চট্টোপাধ্যায়, সুনীতিকুমার

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৯:৩৬, ১২ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়

চট্টোপাধ্যায়, সুনীতিকুমার (১৮৯০-১৯৭৭)  শিক্ষাবিদ, ভাষাবিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক। ১৮৯০ সালের ২৬ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার শিবপুরে তাঁর জন্ম। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন এবং সকল পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। তিনি মতিলাল শীল ফ্রি স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৯০৭), স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে এফএ (১৯০৯),  প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ (১৯১১) এবং  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ (১৯১৩) ডিগ্রি লাভ করেন। পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য তিনি বিভিন্ন বৃত্তি ও পুরস্কার লাভ করেন; সেসবের মধ্যে  প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি ও জুবিলি গবেষণা পুরস্কার (১৯১৯) উল্লেখযোগ্য।

সুনীতিকুমার এমএ পাস করার পর ওই বছরই বিদ্যাসাগর কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৯১৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষার অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। ১৯১৯ সালে তিনি ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে লন্ডন যান এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফোনেটিক্সে ডিপ্লোমা ও ডিলিট (১৯২১) ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘Origin and Development of Bengali Language’। লন্ডনে তিনি ধ্বনিতত্ত্ব, ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাতত্ত্ব এবং  প্রাকৃত, ফারসি, প্রাচীন আইরিশ, গোথিক ইত্যাদি ভাষা শেখেন। এখান থেকে তিনি প্যারিস যান এবং সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় আর্যভাষাতত্ত্ব, স্লাভ ও ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাতত্ত্ব, গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষা ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করেন। ১৯২২ সালে দেশে ফিরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় ভাষাতত্ত্বের খয়রা অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ত্রিশ বছর কর্মরত থাকার পর তিনি ইমেরিটাস প্রফেসর পদে পুনর্নিয়োগ লাভ করেন এবং ১৯৬৩ সালে ভারতের জাতীয় অধ্যাপক হন।

সুনীতিকুমার বরীন্দ্রনাথের সঙ্গে মালয়, সুমাত্রা, জাভা, বালি ও শ্যামদেশ ভ্রমণ করেন এবং এসব স্থানে ভারতীয় শিল্পসংস্কৃতি সম্পর্কে বক্তৃতা করেন। তিনি লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অফ ফোনেটিক্স সায়েন্সের দ্বিতীয় অধিবেশনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন। এছাড়াও তিনি এশিয়া, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ভাষাতাত্ত্বিক সম্মেলনে যোগদান করেন এবং দেশবিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে বক্তৃতা দেন। করাচিতে সর্বভারতীয় হিন্দি সাহিত্য সম্মেলনে জাতীয় ভাষা বিষয়ে তিনি সভাপতিত্ব করেন।

সুনীতিকুমার ১৯৩৬ সালে কলকাতার রয়েল এশিয়াটিক সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি হল্যান্ডের সোসাইটি অফ আর্টস-এর সদস্য (১৯৫০) এবং অসলোর নরওয়েজিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সের অনারারি সদস্য (১৯৫৫) ছিলেন। ১৯৫২-৬৮ পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার অধ্যক্ষ ছিলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি সোভিয়েত একাডেমি অফ সায়েন্স কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে স্লাভ জাতির ওপর ভাষণ দেন এবং ১৯৬০ সালে মস্কোয় প্রাচ্যবিদ্যা সম্মেলনে যোগ দেন। তিনি সাহিত্য একাডেমির সভাপতি (১৯৬৯) এবং ইউনেস্কোর ভাষাবিষয়ক সংবাদদাতা (১৯৭১) ছিলেন।

সুনীতিকুমার ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ৩৮০টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর বিখ্যাত রচনা হলো অরিজিন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অব দি বেঙ্গলি ল্যাংগুয়েজ, দি (ওডিবিএল, ১৯২৬)। এটি প্রকাশিত হওয়ার পরপরই তাঁর খ্যাতি দেশবিদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং রবীন্দ্রনাথ তাঁকে ‘ভাষাচার্য’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো: Bengali Phonetic Reader (১৯২৮), বাংলা ভাষাতত্ত্বের ভূমিকা (১৯২৯), পশ্চিমের যাত্রী (১৯৩৮), ভারতের ভাষা ও ভাষা সমস্যা (১৯৪৪), সরল ভাষা প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ (১৯৪৫), ভারত সংস্কৃতি (১৯৫৭), সংস্কৃতি কী (১৯৬১), Languages and Literatures of Modern India (১৯৬৩), World Literature and Tagore (১৯৭১), রবীন্দ্রসঙ্গমে, ইউরোপ ভ্রমণ, দ্বীপময় ভারত ও শ্যামদেশ ইত্যাদি। ভাষাতত্ত্ব এবং সাহিত্য-সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য তাঁকে এলাহাবাদ হিন্দু সাহিত্য সম্মেলন ‘সাহিত্য বাচস্পতি’ (১৯৪৮) এবং ভারত সরকার ‘পদ্মবিভূষণ’ (১৯৬৩) উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৭ সালের ২৯ মে কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।  [বদিউজ্জামান]