চৌধুরী, পার্বতী শংকর রায়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Image:ParbatiSankarRay.jpg|thumb|right|পার্বতী শংকর রায় চৌধুরী]]
[[Image:ChaudhuriParbatiSankarRay.jpg|thumbnail|300px|right|পার্বতী শংকর রায় চৌধুরী]]
'''চৌধুরী, পার্বতী শংকর রায়''' (১৮৫৩-১৯১৮)  [[তেওতা জমিদার পরিবার|তেওতা জমিদার পরিবার]]-এর সদস্য, জনহিতৈষী জমিদার। জয় শংকর চৌধুরীর পুত্র পার্বতী শংকর কলকাতার হিন্দু কলেজ থেকে ডিসটিংশনসহ এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ও বৃত্তি লাভ করেন। এর পরেই তাঁর শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটে এবং তিনি খুব অল্প বয়স থেকেই তেওতার জমিদারীর বৈষয়িক কাজ তত্ত্বাবধানে মনোনিবেশ করেন।
'''চৌধুরী, পার্বতী শংকর রায়''' (১৮৫৩-১৯১৮)  [[তেওতা জমিদার পরিবার|তেওতা জমিদার পরিবার]]-এর সদস্য, জনহিতৈষী জমিদার। জয় শংকর চৌধুরীর পুত্র পার্বতী শংকর কলকাতার হিন্দু কলেজ থেকে ডিসটিংশনসহ এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ও বৃত্তি লাভ করেন। এর পরেই তাঁর শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটে এবং তিনি খুব অল্প বয়স থেকেই তেওতার জমিদারীর বৈষয়িক কাজ তত্ত্বাবধানে মনোনিবেশ করেন।



০৭:২৮, ২৩ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

পার্বতী শংকর রায় চৌধুরী

চৌধুরী, পার্বতী শংকর রায় (১৮৫৩-১৯১৮)  তেওতা জমিদার পরিবার-এর সদস্য, জনহিতৈষী জমিদার। জয় শংকর চৌধুরীর পুত্র পার্বতী শংকর কলকাতার হিন্দু কলেজ থেকে ডিসটিংশনসহ এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ও বৃত্তি লাভ করেন। এর পরেই তাঁর শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটে এবং তিনি খুব অল্প বয়স থেকেই তেওতার জমিদারীর বৈষয়িক কাজ তত্ত্বাবধানে মনোনিবেশ করেন।

পার্বতী শংকর ছিলেন একজন জনহিতৈষী ও প্রগতিশীল জমিদার। তিনি তাঁর অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন ‘ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম এবং ঢাকা ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন এবং ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রভৃতির গুরুত্বপূর্ণ ও সক্রিয় সদস্য।

প্রাথমিক পর্যায়ে বড় ভাই রাজা শ্যামাশংকর রায় এর সহযোগিতায় তিনি ‘ধর্মগোলা’ (সমবায় ভিত্তিক শস্য ব্যাংক) প্রতিষ্ঠা করেন। দুর্ভিক্ষ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সংকট মোকাবিলা করার লক্ষ্যেই তিনি এ উদ্যোগ নেন এবং কৃতকার্য হন। জয়গঞ্জ (তৎকালীন ঠাকুরগাঁও সাবডিভিশন, বর্তমান জেলা) কাচারীর তত্ত্বাবধানে দিনাজপুর জেলায় প্রথম শস্য ব্যাংকের কার্যক্রম চালু হয়। শীঘ্রই ব্যাংকের কার্যক্রম ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং তেওতার জমিদারীর আওতাধীন দিনাজপুর সার্কেলের অন্যান্য অংশেও বেশ কয়েকটি ‘গোলা’ স্থাপিত হয়।  অনুরূপভাবে গোয়ালন্দসহ তেওতা জমিদারীর আওতাভুক্ত অন্যান্য অঞ্চলেও সমবায় শস্য ব্যাংকের শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়।

সমবায় শস্য ব্যাংকের মূলনীতি ছিল যে, ব্যাংকের প্রত্যেক সদস্য তার সদস্য পদের বিপরীতে আট আনা বাৎসরিক সদস্য ফি জমা দেয়ার পাশাপাশি বৎসরে উৎপাদিত শস্যের যথাসম্ভব উদ্ধৃত্ত অংশও ব্যাংকে জমা প্রদান করবে। জমাকৃত এ শস্যই ব্যাংকের সদস্যদের মধ্যে সংকটকালে শস্য দানা বা বীজ হিসেবে নতুবা খাদ্য হিসেবে বিতরন করা হবে।

এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক শস্য গ্রহীতাকে তার শস্য উৎপাদনের পর গৃহীত প্রতি এক মণ শস্যের বিপরীতে দেড় মণ শস্য ব্যাংকে ফেরত দিতে হবে। শস্য জমা রাখার সুবিধার জন্য জয়গঞ্জে একটি দৃষ্টিনন্দন ঢেউ টিনের গুদাম নির্মাণ করে দিয়ে এবং জমিদারীর অন্যান্য অঞ্চলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে তেওতার জমিদার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

এ ছাড়াও পার্বতী শংকর বেশ কয়েকটি ‘গঠনমূলক স্বদেশী’ প্রকল্পর কাজ বাস্তবায়নের জন্য প্রসিদ্ধ হন। দুর্ভিক্ষ মোকাবিলার জন্য গ্রামাঞ্চলেও শস্য ব্যাংক চালু করার জন্য ১৯০২ সালে তিনি ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ‘ডন’ (The Dawn) পত্রিকায় (আগস্ট-সেপ্টেম্বর ১৯০২) তাঁর এ পরিকল্পনার ৫৩টি সুনির্দিষ্ট পয়েন্টের পুরো বিষয়টি প্রকাশ করে। এই ধারণাটি ১৯০৭ সালে পুনরুত্থাপিত হলেও তাতে তেমন সারা পাওয়া যায়নি। কেবলমাত্র তেওতা জমিদারীর অধীনে ‘ধর্মগোলা’ স্থাপনের কার্যক্রমটি ব্যতিক্রম ছিল।

ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিয়াল এসোসিয়েশন-এর প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ছিলেন পার্বতী শংকর রায়। অন্যান্য বিষয়বস্ত্তর সঙ্গে এ এসোসিয়েশনের সদস্যগণ অঞ্চল ভিত্তিক কাঁচামাল নিয়ে গবেষণার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। পার্বতী শংকর তাঁর জমিদারীতে পঁচে যাওয়া উদ্ভিদ থেকে আলকাতরা ও কালি প্রস্ত্তত করার চেষ্টা করেন। ঢাকা জেলা বোর্ডের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে তিনি ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জের শিবালয় পর্যন্ত একটি রেলপথ তৈরির বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং একটি রেলপথের বাস্তবায়নযোগ্যতা, প্রয়োজনীয়তা ও তা তৈরির পক্ষে যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যাখ্যা করে রেল কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে চেষ্টা করেন। তাঁর এ পরিকল্পনায় কৃতকার্য না হলেও মানিকগঞ্জ এর অধিবাসীদের নিকট তিনি যথেষ্ট প্রশংসা অর্জন করেছিলেন। ১৯১৮ সালে পার্বতী শংকর রায় চৌধুরীর মৃত্যু হয়।  [আর রায়]