স্টেটস্ম্যান, দি

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১০:৪৮, ২৪ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

স্টেটস্ম্যান, দি  কলকাতার শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র। ১৮৭৫ সালে এক আনা দামের দৈনিক পত্রিকা হিসেবে এর প্রকাশনা শুরু হয়। প্রারম্ভে এটা ইউরোপীয়দের ও পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালি অভিজাতদের প্রয়োজন মিটানোর উদ্দেশ্যে নিবেদিত ছিল। এ দৈনিক পত্রিকার অফিস স্থাপন করা হয়েছিল ৩নং চৌরঙ্গী রোডে এবং পত্রিকাটি সকল প্রধান ঘাট, রেলওয়ে স্টেশন ও নগরীর প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্টে নিয়মিতভাবে বিক্রয় করা হতো।

স্টেটস্ম্যান-এর বিশাল সাফল্যের কারণ ছিল প্রধানত রবার্ট নাইট থেকে শুরু করে রয় এমারসন পর্যন্ত সুদক্ষ সম্পাদকবৃন্দের সমাবেশ, যাঁরা এর অফিসকে অলঙ্কৃত করেছিলেন এবং এদের সাথে ছিলেন সম্পাদকীয় দফতরের অভিজ্ঞ কর্মচারীবৃন্দ। বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপনসমূহও এর কলামসমূহের শোভা বর্ধন করত। এতে পত্রিকার ভাল আয় হতো। ফলে পত্রিকাটি দ্রুত সাফল্য লাভ করে। পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়সমূহ শুধু তথ্যবহুল ও তীক্ষ্ণই ছিল না, বরং সেগুলি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বিস্তৃত ছিল। এরপরও পত্রিকায় থাকত বিভিন্ন ধরনের খবর, যা পাঠকবৃন্দকে পত্রিকাটি পড়তে আগ্রহী করে তুলত। এ খবরগুলির মধ্যে ১৮৯১ সালের বিবাহের বয়স নির্ধারণী বিলের (Age of Consent Bill, 1891) বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, ১৯৪৩ সালের সরকারের দুর্ভিক্ষ নীতি, কলকাতায় ইঞ্জিন-চালিত ট্রাম,  ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে মধ্যপন্থী ও চরমপন্থীদের কর্মসূচি, কলকাতার রাস্তাসমূহ পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে সিস্টার  নিবেদিতার ধ্যান-ধারণা, ডাইনিতন্ত্র, প্রথাটিকে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করার পরও কুলীন বহুবিবাহ,  ভারত ছাড় আন্দোলনমুসলিম লীগ গঠন, ১৯০৫ ও ১৯৪৭ সালে দুবার  বঙ্গভঙ্গ, পাকিস্তানের সৃষ্টি ও ভারতের স্বাধীনতা, মানিকতলার বোমা তৈরির কেসে শ্রী অরবিন্দকে জড়ান, কেশবচন্দ্র সেনের মৃত্যুর পর  ব্রাহ্ম সমাজে মতবিরোধ, কলকাতা ও তার আশপাশে বিধবাদের পুনর্বিবাহ, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীকে আদালতে অভিযুক্ত করা, গান্ধীজির হত্যা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

বিদেশী খবরের মধ্যে পত্রিকাটি বলকানে রাশিয়ার উচ্চাভিলাষের বিষয় এবং যে উপাদানসমূহ প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভের জন্য দায়ী ছিল সেগুলি নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা করেছে। সাধারণ ঘরে জন্ম নেওয়া ও তালাকপ্রাপ্ত মিসেস সিমসনকে বিবাহ করার সিদ্ধান্তের পর সপ্তম এডওয়ার্ডের ইংল্যান্ডের সিংহাসনের দাবি পরিত্যাগ করার ব্যাপারটিও পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে উপস্থাপন করা হয়েছে পত্রিকাতে।

পত্রিকাতে যে সকল ছবি ছাপা হয়েছে সেগুলি ছিল ভারত ও বহির্বিশ্বের সমকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের বাস্তব প্রতিকৃতি। কৌতূহলোদ্দীপক বিষয়াবলি, যেমন গান্ধীর অহিংসা কর্মসূচির ব্যাপারে  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মোহমুক্তি, দক্ষিণ আফ্রিকার ভারতীয়দের ব্যাপারে গান্ধীর উদ্বেগ এবং  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা নীতিকেও এ পত্রিকার কলামে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এটি আজ ভারতের এক নম্বর দৈনিক পত্রিকা। [অভিজিৎ দত্ত]