যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৪:০৯, ৮ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক গণগ্রন্থাগার। ১৮৫৪ সালে শহরের প্রাণকেন্দ্রে ৩ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। বেসরকারি উদ্যোগে যশোরের তৎকালীন জেলা কালেক্টর আর.সি রেকস এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি এই লাইব্রেরির ভবন নির্মাণ এবং পুস্তক সংগ্রহের কাজে সেকালের বিত্তবান শ্রেণির কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য সংগ্রহ করেছিলেন। কয়েকজন সুহূদ নীলকর সাহেব এবং নলডাঙ্গা ও নড়াইলের জমিদার এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠায় রেকসকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। সে সময়ে এই প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল যশোর পাবলিক লাইব্রেরি। ১৮৫৪ সালেই লাইব্রেরির নিজস্ব ভবন নির্মিত হয়।

শুরুর দিকে লাইব্রেরিতে লেখাপড়ার পাশাপাশি চলত অবসর বিনোদন ও আড্ডা। এর এক পাশে ছিল পুস্তক সংগ্রহ, অন্য পাশে বিলিয়ার্ড টেবিল। পরবর্তীকালে এর কলেবর আরও বৃদ্ধি পায়। লাইব্রেরিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে একাধিক প্রতিষ্ঠান। ১৯০৯ সালে স্থাপিত হয় টাউন হল, ১৯১৯ সালে টাউন ক্লাব ও নিউ আর্য থিয়েটার এবং ১৯২১ সালে নিউ আর্য থিয়েটারের জন্য নির্মিত হয় বি. সরকার মেমোরিয়াল হল। ১৯২৭ সালে যশোর জেলার লোহাগড়ার কৃতী সন্তান স্যার যদুনাথ মজুমদার যশোর পাবলিক লাইব্রেরি, নিউ আর্য থিয়েটার এবং টাউন ক্লাব মিলে একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। এভাবেই ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় যশোর ইনস্টিটিউট। এরপর এক সরকারি আদেশবলে লাইব্রেরিটি যশোর ইনস্টিটিউটের অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়। সেই থেকে এই প্রতিষ্ঠানের নামকরণ হয়েছে যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি। ঐ সালেই লোহাগড়ার সন্তান আইনজীবী অবিনাশচন্দ্র সরকার লাইব্রেরির জন্য একটি নতুন ভবন নির্মাণ করে দেন। পিতার স্মৃতি রক্ষার্থে তিনি এই ভবনের নামকরণ করেন ‘বিশ্বনাথ লাইব্রেরি হল’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ সালের মে মাসে সামরিক প্রয়োজনে রাজকীয় বিমান বাহিনী যশোর ইনস্টিটিউটের সমস্ত ভবন হুকুমদখল করে নেয়। ফলে যশোর পাবলিক লাইব্রেরি গৃহহীন হয়ে পড়ে। যুদ্ধশেষে লাইব্রেরি ও তার শরিক সংগঠনগুলি ফিরে আসে পুরাতন অস্তিত্বে।

১৯৯৮ সালের হিসাব অনুযায়ী এই লাইব্রেরিতে বই-এর সংখ্যা সর্বমোট ৬৭,১৯৭; এর মধ্যে ৪৯,৩০৬ বাংলা, ১৭,৩৯১ ইংরেজি, ৩০০ আরবি, ফারসি ও উর্দু এবং ২০০ হাতে লেখা পান্ডুলিপি রয়েছে। হাজার বছরের পুরানো তুলট কাগজ ও তালপাতায় হাতে লেখা কতিপয় পান্ডুলিপি ও প্রতিলিপি রয়েছে।

১৯৯৮ সালের হিসাব অনুযায়ী যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সদস্য ১,৬০৬ জন; এর মধ্যে ৫০ জন দাতা ও ১৬৭ জন জীবন সদস্য। বেতনভুক্ত কর্মচারী রয়েছে ২৫ জন। বর্তমানে লাইব্রেরির নিজস্ব সম্পদের মধ্যে রয়েছে ত্রিতলবিশিষ্ট আঞ্চলিক বই ব্যাংক, দ্বিতলবিশিষ্ট বই ইস্যু বিভাগ এবং শহরে ৫১টি দোকানঘরবিশিষ্ট ‘ইনস্টিটিউট’ ও ‘উন্মেষ’ নামে দুটি আধুনিক মার্কেট। এ পর্যন্ত লাইব্রেরিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি সিনেমা হল, ১টি ঘূর্ণায়মান মঞ্চ, নাট্যকলা সংসদ, লাইব্রেরির শিশু-কিশোর বিভাগ (সিআরসি), উন্মুক্ত মঞ্চ, টাউন ক্লাব, ১টি পুকুর এবং ১টি ময়দান (মুন্সি মেহেরুল্লাহ ময়দান)। বর্তমানে যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরির পরিচালনাধীন একটি ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি চালু আছে। [বেনজীন খান]