দত্ত, কামিনীকুমার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''দত্ত'''''', ''''''কামিনীকুমার '''(১৮৭৮-১৯৫৯)  আইনজীবী, রাজনীতিবিদ। কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলাধীন শ্রীকাইল গ্রামের অধিবাসী। তিনি ১৮৭৮ সালের ২৫ জুন তারিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কৃষ্ণকুমার দত্ত চট্টগ্রাম সরকারি কলেজিয়েট হাইস্কুলের প্রধান পন্ডিত ছিলেন। কামিনীকুমার দত্ত ১৮৯৪ সালে চট্টগ্রাম সরকারি হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৮৯৮ সালে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.এল ডিগ্রি লাভের পর ১৯০১ সালে তিনি কুমিল্লা জেলা বারে আইন ব্যবসা শুরু করেন। মুন্সেফ পদে স্বল্পকালীন সরকারি চাকরি করার পর তিনি পুনরায় কুমিল্লা শহরে আইন ব্যবসায়ে যোগদান করেন। ১৯১৮ সালে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে অ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
'''দত্ত, কামিনীকুমার''' (১৮৭৮-১৯৫৯)  আইনজীবী, রাজনীতিবিদ। কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলাধীন শ্রীকাইল গ্রামের অধিবাসী। তিনি ১৮৭৮ সালের ২৫ জুন তারিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কৃষ্ণকুমার দত্ত চট্টগ্রাম সরকারি কলেজিয়েট হাইস্কুলের প্রধান পন্ডিত ছিলেন। কামিনীকুমার দত্ত ১৮৯৪ সালে চট্টগ্রাম সরকারি হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৮৯৮ সালে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.এল ডিগ্রি লাভের পর ১৯০১ সালে তিনি কুমিল্লা জেলা বারে আইন ব্যবসা শুরু করেন। মুন্সেফ পদে স্বল্পকালীন সরকারি চাকরি করার পর তিনি পুনরায় কুমিল্লা শহরে আইন ব্যবসায়ে যোগদান করেন। ১৯১৮ সালে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে অ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।


কামিনীকুমার দত্ত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন বামপন্থি রাজনীতিক ছিলেন। তিনি [[১০৬২১৫|স্বদেশী আন্দোলন]], [[১০০০৮৬|অসহযোগ আন্দোলন]] ও [[১০০১০১|আইন অমান্য আন্দোলন]] এ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ব্রিটিশ বিরোধী রাজনৈতিক কার্যকলাপ ও আন্দোলনের জন্য তিনি পুলিশ বাহিনীর হয়রানীর শিকার হন ও কয়েকবার কারাবরণ করেন।  
কামিনীকুমার দত্ত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন বামপন্থি রাজনীতিক ছিলেন। তিনি [[স্বদেশী আন্দোলন|স্বদেশী আন্দোলন]], [[অসহযোগ আন্দোলন|অসহযোগ আন্দোলন]] ও [[আইন অমান্য আন্দোলন|আইন অমান্য আন্দোলন]] এ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ব্রিটিশ বিরোধী রাজনৈতিক কার্যকলাপ ও আন্দোলনের জন্য তিনি পুলিশ বাহিনীর হয়রানীর শিকার হন ও কয়েকবার কারাবরণ করেন।  


১৯৩৭ সালে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি কংগ্রেস সংসদীয় দলের উপনেতা ছিলেন। ১৯৩৮ সালের মে মাসে তিনি কুমিল্লা শহরে সর্বভারতীয় কৃষক সম্মেলন আহবান করেন এবং সম্মেলনের অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ঐ বছর তিনি একই শহরে নিখিল বঙ্গ ও আসাম আইনজীবী সমিতির সম্মেলন আহবান করেন। তিনি ১৯৩৯ সালে খুলনা শহরে অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ ও আসাম আইনজীবী সমিতির সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। নোয়াখালী ও ত্রিপুরা জেলার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা নিরসনকল্পে গঠিত ‘Tippera District Relief, Rescue and Rehabilitation Committee’র সভাপতি ছিলেন কামিনীকুমার দত্ত।  
১৯৩৭ সালে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি কংগ্রেস সংসদীয় দলের উপনেতা ছিলেন। ১৯৩৮ সালের মে মাসে তিনি কুমিল্লা শহরে সর্বভারতীয় কৃষক সম্মেলন আহবান করেন এবং সম্মেলনের অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ঐ বছর তিনি একই শহরে নিখিল বঙ্গ ও আসাম আইনজীবী সমিতির সম্মেলন আহবান করেন। তিনি ১৯৩৯ সালে খুলনা শহরে অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ ও আসাম আইনজীবী সমিতির সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। নোয়াখালী ও ত্রিপুরা জেলার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা নিরসনকল্পে গঠিত ‘Tippera District Relief, Rescue and Rehabilitation Committee’র সভাপতি ছিলেন কামিনীকুমার দত্ত।  
৯ নং লাইন: ৯ নং লাইন:


১৯২৩ সালে কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠিত ’অভয় আশ্রম’ ছাড়াও আরও বহু সমাজকল্যাণমূলক সংস্থার কর্মকান্ডের সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি কুমিল্লা জেলা বোর্ডের সদস্য এবং কুমিল্লা মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ছোট ভাই ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত কর্তৃক ১৯৪১ সালে স্থাপিত শ্রীকাইল কলেজ প্রতিষ্ঠায় কামিনীকুমার দত্ত অবদান রাখেন। কামিনীকুমার দত্ত কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়ে অবস্থিত তাঁর বাসভবনটি একটি ছাত্রী হোস্টেলে রূপান্তরিত করে তাঁর স্ত্রী মৃণালিনী দত্তের নামানুসারে হোস্টেলটির নামকরণ করেন ’মৃণালিনী ছাত্রীনিবাস’। তিনি শ্রীকাইল গ্রামের সকল সম্পত্তি শ্রীকাইল স্কুল ও কলেজের নামে দান করে দেন। তিনি ১৯৫৯ সালের ৪ জানুয়ারি তারিখে ৮১ বছর বয়সে কুমিল্লায় মারা যান।  [মুহম্মদ আবদুস সালাম]
১৯২৩ সালে কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠিত ’অভয় আশ্রম’ ছাড়াও আরও বহু সমাজকল্যাণমূলক সংস্থার কর্মকান্ডের সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি কুমিল্লা জেলা বোর্ডের সদস্য এবং কুমিল্লা মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ছোট ভাই ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত কর্তৃক ১৯৪১ সালে স্থাপিত শ্রীকাইল কলেজ প্রতিষ্ঠায় কামিনীকুমার দত্ত অবদান রাখেন। কামিনীকুমার দত্ত কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়ে অবস্থিত তাঁর বাসভবনটি একটি ছাত্রী হোস্টেলে রূপান্তরিত করে তাঁর স্ত্রী মৃণালিনী দত্তের নামানুসারে হোস্টেলটির নামকরণ করেন ’মৃণালিনী ছাত্রীনিবাস’। তিনি শ্রীকাইল গ্রামের সকল সম্পত্তি শ্রীকাইল স্কুল ও কলেজের নামে দান করে দেন। তিনি ১৯৫৯ সালের ৪ জানুয়ারি তারিখে ৮১ বছর বয়সে কুমিল্লায় মারা যান।  [মুহম্মদ আবদুস সালাম]
<!-- imported from file: দত্ত, কামিনীকুমার.html-->


[[en:Datta, Kaminikumar]]
[[en:Datta, Kaminikumar]]

০৪:২১, ৭ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

দত্ত, কামিনীকুমার (১৮৭৮-১৯৫৯)  আইনজীবী, রাজনীতিবিদ। কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলাধীন শ্রীকাইল গ্রামের অধিবাসী। তিনি ১৮৭৮ সালের ২৫ জুন তারিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কৃষ্ণকুমার দত্ত চট্টগ্রাম সরকারি কলেজিয়েট হাইস্কুলের প্রধান পন্ডিত ছিলেন। কামিনীকুমার দত্ত ১৮৯৪ সালে চট্টগ্রাম সরকারি হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৮৯৮ সালে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.এল ডিগ্রি লাভের পর ১৯০১ সালে তিনি কুমিল্লা জেলা বারে আইন ব্যবসা শুরু করেন। মুন্সেফ পদে স্বল্পকালীন সরকারি চাকরি করার পর তিনি পুনরায় কুমিল্লা শহরে আইন ব্যবসায়ে যোগদান করেন। ১৯১৮ সালে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে অ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

কামিনীকুমার দত্ত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন বামপন্থি রাজনীতিক ছিলেন। তিনি স্বদেশী আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলনআইন অমান্য আন্দোলন এ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ব্রিটিশ বিরোধী রাজনৈতিক কার্যকলাপ ও আন্দোলনের জন্য তিনি পুলিশ বাহিনীর হয়রানীর শিকার হন ও কয়েকবার কারাবরণ করেন।

১৯৩৭ সালে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি কংগ্রেস সংসদীয় দলের উপনেতা ছিলেন। ১৯৩৮ সালের মে মাসে তিনি কুমিল্লা শহরে সর্বভারতীয় কৃষক সম্মেলন আহবান করেন এবং সম্মেলনের অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ঐ বছর তিনি একই শহরে নিখিল বঙ্গ ও আসাম আইনজীবী সমিতির সম্মেলন আহবান করেন। তিনি ১৯৩৯ সালে খুলনা শহরে অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ ও আসাম আইনজীবী সমিতির সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। নোয়াখালী ও ত্রিপুরা জেলার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা নিরসনকল্পে গঠিত ‘Tippera District Relief, Rescue and Rehabilitation Committee’র সভাপতি ছিলেন কামিনীকুমার দত্ত।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর কামিনীকুমার দত্ত পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান (১৯৫৬) রচনার জন্য গঠিত মূলনীতি কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৫ সালের আগস্ট থেকে ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি চৌধুরী মুহম্মদ আলীর মন্ত্রিসভায় পাকিস্তান সরকারের কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী ছিলেন। তিনি জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন।

১৯২৩ সালে কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠিত ’অভয় আশ্রম’ ছাড়াও আরও বহু সমাজকল্যাণমূলক সংস্থার কর্মকান্ডের সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি কুমিল্লা জেলা বোর্ডের সদস্য এবং কুমিল্লা মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ছোট ভাই ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত কর্তৃক ১৯৪১ সালে স্থাপিত শ্রীকাইল কলেজ প্রতিষ্ঠায় কামিনীকুমার দত্ত অবদান রাখেন। কামিনীকুমার দত্ত কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়ে অবস্থিত তাঁর বাসভবনটি একটি ছাত্রী হোস্টেলে রূপান্তরিত করে তাঁর স্ত্রী মৃণালিনী দত্তের নামানুসারে হোস্টেলটির নামকরণ করেন ’মৃণালিনী ছাত্রীনিবাস’। তিনি শ্রীকাইল গ্রামের সকল সম্পত্তি শ্রীকাইল স্কুল ও কলেজের নামে দান করে দেন। তিনি ১৯৫৯ সালের ৪ জানুয়ারি তারিখে ৮১ বছর বয়সে কুমিল্লায় মারা যান।  [মুহম্মদ আবদুস সালাম]