ভৈরব উপজেলা

ভৈরব উপজেলা (কিশোরগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ১৩৯.৩২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°০২´ থেকে ২৪°১১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৪´ থেকে ৯১°০২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বাজিতপুর উপজেলা, দক্ষিণে রায়পুরা ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদর উপজেলা, পূর্বে সরাইল উপজেলা, পশ্চিমে কুলিয়ারচর ও বেলাবো উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৪৭১৬৬; পুরুষ ১২৫৬২১, মহিলা ১২১৫৪৫। মুসলিম ২৩৫৮৪৭, হিন্দু ১১২৪৬ এবং অন্যান্য ৭৩।

জলাশয় প্রধান নদ-নদী: পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা।

প্রশাসন ভৈরব থানা গঠিত হয় ১৯০৬ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে। পৌরসভা গঠিত হয় ১৯৫৮ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৩২ ৮৪ ৯৩২৫৪ ১৫৩৯১২ ১৭৭৪ ৫৩.৬ ৩২.৩
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৫.৭২ ১২ ২৬ ৯৩২৫৪ ৫৯৩২ ৫৩.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আগানগর ২১ ৬৩৩১ ১৩৯৬৪ ১৩৩৪২ ২৩.৫৪
কালিকাপ্রসাদ ৪৭ ৩২৪১ ১৩৪৩৫ ১৩৪৭১ ৩২.২৩
গজারিয়া ৩৫ ৪৭৩৭ ১১৪১১ ১১৭১৭ ৩২.৮৫
শিবপুর ৭১ ১৬৬৯ ১০৪০০ ১০৬৯১ ৩৫.০৬
শিমুলকান্দি ৮৩ ২৮৬৬ ১২৯৭৩ ১২৫৯৪ ৩৭.১৪
শ্রীনগর ২৭৪৩ ৬৬২৪ ৬৮৭৯ ৩৩.০০
সাদেকপুর ৫৯ ৩১৬০ ৮০৫০ ৮৩৬১ ৩৩.৭৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ নীলকুঠি (শিমুলকান্দি), ইমামবাড়ি (শিমুলকান্দি), গজারিয়া গ্রামের জগবন্ধুর অট্টালিকা, তিতুমিয়ার অট্টালিকা, ভৈরব বাজারে কারুকার্য খচিত রবীন সাহার অট্টালিকা।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ১৫ এপ্রিল ভৈরবের বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনী  হামলা চালিয়ে ৪০০ নিরীহ লোককে হত্যা করে। শুধুমাত্র ইব্রাহিমপুরে তারা ২৫০ জনকে হত্যা করে। এছাড়া মানিকদী মসজিদে ও আশুগঞ্জে বহু লোককে হত্যা করে। ১৩ ডিসেম্বর পাকসেনারা ভৈরব রেলসেতুটি বিধ্বস্ত করে।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্মৃতি ভাস্কর্য ১ (দুর্জয় ভৈরব, ভৈরব বাসস্ট্যান্ড); স্মৃতিসৌধ ১ (হালগড়া খেয়াঘাট, পানাউল্লার চর)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ২০৮, মন্দির ৭, মাযার ১৩, আখড়া ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: সিদ্দিকচর জামে মসজিদ, তিয়ারীর চর জামে মসজিদ, আগানগর জামে মসজিদ, শিমুলকান্দি জামে মসজিদ, শম্ভুপুর জামে মসজিদ, মানিকদী জামে মসজিদ, কালিকা প্রসাদ মুন্সীবাড়ি জামে মসজিদ, কালীবাড়ির মাতৃমন্দির, গোপাল জিওর মন্দির, কালিকা প্রসাদের অষ্টমী স্নানের ঘাট।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪০.৭%; পুরুষ ৪৪.৮%, মহিলা ৩৬.৬%। কলেজ ৫, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ২, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১, সমাজকল্যাণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৫, কিন্ডার গার্টেন ১২, মাদ্রাসা ৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: হাজী আসমত কলেজ (১৯৪৭), ভৈরব টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ (১৯৮০), রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজ (১৯৮৭), কে বি হাইস্কুল (১৯১৯), বাংলাদেশ রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৪), শ্রীনগর হাইস্কুল (১৯৬১), ভৈরব এম পি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬২), কালিকা প্রসাদ হাইস্কুল (১৯৬৪), জগন্নাথপুর পুরাতন প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯৫)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: একুশে কাগজ; সাপ্তাহিক: নিরপেক্ষ অরুণিমা, দিনের গান, উজান স্রোত; অবলুপ্ত সাপ্তাহিক: দিশারী, গ্রাম বাংলা, মফস্বলচিত্র; পাক্ষিক: ভৈরব।

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য মৈত্রী সেতু, ভৈরব রেলসেতু, মেঘনা নদীর তীরের বোটানিক্যাল গার্ডেন।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১৪, নাট্যদল ৪, নাট্যমঞ্চ ১, সিনেমা হল ৩, মহিলা সংগঠন ৩।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩০.০৮%, অকৃষি শ্রমিক ১০.১৭%, শিল্প ১.৫১%, ব্যবসা ২৩.৫৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৮৭%, চাকরি ৮.৮৬%, নির্মাণ ১.৬৯%, ধর্মীয় সেবা ০.২০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.১৪% এবং অন্যান্য ১৭.৯৪%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৩.৩৪%, ভূমিহীন ৫৬.৬৬%। শহরে ২৬.৪১% এবং গ্রামে ৫৩.৪০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, চীনাবাদাম, সরিষা, আলু, ডাল, তিল, মরিচ, ধনিয়া, আদা, হলুদ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কার্পাস তুলা।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, পেয়ারা, কলা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৭, গবাদিপশু ১৭৫, হাঁস-মুরগি ১৮২, হ্যাচারি ১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১২৭.২২ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৬.১০ কিমি, কাঁচারাস্তা ১২৫.২১ কিমি; নৌপথ ৬.৪৮ নটিক্যাল মাইল; রেলপথ ১২.২৭ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি।

শিল্প ও কলকারখানা জুটমিল, রাইসমিল, চিড়ামিল, স্টিল মিল, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, সাবান ফ্যাক্টরি, বিড়ি ফ্যাক্টরি, রিরোলিং ইন্ডাস্ট্রিজ, সিলিকেট ইন্ডাস্ট্রিজ, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বুননশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৪০, মেলা ৩। ভৈরব বাজার, শিমুলকান্দি বাজার, গজারিয়া বাজার, চকবাজার, সিদ্দিক বাজার উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য মাছ, বিড়ি, বিস্কুট, লুঙ্গি, গামছা।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫১.৩১% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.৭১%, পুকুর ০.১১%, ট্যাপ ২.০১% এবং অন্যান্য ৪.১৭%। এ উপজেলার ২৯.৯৫% অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৯.৭৪% (গ্রামে ২৪.৬২% ও শহরে ৬৫.১৬%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৫.৫১% (গ্রামে ৫৫.৩৮% ও শহরে ২৮.৯০%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৪.৭৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৫, রেলওয়ে হাসপাতাল ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, কমিউনিটি ক্লিনিক ৭, ক্লিনিক ৬।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৭৪, ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালের বন্যায় এ উপজেলার ঘরবাড়ি, ফসল, গবাদিপশু ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং বহু লোকের প্রাণহানি ঘটে।

এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা, গ্লোবাল ভিলেজ, নীড, আরডিএ।  [শরীফ আহমেদ]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ভৈরব উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।