চলচ্চিত্র স্টুডিও

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৬:২৫, ১৩ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

চলচ্চিত্র স্টুডিও  চলচ্চিত্র নির্মাণের যাবতীয় প্রযুক্তির সুবিধাসম্বলিত স্থাপনা। চলচ্চিত্রের আবিষ্কার বিজ্ঞানীর ল্যাবরেটরিতে হলেও পরবর্তীকালে এর বিকাশ ও উন্নয়ন ঘটেছে স্টুডিওতে। একটি চলচ্চিত্রের শুটিং থেকে শুরু করে ডাবিং, রেকর্ডিং, এডিটিং, প্রসেসিং, প্রিন্টিং পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের কাজের সুযোগ-সুবিধা থাকে স্টুডিওতে। ১৮৯২ সালে মার্কিন বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন বিশ্বের প্রথম চলচ্চিত্র স্টুডিও ‘ব্লাকম্যারিয়া’ প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতীয় উপমহাদেশে চলচ্চিত্র স্টুডিওর গোড়াপত্তন হয় বিশ শতকের প্রথম দিকে মুম্বাই, মাদ্রাজ, কলকাতা ও লাহোরে। অবিভক্ত বাংলার কলকাতায় প্রথম চলচ্চিত্র স্টুডিও স্থাপিত হয় ১৯১৫-১৬ সালের দিকে ম্যাডান থিয়েটারর্স-এর উদ্যোগে। ১৯৩০ সালে কলকাতায় স্থাপিত হয় আরেকটি স্টুডিও নিউ থিয়েটারস। ১৯৫৪-৫৫ সালে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় পূর্ব বাংলা সরকারের উদ্যোগে ফিনাকা স্টুডিও এবং ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৭ সালে স্থাপিত হয় পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা (ইপিএফডিসি)। এ সংস্থার অধীনে চলচ্চিত্র স্টুডিও এবং ল্যাবরেটরি চালু হয়। পরে ঢাকায় বেসরকারি পর্যায়ে আরও কয়েকটি স্টুডিও স্থাপিত হয়।

চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার স্টুডিও চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা (এফডিসি) তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদে বিল পাসের মাধ্যমে ‘পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা’ প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার লাভের পর এ সংস্থাটির নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত আট সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে এ সংস্থার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব পদাধিকারবলে এ সংস্থার চেয়ারম্যান। সংস্থার প্রধান নির্বাহী হলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বর্তমানে এফডিসিতে রয়েছে প্রশাসন ও অর্থ, উৎপাদন এবং প্রকৌশল বিভাগ। এসব বিভাগের পরিচালকবৃন্দ কর্পোরেশন পরিচালনা করে। সংস্থার অধীনে প্রায় ৪৫০ জন কর্মকর্তা, কুশলী ও কর্মচারী রয়েছে। এফডিসির প্রথম চেয়ারম্যান ও নির্বাহী পরিচালক (বর্তমান পদের নাম পরিচালক উৎপাদন) ছিলেন যথাক্রমে আবুল খায়ের (১৯৫৭-৫৮) এবং নাজীর আহমদ (১৯৫৭-৬২)।

চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে, ১. চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং স্টুডিও প্রতিষ্ঠা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানিকে ঋণদান; ২. চলচ্চিত্র স্টুডিও নির্মাণের জন্য কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে ঋণদান; ৩. নিজস্ব স্টুডিও স্থাপন এবং চিত্র নির্মাতাদের ভাড়ার বিনিময়ে স্টুডিও ব্যবহারের সুযোগ দান; ৪. চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রকল্প প্রণয়ন; ৫. চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সিনেফটোগ্রাফ, ফিল্ম ও অন্যান্য সরঞ্জাম এবং কাঁচামাল আমদানি; এবং ৬. চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজ।

সংস্থার অধীনে রয়েছে ৯টি শুটিং ফ্লোর, ১২টি শুটিং ইউনিট, ৩টি সাউন্ড থিয়েটার, রঙিন ও সাদাকালো ছবির জন্য ল্যাবরেটরি, ১৫টি এডিটিং মেশিন, অপটিক্যাল মেশিন, মুভি ক্যামেরা, বিভিন্ন ধরনের লাইট, ব্যাক প্রজেকশন মেশিন, পুকুর, কৃত্রিম হ্রদ, বাগান, জেনারেটর, ভ্যান ইত্যাদি। স্টুডিও এবং ল্যাবরেটরির দায়িত্ব পালন ছাড়াও সংস্থা মাঝে-মধ্যে চলচ্চিত্র নির্মাণ, প্রযোজনা, পরিবেশনায় অংশগ্রহণ, প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন, নতুন শিল্পী সন্ধান, চলচ্চিত্র উৎসব ও সেমিনারের আয়োজন, বিদেশি চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য ছবি বাছাই উৎসবে অংশগ্রহণ, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার কমিটি, ফিল্ম সেন্সর বোর্ড, অনুদান কমিটি, চলচ্চিত্র নীতিমালা প্রণয়ন কমিটিতে অংশগ্রহণ, প্রকাশনা এবং চলচ্চিত্র-সংক্রান্ত অন্যান্য কাজে জড়িত থাকে।

এফডিসি হচ্ছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের প্রাণকেন্দ্র। প্রতিষ্ঠালগ্নে এ সংস্থার সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বছরে গড়ে ৪/৫টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মুক্তি পেত। ২০০৮-০৯ সালে এ সংস্থার সহায়তা নিয়ে প্রায় ৭০/৭৫টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। সংস্থার সহায়তা নিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। এসব চলচ্চিত্রের মধ্যে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়ে পুরস্কার ও প্রশংসা পেয়েছে।

অন্যান্য স্টুডিও  চলচ্চিত্র নির্মাণের সুযোগ-সুবিধাসহ ঢাকায় দুটি বেসরকারি স্টুডিও রয়েছে। এর মধ্যে একটি বেঙ্গল মোশন পিকচার্স স্টুডিও লিমিটেড নামে ১৯৬৯ সালে টিকাটুলি এলাকার কে. এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠিত হয়। ৮ বিঘা জমির উপর পুরানো জমিদার বাড়ি, বিশাল পুকুর ও বাগান শোভিত এ স্টুডিওর অন্যতম উদ্যোক্তা এবং প্রতিষ্ঠাতা বজলুর রহমান ১৯৭২ সালে এককভাবে মালিকানা গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে এ স্টুডিওর মালিকানা আরও কয়েকবার বদল হয়। এ স্টুডিওতে প্রধানত শুটিং, ডাবিং এবং সীমিত পর্যায়ে সম্পাদনার কাজ হয়ে থাকে। ঢাকার দ্বিতীয় বেসরকারি বারী স্টুডিও  কাওরান বাজার ও ফার্মগেট এলাকার পূর্ব তেজতুরী বাজারে অবস্থিত। এর প্রতিষ্ঠাতা এম.এ বারী। তিনি মগবাজার এলাকায় ষাটের দশকের প্রারম্ভে ইস্টার্ন থিয়েটার নামে একটি স্টুডিও স্থাপন করেন। ১৯৬৮-এর দিকে সরকারি নির্দেশে এ স্টুডিও বন্ধ হয়ে গেলে এর মালিক ১৯৭০ সালে বারী স্টুডিও স্থাপন করেন বর্তমান এলাকায়। এখানে শুটিং, ডাবিং এবং সম্পাদনার সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তৃতীয় বেসরকারি চলচ্চিত্র স্টুডিও পপুলার স্টুডিও লিমিটেড ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লার পাগলা এলাকায় অবস্থিত। দেশের তিনজন বিশিষ্ট অগ্রগামী চলচ্চিত্র-কর্মী  আবদুল জববার খান, এ আউয়াল ও মোশাররফ হোসেন চৌধুরী ১৯৬৫ সালে এ স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন। ১৬ বিঘা জমির উপর বিরাট পুকুর, বাড়ি, বাগান, গাছ-গাছালি নিয়ে এ স্টুডিও অবস্থিত। এখানে শুটিং, এডিটিং এবং সাদাকালো ছবির প্রসেসিং সুবিধা রয়েছে।  [অনুপম হায়াৎ]