদ-পাঁচিলে মেরলোন নকশাকৃত সারি ব্যতীত মসজিদটি তার আদি অলংঙ্করণ বর্জিত। এর অভ্যন্তীণ চার দেওয়াল এখন দামি জাপানি টালি দ্বারা আবৃত। দেওয়ালের বাইরের সম্মুখভাগ আস্তর ও চুনকাম করা।

পার্শ্ববর্তী আয়তাকার ‘বে’গুলির উপর স্থাপিত ক্রুশাকৃতি খিলান ছাদ সম্পর্কে বিশেষ কিছু মন্তব্য করা যায়। মসজিদের এ বিশেষ বৈশিষ্ট্য এ যাবৎ বাংলার স্থাপত্যে দেখা যায় নি। তাই মনে হয়, এটি সরাসরি উত্তর-ভারতের মুগল স্থাপত্য থেকে এখানে এসেছে। এ ধরনের বৈশিষ্ট্য ফতেহপুর সিক্রিতে তzুর্ক সুলতানার হাম্মামে দেখা যায়। ক্রুশাকৃতির খিলান ছাদ ইরানি স্থাপত্যে বারো শতকের শুরু থেকে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান। মুসলিম স্থাপত্যে এ বৈশিষ্ট্যের প্রাথমিক দুটি উদাহরণ ‘কুসির অমর’ (আনুমানিক ৭১৪) এবং রাক্কা নগরে অবস্থিত ‘বাগদাদ তোরণে’ দেখা যায়।  [এম.এ বারি]