ব্রংকাইটিস

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৩৪, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

ব্রংকাইটিস (Bronchitis)  শ্বাসনালির মিউকাস আবরণীর প্রদাহ। এটি তীব্র অথবা দীর্ঘস্থায়ী দুধরনেরই হতে পারে। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে জমাটভাব, মাঝে মাঝে বুকে ব্যথা এবং শিশুদের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে শ্বাস নেওয়ার সময় শোঁ শোঁ শব্দ ইত্যাদি ব্রংকাইটিসের প্রধান উপসর্গ। রোগটি মূলত ভাইরাসজনিত, কিন্তু অন্যান্য সংক্রামক রোগের সাথে একত্রে এটি সৃষ্টি হতে পারে। এই রোগের ক্ষেত্রে অসুস্থতা সাধারণত স্বল্প সময়ের জন্য হয় এবং এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে দ্রুত সাড়া দেয়। বাংলাদেশে শীতকালে শিশুদের তীব্র ব্রংকাইটিসের আক্রমণ একটি সাধারণ ঘটনা। অনেক সময় ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম, টাইফয়েড অথবা জলবসন্তের পরে এ রোগ দেখা দেয়। ঘনবসিত, উচ্চ আর্দ্রতা, অধিক ঠান্ডা এবং অত্যধিক বায়ু দূষণযুক্ত এলাকায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কমপক্ষে তিন মাস পরপর দুবছর অনবরত কাশিতে ভোগে। এই রোগটি সাধারণত অল্প সময়ের, তবে দীর্ঘস্থায়ী রোগ হিসেবেও এটি দেখা দিতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র ব্রংকাইটিসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ধূমপান। এছাড়া বায়ুদূষণ, ধুলাবালি এবং অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যা এই রোগের কারণ হিসেবে বিবেচিত। শ্বাসনালী থেকে সৃষ্ট কাশির সাথে বের হওয়া কফ বা থুথু প্রাথমিক অবস্থায় অপর্যাপ্ত ও আঠালো। কখনও কখনও কফের সঙ্গে রক্ত মেশানো থাকতে পারে।

দীর্ঘস্থায়ী ব্রংকাইটিস ফুসফুসীয় নানা বৈকল্যের উদ্ভব ঘটাতে পারে। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী ব্রংকাইটিস অধিক দেখা যায়। গ্রামের লোকেদের বিড়ি  ও হুক্কা খাওয়া এই রোগের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত। তীব্র ব্রংকাইটিস মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে প্রায় দ্বিগুণ দেখা যায়। চল্লিশ বছর এবং এর ঊর্ধ্ব বয়সী লোকের ক্ষেত্রে এই রোগ বেশি হয়।

ব্রংকাইটিস দেহকে বিকল করে দেওয়ার মতো একটি রোগ এবং কখনও কখনও এ রোগে হূৎপিন্ড ও শ্বাসযন্ত্র অকেজো হয়ে পড়ে। ঠান্ডা আবহাওয়া ব্রংকাইটিসকে বাড়িয়ে তোলে। এ কারণে পৃথিবীর শীতপ্রধান দেশগুলির তুলনায় বাংলাদেশে এই রোগের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে কম। তীব্র ব্রংকাইটিসের চিকিৎসায় সকল ধরনের ধূমপান বন্ধ এবং ঠান্ডা আবহাওয়া, ধুলাবালি ও ধোঁয়ার সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। ক্লিনিক্যাল চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে এন্টিবায়োটিকের যথাযথ এবং সময় উপযোগী প্রয়োগ। এই রোগে শ্বাসকষ্টের ধরনের ওপর ভিত্তি করে কখনও কখনও অক্সিজেন গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে।

বাংলাদেশে ব্রংকাইটিসের বর্ধিষ্ণু পরিস্থিতি প্রতিরোধ করার জন্য সব ধরনের ধূমপানের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। তীব্র ব্রংকাইটিসের চিকিৎসা-ব্যবস্থা দীর্ঘদিন গ্রহণ করা না হলে ক্লোমনালি সংশ্লিষ্ট মিউকাসগ্রন্থি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং অতিরিক্ত মিউকাস নিঃসরণ শুরু হয়।

ব্রংকাইটিস একটি প্রতিরোধযোগ্য ব্যাধি। এই রোগ প্রতিরোধের প্রধান উপায় সব ধরনের ধূমপান বর্জন করা এবং যানবাহন ও অন্যান্য কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।  [মো. সিরাজুল ইসলাম এবং মীর মেসবাহউদ্দীন]