সিরাজদিখাঁন উপজেলা

সিরাজদিখাঁন উপজেলা (মুন্সিগঞ্জ জেলা)  আয়তন ১৮০.১৯ বর্গ কিমি। অবস্থান ২৩°৩০´ থেকে ২৩°৪০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°১৫´ থেকে ৯০°২৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কেরানীগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে লৌহজং ও শ্রীনগর উপজেলা, পূর্বে টঙ্গিবাড়ি ও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা, পশ্চিমে শ্রীনগর ও নবাবগঞ্জ উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৪১৮০৪; পুরুষ ১২১৪৬২, মহিলা ১২০৩৪২। মুসলিম ২০৬০৮৬, হিন্দু ৩৩৯৩০, বৌদ্ধ ১৭৫৮, খ্রিস্টান ২১ এবং অন্যান্য ৯।

জলাশয় প্রধান নদী: ইছামতি, ধলেশ্বরী। আড়িয়াল বিল ও তুলসিখালী খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন সিরাজদিখাঁন থানা গঠিত হয় ১৯১৪ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৪ ১২৪ ১৭৭ ৩১১৮ ২৩৮৬৮৬ ১৩৪১ ৪৪.৩ ৪৭.৭
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
০.৯৫ ৩১১৮ ৩২৮২ ৪৪.৩
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ইছাপুর ৩৩ ২৪১১ ১০৩৯৩ ১০১০৬ ৫১.৩৭
কেয়াইন ৪৭ ৪৩০৩ ৯৯০৯ ১০০৯৬ ৫২.৭৮
কোলা ৫৪ ১৭৫৭ ৪১২২ ৪০৯০ ৪৮.৯২
চিত্রকোট ২৭ ৩৮৪৫ ৬৮৭৪ ৭২৪৫ ৫১.২৫
জৈনসার ৪০ ৩২০৫ ৮৬২৯ ৮০৩১ ৫৫.০০
বয়রাগাদি ২০ ২৪০১ ৫৬২৬ ৫৫৯৬ ৪৬.৮৯
বালুর চর ০৬ ৫৩৬৩ ১৫৪৮৬ ১৪৯১৪ ৩৭.৪১
বাসাইল ১৩ ৪১৬০ ৯৮৭৮ ১০১৫৫ ৪৭.৭০
মধ্যপাড়া ৬৭ ২০৫৫ ৬৮২৫ ৬৮৬২ ৪৭.৭৯
মালখানগর ৭৪ ১৩১৯ ৭৮২২ ৭৩০৫ ৫০.২১
রাশুনিয়া ৮৮ ৩১৪৩ ৮৭৯২ ৮৬৮৬ ৪৬.৯৪
রাজানগর ৮১ ৩৩১১ ৯৩৯৪ ৯৪৬৩ ৫০.১২
লতব্দি ৬১ ৩৮১০ ৯৩৩৭ ৯২২৬ ৪০.৫৯
শেখরনগর  ৯৪ ২৭২৯ ৮৩৭৫ ৮৫৬৭ ৪৬.৯৭

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কুসুমপুরে মুগল আমলের এক গম্বুজ মসজিদ (তালুকদার বাড়ি মসজিদ), তাজপুর মসজিদ, পাথরঘাটা মসজিদ, কাজীশাল মসজিদ, পুলঘাটার সেতু, ফেগনাসার গ্রামের প্রাচীন মঠ, তাজপুর গ্রামের কানকাটা দে বাড়ির মঠ, তালতলায় পঞ্চশিখর মহাদেব মন্দির (এই মন্দিরে একটি বৃহদাকার শিবলিঙ্গ রয়েছে)।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি  একসময় এই উপজেলায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন খুব জোরদার ছিল। ইছাপুর ও মধ্যপাড়া গ্রামে কংগ্রেস কর্মীরা বোমা তৈরি করে আশেপাশের এলাকার কর্মীদের তা সরবরাহ করত। মধ্যপাড়া গ্রামে বোমা তৈরির সময় হঠাৎ একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমনের জন্য ইছাপুর বাজারের পশ্চিমে তিন রাস্তার মোড়ে ব্রিটিশ গোর্খা সৈন্যের ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকসেনাদের দেখে ‘জয় বাংলা’ শে­াগান দেওয়ার অপরাধে শিয়ালদী গ্রামের আবদুল আজিজকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আবদুল আজিজ এই উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ। ২৭ মার্চ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা থানা ও পাকবাহিনীর ক্যাম্প থেকে অস্ত্র হস্তগত করে। ১৯ মে পাকবাহিনী থানা ও ক্যাম্প পুনরায় দখল করে নেয়। ২০ মে পাকবাহিনী উপজেলার কয়েকজন শিক্ষককে হত্যা করে। ১৯ নভেম্বর থানায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর লড়াইয়ে ১ জন রাজাকার ও ১ জন পাকসেনা নিহত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্মৃতিস্তম্ভ ১: শহীদ আবদুল আজিজ স্মৃতিস্তম্ভ (শিয়ালদী)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  কুসুমপুর মসজিদ, তাজপুর মসজিদ, পাথরঘাটা মসজিদ, বিশ্ব জামে মসজিদ (রাজানগর ইউনিয়ন), পাঁচপীরের দরগাহ (সিরাজদিখাঁন), শেখরনগর কালীমন্দির, শুলপুর গির্জা, মালিঘাটা স্নানতীর্থ উলে­খযোগ্য।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৭.৭%; পুরুষ ৫০.৩%, মহিলা ৪৫.১%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৭, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৬, মাদ্রাসা ১০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রায় বাহাদুর শ্রীনাথ ইনস্টিটিউশন (১৯১৮), মালখানগর উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৯), ইছাপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯২), রাজদিয়া অভয় পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), রাশুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪২), খাসমহল বালুচর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৭), ছাতিয়ানতলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৫), বাসাইল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৬), আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭০), শেখ মোঃ মিয়া হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭২), শেখরনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭২), শুলপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭৩), মালপদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭৩), ইসলামপুর সিনিয়র মাদ্রাসা।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী মাসিক: বিক্রমপুর (কাঁঠালতলী); অবলুপ্ত: মাসিক পল­ীবিজ্ঞান (জৈনসার), Hindu Intelligencer (মালখানগর), মুক্তি (মালখানগর)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ১৪০, জাদুঘর ১, নাট্যদল ১, সিনেমা হল ১, মহিলা সংগঠন ১। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান: মুনসুর খান পাঠাগার (ইছাপুর), যাদুঘর (কুসুমপুর)।

দশর্নীয় স্থান  মালখানগর ইউনিয়নের বাগান, সিরাজদিখাঁনের শুলপুর গ্রামের গির্জা এবং শেখরনগর কালীবাড়ী উলে­খযোগ্য।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪০.৯১%, অকৃষি শ্রমিক ২.৩৭%, শিল্প ২.২৬%, ব্যবসা ১৮.০৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.১১%, চাকরি ৯.০৮%, নির্মাণ ৩.০৯%, ধর্মীয় সেবা ০.১৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১০.৬৯% এবং অন্যান্য ১০.২২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৪.৬২%, ভূমিহীন ৫৫.৩৮%। শহরে ২১.৭৯% এবং গ্রামে ৪৪.৯৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল আলু, ধান, পাট, তিল।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  আখ, কলাই, মসুর, খেসারি, মটর, তিসি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কলা, কাঁঠাল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৬৭, হাঁস-মুরগি ৬৪, দুগ্ধ খামার ৫২, হ্যাচারি ৩।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৪৮.৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৬৫ কিমি; নৌপথ ১৯ নটিক্যাল মাইল।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, ওয়েল্ডিং কারখানা, হিমাগার।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, পাটশিল্প, দারুশিল্প, পাটিশিল্প, কাঁসা ও পিতল শিল্প, বিড়ি কারখানা, বাঁশ ও বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২০, মেলা ১১। তালতলা হাট, সিরাজদিখাঁন হাট, রাজানগর হাট, ইছাপুর হাট এবং শেখরনগর কালীপুজার মেলা, শেখরনগর মাঝিপাড়া চৈত্র সংক্রান্তির মেলা, সুজানগর দত্তবাড়ি মেলা, তালতলা দশমী মেলা, কাউয়ামারা রথযাত্রা মেলা, কুসুমপুর বৈশাখী মেলা, ইছাপুর ও কাঁঠালতলীর বই মেলা উলে­খযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  আলু, পাট।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৩.৪৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৮০%, ট্যাপ ০.৩১%, পুকুর ০.৯৩% এবং অন্যান্য ২.৯৬%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৮.৬২% (শহরে ৩৬.৬১% এবং গ্রামে ৩৮.৬৫%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৪.৩০% (শহরে ৫৭.৬৪% এবং গ্রামে ৫৪.২৫%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৭.০৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৬, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১১, পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ১, ক্লিনিক ৩, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৬৮ সালের মার্চ মাসে মধ্যপাড়া ইউনিয়নের কাঁঠালতলী গ্রাম থেকে মালপদিয়া গ্রাম পর্যন্ত কয়েকটি গ্রামে টনের্ডোর আঘাতে সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও কারিতাস, আশা, ওয়ার্ল্ড ভিশন, প্রশিকা, ব্র্যাক।  [শামসুল হক হাওলাদার]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; সিরাজদিখাঁন উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।