প্লাঙ্কটনিক ফোরামিনিফেরা

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৮:৩৪, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

প্লাঙ্কটনিক ফোরামিনিফেরা (Planktonic Foraminifera)  বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন এককোষী প্রাণী; ফোরামিনিফেরা ক্রমের, সার্কোডিনা (Sercodina) শ্রেণীর ও প্রটোজোয়া পর্বের ভাসমান রূপ। উন্মুক্ত উষ্ণ সমুদ্রের উপরিভাগ ও উপরিভাগের কাছাকাছি এদের প্রচুর সংখ্যায় দেখা যায় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুই হাজার মিটারেরও কম গভীরে এদের বাস। এদের সঞ্চরণকারী অঙ্গ নেই এবং সমুদ্র স্রোতের মাধ্যমে সঞ্চরণশীল থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে এগুলো সমুদ্রে হাজার হাজার কিলোমিটার ভেসে যায় এবং সাধারণত উৎপত্তি স্থল থেকে বহু দূরে মৃত্যুবরণ করে। মাত্র কয়েক প্রজাতির প্লাঙ্কটনিক ফোরামিনিফেরা থাকলেও সমুদ্রে প্রতিটি প্রজাতির অসংখ্য প্রতিনিধি রয়েছে। গ্লোবিজেরিনার দেহাবশেষ সামুদ্রিক অবক্ষেপের একটা বড় অংশ এবং তা সমুদ্র তলদেশের প্রায় ৩৫ শতাংশ জুড়ে রয়েছে এবং কিছু কিছু এলাকায় সমুদ্রতলস্থ অবক্ষেপের প্রাণিজ উপাদানের ৮০ শতাংশ মৃত গ্লোবিজেরিনের দেহাবশেষ। এমনকি ৩০০০-৫০০০ মিটার গভীরেও এদের উপস্থিতির প্রমাণ রয়েছে। প্লাঙ্কটনিক ফোরামিনিফেরার ৫টি সাধারণ প্রজাতি গ্লোবোরোটালিডি (Globorotaliidae) পরিবারভুক্ত। এগুলো হচ্ছে গ্লোবিজেরিনা (Globigerina), গ্লোবিজেরিনয়েডস (Globigerinoides), গ্লোবিজেরিনেল্লা অরবুলিনা ও গ্লোবোরোটালিয়া।

ব্যাপক বণ্টন ও সহজ শনাক্তকরণ চরিত্রের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত স্তরীয় পাল্লার কারণে আঞ্চলিক ও আন্তঃআঞ্চলিক পাললিক স্তরের পারম্পর্যের জন্য প্লাঙ্কটনিক ফোরামিনিফেরাকে উত্তম নির্দেশক জীবাশ্ম বলে মনে করা হয়। কিছু সংখ্যক গবেষক ক্রিটেসিয়াস থেকে হলোসিন যুগের প্লাঙ্কটনিক ফোরামিনিফেরার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন জৈবিক অঞ্চলের (bio zone) প্রস্তাব করেছেন।

প্লাঙ্কটনিক ফোরামিনিফেরার অবস্থান প্রধানত গ্রীষ্মমন্ডলীয় ও উপগ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে। কিন্তু তাদের জীবাশ্ম বহুদূরে উন্মুক্ত সমুদ্রের প্রায় সব ধরনের পরিবেশের অবক্ষেপে পাওয়া যায় বিধায় প্লাঙ্কটনিক ফোরামিনিফেরা ভুল ব্যাখ্যার সৃষ্টি করতে পারে।

বাংলাদেশে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বগুড়া সোপান অঞ্চলের অন্তর্ভেদে এবং সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার উদ্ভেদে অবস্থিত ইয়োসিন চুনাপাথর স্তরসমষ্টিতে প্ল্যাঙ্কটনিক ফোরামিনিফেরা (বিশেষ করে নুমুলাইট) পরিদৃষ্ট হয়। নুমুলাইট সিলেট চুনাপাথর স্তরসমষ্টি দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় মহীখাতীয় অংশে দেখা যায় না। পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা চালানো গেলে বাংলাদেশের ভূবন শিলাস্তর থেকে প্লাঙ্কটনিক ফোরামিনিফেরা হয়ত পৃথকীকরণ সম্ভব।

বাংলাদেশে প্লাঙ্কটনিক ফোরামিনিফেরা নিয়ে ‘Planktonic Foraminifera from Two Gravity Cores of the Northeastern Bay of Bengal’ এবং ‘Planktonic Foraminifera from Core Samples of the Continental Slope of the Bay of Bengal’ শিরোনামে সর্বশেষ দুটি সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। [মুজিবুর রহমান খান]