হাকিম, খানবাহাদুর আবদুল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''হাকিম, খানবাহাদুর আবদুল''' (১৯০৫-১৯৮৫)  শিক্ষাবিদ, পন্ডিত ও লেখক। ১৯০৫ সালের ২ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার হাজীনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৌলবি ওয়াসিমউদ্দীন আহমদ এবং মাতার নাম নাসিমুন্নেসা।
'''হাকিম, খানবাহাদুর আবদুল''' (১৯০৫-১৯৮৫)  শিক্ষাবিদ, পন্ডিত ও লেখক। ১৯০৫ সালের ২ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার হাজীনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৌলবি ওয়াসিমউদ্দীন আহমদ এবং মাতার নাম নাসিমুন্নেসা।


[[Image:HakimKhanBahadurAbdul.jpg|thumb|400px|আবদুল হাকিম]]
আবদুল হাকিম ছাত্রজীবনে একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি ১৯২২ সালের ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় দ্বিতীয় এবং ১৯২৪ সালের আই.এস.সি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি যথাক্রমে ১৯২৭ ও ১৯২৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেমকে গণিত শাস্ত্রে বি.এ (অনার্স) ও এম.এ পাস করেন এবং উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। অনার্স পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে কালীনারায়ণ স্কলারশিপ প্রদান করে। তিনি ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৩০ সালে গণিত শাস্ত্রে ‘ট্রাইপস’সহ অনার্স এবং ১৯৩১ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন।
আবদুল হাকিম ছাত্রজীবনে একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি ১৯২২ সালের ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় দ্বিতীয় এবং ১৯২৪ সালের আই.এস.সি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি যথাক্রমে ১৯২৭ ও ১৯২৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেমকে গণিত শাস্ত্রে বি.এ (অনার্স) ও এম.এ পাস করেন এবং উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। অনার্স পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে কালীনারায়ণ স্কলারশিপ প্রদান করে। তিনি ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৩০ সালে গণিত শাস্ত্রে ‘ট্রাইপস’সহ অনার্স এবং ১৯৩১ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন।


স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে ১৯৩১ সালে স্বল্প সময়ের জন্য আবদুল হাকিম টাঙ্গাইল জেলার করটিয়া সাদত কলেজ এবং কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৩২ সালে তিনি বাংলা সরকারের শিক্ষাবিভাগে মহকুমা স্কুল পরিদর্শক রূপে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি ১৯৩৮ সালে ‘বেঙ্গল রুর‌্যাল প্রাইমারি এডুকেশন অ্যাক্ট, ১৯৩০’ বাস্তবায়নের জন্য একজন স্পেশাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। এ পদে তিনি ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত নিয়োজিত ছিলেন। উক্ত পদে নিয়োজিত থাকাকালে তিনি পূর্ববঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে অনবদ্য অবদান রাখেন। ওই সময় তিনি বাংলার শিক্ষক নামক একটি শিক্ষা-বিষয়ক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য ১৯৩৯ সালে সরকার তাঁকে ‘খান সাহেব’ উপাধি প্রদান করে।
স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে ১৯৩১ সালে স্বল্প সময়ের জন্য আবদুল হাকিম টাঙ্গাইল জেলার করটিয়া সাদত কলেজ এবং কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৩২ সালে তিনি বাংলা সরকারের শিক্ষাবিভাগে মহকুমা স্কুল পরিদর্শক রূপে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি ১৯৩৮ সালে ‘বেঙ্গল রুর‌্যাল প্রাইমারি এডুকেশন অ্যাক্ট, ১৯৩০’ বাস্তবায়নের জন্য একজন স্পেশাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। এ পদে তিনি ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত নিয়োজিত ছিলেন। উক্ত পদে নিয়োজিত থাকাকালে তিনি পূর্ববঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে অনবদ্য অবদান রাখেন। ওই সময় তিনি বাংলার শিক্ষক নামক একটি শিক্ষা-বিষয়ক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য ১৯৩৯ সালে সরকার তাঁকে ‘খান সাহেব’ উপাধি প্রদান করে।
[[Image:HakimKhanBahadurAbdul.jpg|thumb|400px|আবদুল হাকিম]]


১৯৪৩ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত খান সাহেব আবদুল হাকিম ঢাকা ও প্রেসিডেন্সি বিভাগ দুটির বিভাগীয় স্কুল পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৪ সালে সরকার তাঁকে ‘খান বাহাদুর’ উপাধি দেয়।
১৯৪৩ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত খান সাহেব আবদুল হাকিম ঢাকা ও প্রেসিডেন্সি বিভাগ দুটির বিভাগীয় স্কুল পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৪ সালে সরকার তাঁকে ‘খান বাহাদুর’ উপাধি দেয়।

০৫:৪৫, ২৯ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

হাকিম, খানবাহাদুর আবদুল (১৯০৫-১৯৮৫)  শিক্ষাবিদ, পন্ডিত ও লেখক। ১৯০৫ সালের ২ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার হাজীনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৌলবি ওয়াসিমউদ্দীন আহমদ এবং মাতার নাম নাসিমুন্নেসা।

আবদুল হাকিম

আবদুল হাকিম ছাত্রজীবনে একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি ১৯২২ সালের ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় দ্বিতীয় এবং ১৯২৪ সালের আই.এস.সি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি যথাক্রমে ১৯২৭ ও ১৯২৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেমকে গণিত শাস্ত্রে বি.এ (অনার্স) ও এম.এ পাস করেন এবং উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। অনার্স পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে কালীনারায়ণ স্কলারশিপ প্রদান করে। তিনি ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৩০ সালে গণিত শাস্ত্রে ‘ট্রাইপস’সহ অনার্স এবং ১৯৩১ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন।

স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে ১৯৩১ সালে স্বল্প সময়ের জন্য আবদুল হাকিম টাঙ্গাইল জেলার করটিয়া সাদত কলেজ এবং কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৩২ সালে তিনি বাংলা সরকারের শিক্ষাবিভাগে মহকুমা স্কুল পরিদর্শক রূপে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি ১৯৩৮ সালে ‘বেঙ্গল রুর‌্যাল প্রাইমারি এডুকেশন অ্যাক্ট, ১৯৩০’ বাস্তবায়নের জন্য একজন স্পেশাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। এ পদে তিনি ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত নিয়োজিত ছিলেন। উক্ত পদে নিয়োজিত থাকাকালে তিনি পূর্ববঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে অনবদ্য অবদান রাখেন। ওই সময় তিনি বাংলার শিক্ষক নামক একটি শিক্ষা-বিষয়ক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য ১৯৩৯ সালে সরকার তাঁকে ‘খান সাহেব’ উপাধি প্রদান করে।

১৯৪৩ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত খান সাহেব আবদুল হাকিম ঢাকা ও প্রেসিডেন্সি বিভাগ দুটির বিভাগীয় স্কুল পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৪ সালে সরকার তাঁকে ‘খান বাহাদুর’ উপাধি দেয়।

১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত আবদুল হাকিম পূর্ব পাকিস্তান সরকারের শিক্ষা বিভাগের সহকারী জনশিক্ষা পরিচালক পদে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৫৬ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত তিনি জনশিক্ষা পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৫৬ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষাসংস্কার কমিশনের সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আবদুল হাকিম বাংলার জনশিক্ষা সম্পর্কিত অনেকগুলি গ্রন্থ রচনা করেন। ‘ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্রাঙ্কলিন বুকস প্রোগ্রামের’ আওতায় ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ সালের মধ্যে প্রকাশিত বাংলা বিশ্বকোষের ৪টি সংস্করণেরই তিনি প্রধান সম্পাদক ছিলেন (১৯৬১-১৯৭৬)।

খানবাহাদুর আবদুল হাকিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেটের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তিনি  বাংলা একাডেমীর জীবন সদস্য, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির একজন ফেলো এবং ১৯৮২ সালে এর সভাপতি ছিলেন। ১৯৮৪ সালে তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিতে এক লাখ টাকার একটি ট্রাস্ট ফান্ড স্থাপন করেন। বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৪ সালে তাঁকে ‘একুশে পদক’ প্রদান করে। খানবাহাদুর আবদুল হাকিমের ১৯৮৫ সালের ১৪ জুন তারিখে ৮০ বছর বয়সে মৃত্যু হয়।  [মুহম্মদ আবদুস সালাম]