পরিভাষা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''পরিভাষা''' বিশেষ অর্থ প্রকাশকারী শব্দ বা শব্দরাশি। যে শব্দদ্বারা সংক্ষেপে কোনো বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে ব্যক্ত করা যায় তাই পরিভাষা; বা অনেক অর্থবিশিষ্ট শব্দও যদি প্রসঙ্গ-বিশেষে নির্দিষ্ট অর্থে প্রযুক্ত হয়, তবে তাও পরিভাষারূপে গণ্য হয়। তবে সাধারণত পরিভাষা বললে এমন শব্দ বা শব্দাবলিকে বোঝায় যার অর্থ পন্ডিতদের সম্মতিতে স্থিরীকৃত হয় এবং যা দর্শন-বিজ্ঞানাদির আলোচনায় প্রয়োগ করলে অর্থবোধে সংশয় ঘটে না। বিশেষ অর্থজ্ঞাপক শব্দ বা সংজ্ঞা সম্বন্ধীয় এই যৌগিক বিশেষ্য পদটি গঠিত হয়েছে ‘ভাষা’ বিশেষ্য পদের সঙ্গে ‘পরি’ উপসর্গ যোগে। ‘পরি’ উপসর্গের অর্থ সর্বতোভাবে, লক্ষণ, বীপ্সা, চিহ্ন, বিশেষায়ন, আতিশয্য ইত্যাদি।
'''পরিভাষা''' বিশেষ অর্থ প্রকাশকারী শব্দ বা শব্দরাশি। যে শব্দদ্বারা সংক্ষেপে কোনো বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে ব্যক্ত করা যায় তাই পরিভাষা; বা অনেক অর্থবিশিষ্ট শব্দও যদি প্রসঙ্গ-বিশেষে নির্দিষ্ট অর্থে প্রযুক্ত হয়, তবে তাও পরিভাষারূপে গণ্য হয়। তবে সাধারণত পরিভাষা বললে এমন শব্দ বা শব্দাবলিকে বোঝায় যার অর্থ পন্ডিতদের সম্মতিতে স্থিরীকৃত হয় এবং যা দর্শন-বিজ্ঞানাদির আলোচনায় প্রয়োগ করলে অর্থবোধে সংশয় ঘটে না। বিশেষ অর্থজ্ঞাপক শব্দ বা সংজ্ঞা সম্বন্ধীয় এই যৌগিক বিশেষ্য পদটি গঠিত হয়েছে ‘ভাষা’ বিশেষ্য পদের সঙ্গে ‘পরি’ উপসর্গ যোগে। ‘পরি’ উপসর্গের অর্থ সর্বতোভাবে, লক্ষণ, বীপ্সা, চিহ্ন, বিশেষায়ন, আতিশয্য ইত্যাদি।


পরিভাষা সুদৃঢ় ও সুনির্দিষ্ট শব্দ; এর অর্থের সংকোচন বা প্রসারণ নেই। আলঙ্কারিক ভাষায় পরিভাষার অভিধা শক্তি আছে, কিন্তু ব্যঞ্জনা বা লক্ষণা শক্তি নেই। অর্থাৎ, অর্থের পরিবর্তন ঘটে না এমন বিশেষ অর্থবোধক সংজ্ঞার নামই পরিভাষা।
পরিভাষা সুদৃঢ় ও সুনির্দিষ্ট শব্দ; এর অর্থের সংকোচন বা প্রসারণ নেই। আলঙ্কারিক ভাষায় পরিভাষার অভিধা শক্তি আছে, কিন্তু ব্যঞ্জনা বা লক্ষণা শক্তি নেই। অর্থাৎ, অর্থের পরিবর্তন ঘটে না এমন বিশেষ অর্থবোধক সংজ্ঞার নামই পরিভাষা।
৮ নং লাইন: ৮ নং লাইন:
মূলের সঙ্গে technical term-এর যেকোনো প্রকারের সম্বন্ধ থাকা প্রত্যাশিত হলেও তা অপরিহার্য নয়। তাই পরিভাষা কথাটার ‘অভিধা’ যাই হোক, ‘লক্ষণা’ ও ‘ব্যঞ্জনা’-য় এটি বহুবিস্তৃত অর্থবোধক কথা। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহূত না হলে কোনো পারিভাষিক শব্দই স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করে না। অধুনা ভাষাবিজ্ঞানীরা পরিভাষা ও শব্দের মধ্যে বিরাজমান সূক্ষ্ম পার্থক্যকে এভাবে প্রকটিত করেন: পরিভাষা (terminology) হচ্ছে কোনো জ্ঞানক্ষেত্রের বৈশিষ্ট্যজ্ঞাপক ধারণার সংজ্ঞার নাম; আর শব্দ হচ্ছে (vocabulary) যেকোনো ভাষার রূপমূলীয় উপাদানের সমাহার। এসব বিবেচনায় পরিভাষা-পরিকল্পনার জন্য সমন্বয় (co-ordination) ও সম্মতির (agreement) প্রয়োজন আছে।
মূলের সঙ্গে technical term-এর যেকোনো প্রকারের সম্বন্ধ থাকা প্রত্যাশিত হলেও তা অপরিহার্য নয়। তাই পরিভাষা কথাটার ‘অভিধা’ যাই হোক, ‘লক্ষণা’ ও ‘ব্যঞ্জনা’-য় এটি বহুবিস্তৃত অর্থবোধক কথা। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহূত না হলে কোনো পারিভাষিক শব্দই স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করে না। অধুনা ভাষাবিজ্ঞানীরা পরিভাষা ও শব্দের মধ্যে বিরাজমান সূক্ষ্ম পার্থক্যকে এভাবে প্রকটিত করেন: পরিভাষা (terminology) হচ্ছে কোনো জ্ঞানক্ষেত্রের বৈশিষ্ট্যজ্ঞাপক ধারণার সংজ্ঞার নাম; আর শব্দ হচ্ছে (vocabulary) যেকোনো ভাষার রূপমূলীয় উপাদানের সমাহার। এসব বিবেচনায় পরিভাষা-পরিকল্পনার জন্য সমন্বয় (co-ordination) ও সম্মতির (agreement) প্রয়োজন আছে।


প্রত্যেক উন্নয়নশীল ভাষার ক্ষেত্রেই পরিভাষা নির্মাণ তথা নতুন শব্দসৃষ্টির (neologisation) বিষয়টিকে ভাষিক সৃজনশীলতার অন্যতম অভিব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়; কেননা প্রত্যেক ভাষারই নিজস্ব শব্দভান্ডারের মধ্যে স্বাধীনভাবে উদ্ভাবন ও নবপ্রবর্তন (innovate) করার ক্ষমতা রয়েছে।
প্রত্যেক উন্নয়নশীল ভাষার ক্ষেত্রেই পরিভাষা নির্মাণ তথা নতুন শব্দসৃষ্টির (neologisation) বিষয়টিকে ভাষিক সৃজনশীলতার অন্যতম অভিব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়; কেননা প্রত্যেক ভাষারই নিজস্ব শব্দভান্ডারের মধ্যে স্বাধীনভাবে উদ্ভাবন ও নবপ্রবর্তন (innovate) করার ক্ষমতা রয়েছে। [মহাম্মদ দানীউল হক]


[মহাম্মদ দানীউল হক]


[[en:Paribhasa]]
[[en:Paribhasa]]
[[en:Paribhasa]]


[[en:Paribhasa]]
[[en:Paribhasa]]

১০:৩৮, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

পরিভাষা বিশেষ অর্থ প্রকাশকারী শব্দ বা শব্দরাশি। যে শব্দদ্বারা সংক্ষেপে কোনো বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে ব্যক্ত করা যায় তাই পরিভাষা; বা অনেক অর্থবিশিষ্ট শব্দও যদি প্রসঙ্গ-বিশেষে নির্দিষ্ট অর্থে প্রযুক্ত হয়, তবে তাও পরিভাষারূপে গণ্য হয়। তবে সাধারণত পরিভাষা বললে এমন শব্দ বা শব্দাবলিকে বোঝায় যার অর্থ পন্ডিতদের সম্মতিতে স্থিরীকৃত হয় এবং যা দর্শন-বিজ্ঞানাদির আলোচনায় প্রয়োগ করলে অর্থবোধে সংশয় ঘটে না। বিশেষ অর্থজ্ঞাপক শব্দ বা সংজ্ঞা সম্বন্ধীয় এই যৌগিক বিশেষ্য পদটি গঠিত হয়েছে ‘ভাষা’ বিশেষ্য পদের সঙ্গে ‘পরি’ উপসর্গ যোগে। ‘পরি’ উপসর্গের অর্থ সর্বতোভাবে, লক্ষণ, বীপ্সা, চিহ্ন, বিশেষায়ন, আতিশয্য ইত্যাদি।

পরিভাষা সুদৃঢ় ও সুনির্দিষ্ট শব্দ; এর অর্থের সংকোচন বা প্রসারণ নেই। আলঙ্কারিক ভাষায় পরিভাষার অভিধা শক্তি আছে, কিন্তু ব্যঞ্জনা বা লক্ষণা শক্তি নেই। অর্থাৎ, অর্থের পরিবর্তন ঘটে না এমন বিশেষ অর্থবোধক সংজ্ঞার নামই পরিভাষা।

পরিভাষা শব্দটি মূলত ইংরেজি definition শব্দের বাংলা অনুবাদ। বহু পূর্বে  সংস্কৃত ভাষায় শব্দটি সংজ্ঞাবাচক বিশেষ অর্থে প্রচলিত ছিল। বাচস্পত্য অভিধানে পরিভাষা শব্দের অর্থ ‘শাস্ত্রকারের সংজ্ঞা বিশেষ’। সব শাস্ত্রেরই পারিভাষিক শব্দ আছে এবং এই পারিভাষিক শব্দের প্রত্যেকটিই অনেকগুলি কথা বা ভাব একত্রে বোঝায়; সেই সঙ্গে ভাষায় শব্দের পারিভাষিকত্ব লাভ করতে দীর্ঘ দিনের ব্যবহারও আবশ্যক হয়।

মূলের সঙ্গে technical term-এর যেকোনো প্রকারের সম্বন্ধ থাকা প্রত্যাশিত হলেও তা অপরিহার্য নয়। তাই পরিভাষা কথাটার ‘অভিধা’ যাই হোক, ‘লক্ষণা’ ও ‘ব্যঞ্জনা’-য় এটি বহুবিস্তৃত অর্থবোধক কথা। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহূত না হলে কোনো পারিভাষিক শব্দই স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করে না। অধুনা ভাষাবিজ্ঞানীরা পরিভাষা ও শব্দের মধ্যে বিরাজমান সূক্ষ্ম পার্থক্যকে এভাবে প্রকটিত করেন: পরিভাষা (terminology) হচ্ছে কোনো জ্ঞানক্ষেত্রের বৈশিষ্ট্যজ্ঞাপক ধারণার সংজ্ঞার নাম; আর শব্দ হচ্ছে (vocabulary) যেকোনো ভাষার রূপমূলীয় উপাদানের সমাহার। এসব বিবেচনায় পরিভাষা-পরিকল্পনার জন্য সমন্বয় (co-ordination) ও সম্মতির (agreement) প্রয়োজন আছে।

প্রত্যেক উন্নয়নশীল ভাষার ক্ষেত্রেই পরিভাষা নির্মাণ তথা নতুন শব্দসৃষ্টির (neologisation) বিষয়টিকে ভাষিক সৃজনশীলতার অন্যতম অভিব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়; কেননা প্রত্যেক ভাষারই নিজস্ব শব্দভান্ডারের মধ্যে স্বাধীনভাবে উদ্ভাবন ও নবপ্রবর্তন (innovate) করার ক্ষমতা রয়েছে। [মহাম্মদ দানীউল হক]