সাঘাটা উপজেলা

সাঘাটা উপজেলা (গাইবান্ধা জেলা)  আয়তন: ২৫৫.৬৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°০২´ থেকে ২৫°১৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২৯´ থেকে ৮৯°৪০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে গাইবান্ধা সদর উপজেলা, দক্ষিণে সোনাতলা ও সারিয়াকান্দি উপজেলা, পূর্বে ফুলছড়ি ও ইসলামপুর উপজেলা, পশ্চিমে গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ী উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৫০২৬৯; পুরুষ ১২৬৬১০, মহিলা ১২৩৬৫৯। মুসলিম ২৩২৫৮৮, হিন্দু ১৭৩৪৭, বৌদ্ধ ১২, খ্রিস্টান ৩৫ এবং অন্যান্য ২৮৭।

জলাশয় যমুনা, বাঙ্গালী ও কালাপানি নদী এবং তেলিয়ান বিল ও বাদিয়া খাল উলে­খযোগ্য।

প্রশাসন সাঘাটা থানা গঠিত হয় ১৯০৫ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১০ ১১৭ ১৩৫ ১৫৫৪৯ ২৩৪৭২০ ১১০৯ ৪৬.৮ ৩৩.৫
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.৩৮ ১৫৫৪৯ ২৪৩৭ ৪৬.৮৪
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কচুয়া ৫৭ ৫২১৯ ১৩১০২ ১২৭৯৯ ৩২.৭৭
কামালেরপাড়া ৬৬ ৬১৮৫ ১৬৯৫৫ ১৫৮৩২ ৩০.৮৩
ঘুড়িদহ ২৮ ৫১৪৮ ১২৫৫১ ১২১৭০ ৩১.৯২
জুমারবাড়ী ৪৭ ৪৪৭৬ ১৩০৫৩ ১২৯৩৪ ৩১.০৫
পাদুম শহর ৭৬ ৪৩১৮ ১২৪৯৮ ১২৫২৫ ৩৫.২৭
বোনারপাড়া ১৯ ৫৬৬১ ১৬০৭২ ১৫৩৮১ ৪১.৭২
ভরতখালী ০৯ ৩৫২১ ১০৭৬০ ১০৭৩১ ৪২.৬২
মুক্তানগর ৯৫ ৩৬৪৬ ১০৪২১ ১০৫২৪ ৩৬.৪৫
সাঘাটা ৮৫ ৬০১৯ ১০৫০৫ ১০৩৩৭ ৩৪.৭৪
হলদিয়া ৩৮ ১১৫৬৬ ১০৬৯৩ ১০৪২৬ ২৪.৬০

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ভরতখালী কালীবাড়ি মন্দির (অষ্টাদশ শতক), ভরতখালী জমিদারের কাচারী।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি মুক্তিযুদ্ধের সময় এ উপজেলা সীমান্তের ভাঙ্গা মোড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে এক সংঘর্ষে ১ জন পাক মেজর ও ১ জন পাকসেনা নিহত হয়। ত্রিমোহনী ঘাটের যুদ্ধে ২৭ জন পাকসেনা নিহত ও ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধারা ১৭ জন রাজাকারকে হত্যা করে। পাকসেনারা বাদিয়াখালী সড়ক সেতু, সিংড়া রেলসেতু ধ্বংস করে এবং ভরতখালী পাটগুদামে অগ্নি সংযোগ করে।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ ১ (মুক্তানগর হাইস্কুল মাঠ)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৩৪৫, মন্দির ২২।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৪.৩%; পুরুষ ৪০.৩%, মহিলা ২৮.২%। কলেজ ৬, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪২, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪, মাদ্রাসা ১৬। উলে­খযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: আব্দুল­াহ মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জুমার বাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৩), সাঘাটা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৪), কাজী আজহার আলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), ভরতখালী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪০)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: পান্থশালা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান শিল্পকলা একাডেমি ১, সংগীত একাডেমি ১, লাইব্রেরি ১, নাট্যদল ২, সিনেমা হল ৪, ক্লাব ৩০, খেলার মাঠ ২১, মহিলা সমিতি ১৫।

দর্শনীয় স্থান ভরতখালী কালী মন্দির।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৭.৬৩%, অকৃষি শ্রমিক ১.৯৭%, শিল্প ১.১১%, ব্যবসা ১১.২০%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৫৭%, চাকরি ৬.৪৪%, নির্মাণ ০.৯০%, ধর্মীয় সেবা ০.১৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩০% এবং    অন্যান্য ৬.৬৯%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৮.৯৯%, ভূমিহীন ৪১.০১%। শহরে ৪৩.৬৮% এবং গ্রামে ৫৯.৯৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, আলু, গম, পিঁয়াজ, রসুন, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  আখ, আউশ ধান, কাউন, চীনা, মিষ্টি আলু, তিল, তিসি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, পেয়ারা।

মৎস্য, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার  মৎস্য ৪৩, গবাদিপশু ২৩, হাঁস-মুরগি ৬২।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৫০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৯৭ কিমি; রেলপথ ১৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা সুতাকল, বরফকল, স’মিল, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, হস্তশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৯, মেলা ৫। সাঘাটা, বোনারপাড়া, ভরতখালী, কচুয়া ও জুমারবাড়ী হাট এবং ভরতখালী কালীবাড়ি মেলা উলে­খযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  পাট, পিঁয়াজ, রসুন, কলা, পেঁপে।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৮.২৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯২.৪১%, ট্যাপ ০.১৮%, পুকুর ০.১২% এবং অন্যান্য ৭.২৯%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ১০.৩৮% (শহরে ৩১.৭৬% এবং গ্রামে ৮.৯৯%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪১.০২% (শহরে ৪২.৬০% এবং গ্রামে ৪০.৯২%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৪৮.৬০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে­ক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১০, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২।

এনজিও ব্র্যাক, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ।  [মো. হামিদুল হক চন্দন]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; সাঘাটা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।