আবদুল লতীফ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৮:০৪, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

আবদুল লতীফ  মুগল ঐতিহাসিক এবং রাজ কর্মকর্তা। আহমদাবাদের অধিবাসী আবদুল লতীফ সতের শতকে নিজ রাজ্য থেকে প্রথমে আগ্রা আসেন এবং সেখান থেকে বাংলা প্রদেশে আসা পর্যন্ত তাঁর ভ্রমণের বৃত্তান্ত ডায়েরি আকারে লিপিবদ্ধ করেন। মুগল সুবাদার ইসলাম খান, দীওয়ান মুত্তাকিদ খান এবং অন্যান্য রাজকীয় কর্মকর্তাগণের সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে আবদুল লতীফও ১৬০৯ খ্রিস্টাব্দে রাজমহল থেকে নদীপথে ঘোড়াঘাট যান। বাহারিস্তান-ই-গায়েবী গ্রন্থে মির্জা নাথান একজন আবদুল লতীফের নাম উল্লেখ করেছেন, যিনি ছিলেন তাঁর বন্ধু এবং দীউয়ানী দফতরের হিসাবরক্ষক। এই আবদুল লতীফ এবং ডায়েরি লেখক একই ব্যক্তি বলে ঐতিহাসিকদের ধারণা।

স্যার যদুনাথ সরকার প্রথম আবদুল লতীফ এর ডায়েরির পান্ডুলিপির সন্ধান পান এবং তিনি লতীফের ভ্রমণ বৃত্তান্তের রাজমহল থেকে ঘোড়াঘাট পর্যন্ত অংশ ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষার অনুবাদ করেন। অনুবাদের সময় তিনি বৃত্তান্তের অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দেন। স্যার যদুনাথের বর্ণনায় আবদুল লতীফ সম্পর্কে যতদূর জানা যায়, তা হল সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বের শুরুতে শেখ আলাউদ্দিন চিশতী বা ইসলাম খাঁ বাংলার সুবাদার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন।

আবদুল লতীফের ডায়েরি খুবই সংক্ষিপ্ত। কারণ তাঁর প্রভু আবুল হাসান শিহাবখানী মুত্তাকিদ খান ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় দিওয়ান নিযুক্ত হয়ে আগ্রা হতে বাংলায় আসলে তিনি তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন। প্রভুর সঙ্গে তিনি যতটুকু পথ ভ্রমণ করেন, তাই ডায়েরি আকারে লিপিবদ্ধ করেন। ফলে, ঘোড়াঘাটের উদ্দেশ্যেও ইসলাম খান চিশতীর রাজমহল ত্যাগ করার কথা দিয়ে ডায়েরির বর্ণনা শুরু এবং ভাটির উদ্দেশ্যে ইসলাম খানের ঘোড়াঘাটে ত্যাগ করার কথা দিয়ে ডায়েরির বর্ণনা শেষ হয়েছে। কিন্তু এই সংক্ষিপ্ত ডায়েরিটি ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত মূল্যবান দলিল হিসেবে স্বীকৃত। কারণ তাঁর ডায়রির উল্লেখযোগ্য সংযোজন ছিল প্রত্যেকটি যাত্রার তারিখ উল্লেখ করা। ইসলাম খান যে তারিখে রাজমহল ত্যাগ করেন, তাঁর বিভিন্ন স্থানে যাত্রা বিরতির তারিখ এবং ঘোড়াঘাট ত্যাগের তারিখ ইত্যাদি সূত্র পাওয়া যায় এই বর্ণনা থেকে। মুগল ইতিহাসে বাংলা সুবার রাজধানী হিসেবে ঢাকার অভিষেক হয় ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে। ঐতিহাসিকদের মধ্যে এ তারিখটির বিষয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে মতভেদ থাকলেও মির্জা নাথানের বাহারিস্তান-ই-গায়েবী এবং পরে আবদুল লতীফের ভ্রমণ বৃত্তান্তে উল্লেখিত তারিখ এই দ্বন্দ্বের সহজ সমাধান এনে দিয়েছিল। তাই মধ্যযুগের ইতিহাস পুনর্গঠনে এই ভ্রমণ বৃত্তান্ত অত্যন্ত মূল্যবাদ তথ্যসূত্র। তাছাড়াও বাংলার নদীসমূহ বিভিন্ন সময়ে তাদের গতি পরিবর্তন করে নতুন বাঁক নিয়েছে। বর্তমানের মানচিত্রের সঙ্গে না মিললেও আবদুল লতীফের ডায়রিতে রাজমহল থেকে ঘোড়াঘাট পর্যন্ত নদীপথের সম্পূর্ণ বিবরণসহ সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহেরও নাম পাওয়া যায়, যা ভৌগোলিক ইতিহাস পুনর্গঠনে মূল্যবান সূত্র হিসেবে বিবেচিত। বাংলার যে সকল ভূঁইয়া ও জমিদার রাজমহল থেকে ঘোড়াঘাট যাওয়ার পথে সুবাদারের সঙ্গে দেখা করেন এবং উপহার প্রদান করেন তাঁদের নাম ও পরিচয়ও এ ডায়েরিতে পাওয়া যায়।

আবদুল লতীফ দীওয়ান মুত্তাকিদ খানের অধীনে দীওয়ানী বিভাগে কর্মরত ছিলেন। মুত্তাকিদ খান ১৬১২ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বাংলায় কর্মরত ছিলেন এবং এরপরে প্রশাসনের কেন্দ্র থেকে তাঁকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। সে কারণে তাঁর ভ্রমণ বৃত্তান্ত ইসলাম খানের ১৬০৯ খ্রিস্টাব্দের ১৫ অক্টোবর ভাটির উদ্দেশ্যে ঘোড়াঘাট ত্যাগ করার তথ্য উল্লেখ করেই শেষ হয়ে যায়। ধারণা করা হয় যে, তিনি ১৬১২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্তই ডায়রি লিখেছিলেন। যদিও আবদুল লতীফের ভ্রমন বৃত্তান্তের সম্পূর্ণ অংশ এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। [নাসরীন আক্তার]