প্রাকৃতিক দুর্যোগ

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১০:৪৮, ৯ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

প্রাকৃতিক দুর্যোগ  মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উপর প্রতিকূল প্রভাব রয়েছে এমন যে কোন প্রাকৃতিক ঘটনাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অন্যভাবে বলা যায় মানবসৃষ্ট নয় এমন দুর্ঘটনা, যেমন একটি ভূমিকম্প অথবা একটি বন্যা। এইসব প্রাকৃতিক ভাবে সংঘটিত ঘটনাবলী যা শুধুমাত্র মানবসৃষ্ট ভৌত ব্যবস্থাদির উপস্থিতির কারণেই ক্ষতিকর বলে বিবেচতি হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগাবলী সম্পর্কে সম্যক ধারণার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দুর্যোগের দ্বারা মানবসৃষ্ট বিভিন্ন ব্যবস্থাদি, বন্দোবস্তের ধ্বংস যোগ্য ভেদ্যতা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিস্তার এবং প্রভাব পৃথিবীর সব দেশে সমান নয়। উন্নত দেশের তুলনায় পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশসমূহে দুর্যোগসৃষ্ট জীবন ও সম্পদহানির পরিমাণ অনেক বেশি, এর কারণ উন্নয়নশীল দেশে, দুর্যোগ সংঘটনের বৃহত্তর সংখ্যার দিকটি নয় বরং বৃহত্তর ধ্বংসযোগ্য ভেদ্যতা রয়েছে। স্বভাবতই উন্নত দেশসমূহের অধিবাসীদের তুলনায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে উন্নয়নশীল দেশসমূহের অধিবাসীদের ঝুঁকির মাত্রা অধিক। ঝুঁকির বিষয়টি সংযুক্ত করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংজ্ঞা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বলা যায় একটি নির্দিষ্ট এলাকায় নির্দিষ্ট সময় জুড়ে নির্দিষ্ট বিস্তারে প্রাকৃতিক পরিবেশে একটি পরিবর্তনের সম্ভাবনা এবং এর সাথে সংযুক্ত ঝুঁকিটি হলো দুর্যোগ পরবর্তী জীবন, সম্পদ এবং রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের ক্ষয়ক্ষতি অথবা বিনষ্টী। ১৯৬০ সাল থেকে প্রবল দুর্যোগের সংখ্যাগত বৃদ্ধি হলেও প্রতিবৎসর দুর্যোগের ফলে মানুষের মৃত্যুর হার প্রায় ৬% হারে কমে এসেছে, একই সাথে সম্পদ হানির পরিমাণও ক্রমান্বয়ে কমে এসেছে। অবশ্য কার্যকর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং এ সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি সত্ত্বেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা প্রায়শই ঘটছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে যেসব বিষয় ক্রিয়াশীল, তার মধ্যে উন্নততর বিশ্ব সংবাদ প্রচার ব্যবস্থা, বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জনসংখ্যা, দ্রুত শহরায়ন এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতার বৃদ্ধি। প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহকে বর্তমান বিশ্বে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে এবং এর প্রশমনের জন্য বিশ্বব্যাপী ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসও গড়ে উঠেছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহকে তিনটি বৃহৎ বিভাগভুক্ত করা যেতে পারে যেমন বায়ুমন্ডলীয় প্রক্রিয়াসৃষ্ট climatic বাযুমন্ডলীয় দুর্যোগসমূহ (ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী, টর্নেডো, হারিকেন, খরা ইত্যাদি), ভূ-পৃষ্ঠের প্রক্রিয়া সৃষ্ট exogenetic দুর্যোগসমূহ (বন্যা, নদীতীর ভাঙন, উপকূলীয় ভাঙন, ভূমিধ্বস মৃত্তিকা ক্ষয় এবং প্রাকৃতিক ভূগর্ভস্থ পানি দূষণ), এবং পৃথিবীপৃষ্ঠের অভ্যন্তরস্থ প্রক্রিয়াসৃষ্ট endogenetic ভূগর্ভস্থ দুর্যোগসমূহ (ভূমিকম্প এবং অগ্ন্যুৎপাত), অনেক সময় এই ভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহের একটি অন্যটিকে ছাপিয়ে যায়। সাতটি মূল বৈশিষ্ট্য অনুসারে প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহকে চিহ্নিত করা যেতে পারে, যথা, ঘটনার বিস্তার, ঘটনার সংঘটন সংখ্যা, সময়কাল, এরিয়েল ব্যাপ্তি, আরম্ভের গতি, স্থানগত বিকিরণ এবং সময়গত ব্যবধান। বাংলাদেশে বায়ুমন্ডলীয় দুর্যোগ এবং এক্সোজেনিক দুর্যোগের ঝুঁকি অধিক এবং এখানে ভূগর্ভস্থ দুর্যোগের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, নদীতীর ভাঙন, উপকূলীয় ভাঙন, ভূমিধ্বস, প্রাকৃতিক ভূগর্ভস্থ পানি দূষণ প্রভৃতি বাংলাদেশের প্রধান প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ভূগর্ভের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে কেবলমাত্র ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রয়েছে, এখানে অগ্নুৎপাতের সম্ভাবনা নাই। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে মারাত্মক যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি বাংলাদেশ হচ্ছে তা হলো ভূগর্ভস্থ পানির আর্সেনিক দূষণ।

ঝড়  বায়ুমন্ডলের একটি ভয়াবহ দুর্যোগ। তীব্র বাতাস সংঘটিত, প্রায়শই ভারি বৃষ্টিপাত আর বজ্র বিদ্যুৎ, সমুদ্রে ফুসে উঠা উঁচু ঢেউসৃষ্ট উত্তাল একটা অবস্থা, সবমিলে এই হলো ঝড় নামক প্রাকৃতিক দুর্যোগের চিত্র। গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, বজ্র বিদ্যুৎপূর্ণ ঝড়বৃষ্টি, গ্রীষ্মমন্ডলীয় নিম্নচাপ এগুলোই বাংলাদেশে সংঘটিত ঝড়ের সাধারণ ধরনসমূহ।

ঘূর্ণিঝড়  প্রায় প্রতি বৎসরই বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল অঞ্চলসমূহে তীব্র গতির বাতাস সহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে, মাঝে মাঝে এসময়ে বাতাসের গতিবেগ ২৫০ কিমি/ঘণ্টা অথবা তার উপরে পৌঁছায় এবং সমুদ্রে ৩-১০ মিটার উঁচু ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। মানুষের জীবন, সম্পদ ও পশুসম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় মূলত দুইটি মৌসুমে ঘটে থাকে, এপ্রিল-মে এবং অক্টোবর-নভেম্বর। অর্থাৎ বর্ষা মৌসুমের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ে ঘূর্ণিঝড়সমূহ দক্ষিণ চীন সাগরে সৃষ্ট হয়ে তার কিছু অংশ উপসাগরে প্রবেশ করে। বঙ্গোপসাগর থেকে এরা জলকণা এবং সুপ্ততাপ অর্জন করে এবং পরিণতিতে পুনরুজ্জীবিত পুনর্যৌবনা ঘূর্ণিঝড় পূর্ণ শক্তিমত্তায় আঘাত হানে। বক্রপথ অনুসরণ করে ঘূর্ণিঝড়সমূহ মায়ানমার ও বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল অথবা ভারতের পূর্ব উপকূলে পৌঁছায়। বাংলাদেশের চোঙ আকৃতির উপকূলীয় অঞ্চলটি বঙ্গোপসাগরে প্রায়শই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির ভূগত কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়। উপসাগরীয় ঘূর্ণিঝড়সমূহ ভারতের পূর্ব উপকূলে, মায়ানমারের দিকে কখনও কখনও শ্রীলঙ্কার দিকে অগ্রসর হয়। তবে এই ঘূর্ণিঝড়সমূহ সর্বোচ্চ ক্ষয়ক্ষতি ঘটায় যখন তা বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানে। এর পিছনে কারণগুলি হলো বিস্তৃত নিম্নসমতল ভূমি, জনসংখ্যার ঘনত্বের উচ্চমাত্রা, এবং ঘরবাড়ির দুর্বল নির্মাণ কাঠামো। সর্বাধিক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয় খুলনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, নোয়াখালী, এবং চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চল সমূহে এবং সমুদ্রতীর থেকে দূরবর্তী দ্বীপসমূহ যেমন ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, মনপুরা, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, নিঝুম দ্বীপ, উড়িরচর এবং নতুন জেগে ওঠা দ্বীপসমূহে।

টর্নেডো  বাংলাদেশে প্রাকবর্ষা উষ্ণ মৌসুমে আকস্মিকভাবে ঘটে, বিশেষত এপ্রিল মাসে যখন তাপমাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। একটি টর্নেডোর ব্যাস কয়েক মিটার থেকে প্রায় দুই কিলোমিটারের মত হতে পারে। বাতাসের ঘূর্ণনের বেগমাত্রা ৩০০-৪৮০ কিমি/ঘণ্টা, এবং টর্নেডোর কেন্দ্রে আপড্রাফট ৩২০ কিমি/ঘণ্টা এ পৌঁছাতে পারে। সাধারণত টর্নেডোর সাথে সাথে সংঘটিত হয় বজ্র, বিদ্যুৎ, প্রচুর বৃষ্টি এবং হাতির শুঁড়ের মত প্রচন্ড ভয়ংকর শব্দ। টর্নেডো খুবই স্বল্পকালীন দুর্যোগ যা সাধারণত ১০-২০ মিনিট স্থায়ী হয়, এবং এর অতিক্রান্ত এলাকার দৈর্ঘ্য ১০ থেকে ১৫ কিমির মত হতে পারে যদিও আকারে এটি ক্ষুদ্র কিন্তু যখন আঘাত হানে তখন ঐ অঞ্চল সম্পূর্ণতই ধ্বংস করে। অন্যান্য অঞ্চল সমূহের চেয়ে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে টর্নেডো অধিক সংঘটিত হয়। মারাত্মক টর্নেডোসমূহের অধিকাংশই রেকর্ড করা হয়েছে ফরিদপুর, রাজবাড়ি, গোপালগঞ্জ, পাবনা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল এবং ঢাকা জেলার অঞ্চল সমূহে।

বজ্র বিদ্যুৎসহ ঝড়বৃষ্টি  বাংলাদেশের সর্বত্রই প্রাকবর্ষা উষ্ণ মৌসুম (মার্চ-মে) এবং বর্ষা পরবর্তী (অক্টোবর-নভেম্বর) মৌসুমে সাধারণত সন্ধ্যাকালে প্রচন্ডতাসহ সংঘটিত হয়। বাংলাদেশে এই ঝড়ের বহুল পরিচিত নাম কাল বৈশাখী যখন তা গ্রীষ্মকালের শুরুতে ঘটে এবং বর্ষাপরবর্তী সময়ের ঝড় বলা হয় ‘আশ্বিনের ঝড়’। প্রচুর বৃষ্টিপাত সহ প্রচন্ড শক্তিসম্পন্ন দমকা হাওয়া, বজ্র এবং বিদ্যুৎচমক এই ঝড়ের সাধারণ বৈশিষ্ট্য।

কালবৈশাখী সাধারণত এপ্রিল-মে মৌসুমে বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া উত্তর-পশ্চিমাভিমুখী প্রচন্ড ঝড়, স্থানীয়ভাবে যা ‘কালবৈশাখী’ নামে পরিচিত। সাধারণ ঝড়বৃষ্টির সাথে এই ঝড়টির পার্থক্যটি হলো এ ঝড় সব সময়ই বজ্র ও বিদ্যুৎসহ সংঘটিত হয়। কালবৈশাখীর সাথে সাধারণভাবে শিলাবৃষ্টি দেখা যায়। মধ্য মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে তাপমাত্রা পরবর্তী মাসসমূহের অপেক্ষা (শীত মৌসুমের মাসসমূহ) তীব্রভাবে বৃদ্ধি পায়। এপ্রিলের মধ্যভাগে সমগ্র দেশে বিশেষত উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে দিনের তাপমাত্রার তীব্র বৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে। বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে কালবৈশাখী শেষ বিকেলে অধিক হারে ঘটে থাকে কারণ ঐ সময় ভূ-পৃষ্ঠের বিকিরণকৃত তাপপ্রবাহ বায়ুমন্ডলে সঞ্চালিত হয়। যে কারণে সন্ধ্যাকালে এই ঝড়ের প্রাদুর্ভাব ঘটে। পূর্বাঞ্চলীয় অংশে এটা সাধারণত সন্ধ্যার পরে, যুগপৎভাবে উত্তরপশ্চিমাঞ্চল থেকে পূর্বমুখী এবং দক্ষিণপূর্বাভিমুখে প্রবাহিত হয়। কালবৈশাখীর গড় গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ৪০-৬০ কিমি, তবে ব্যতিক্রমী কিছু ক্ষেত্রে বাতাসের গতিবেগ ১০০ কিমিও অতিক্রম করতে পারে। এই ঝড়গুলির ব্যাপ্তিকাল স্বল্পতর সময়ের কিন্তু মাঝে মাঝে তা ১ ঘন্টাও হতে পারে।

টর্ণেডোর আঘাতে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি

ঝড়ো জলোচ্ছ্বাস  বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূণিঝড় সমূহের সাথে ঝড়ো জলোচ্ছ্বাস এবং জোয়ার জলোচ্ছ্বাসেরও সৃষ্টি হয় এবং ঘূর্ণিঝড়ের প্রচন্ড শক্তিশালী বাতাস অপেক্ষা অনেক বেশি ধ্বংসলীলা সম্পাদন করে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল সমূহে এবং দূরবর্তী দ্বীপসমূহে। এ ধরনের ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে রয়েছে বাড়িঘর ধ্বংস, বৃক্ষ উপরে ফেলা, শস্য বিনষ্টী, সড়ক দালান এবং বিভিন্ন ভৌতকাঠামো ধ্বংস, মানুষের মৃত্যু এবং পশু সম্পদের ধ্বংস।  [রফিক আহমেদ এবং মাসুদ হাসান চৌধুরী]

জোয়ার জলোচ্ছ্বাস  এর অতি প্রচলিত বাংলা শব্দটি হলো ‘বান’। বাংলাদেশে এপ্রিল-মে মাসে এবং সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর মাসের মধ্যে মেঘনা মোহনা ও অন্যান্য দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূল এলাকায় জোয়ার জলোচ্ছ্বাস দেখা যায়। এটি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, বরগুনা এবং খুলনায় অধিক মাত্রায় ধ্বংসাত্মক ভূমিকা রাখে। মেঘনা মোহনায়, ১৯৭০ সালের (নভেম্বর ১২-১৩) প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে জলোচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছিল, ঝড়ের সাথে প্রচন্ড জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ৩.০৫-১০.৬ মিটার, সাথে সাথে বাতাসের গতিবেগ ছিল ২২২ কিমি/ঘণ্টা। সমুদ্রে জোয়ারকালীন এই সর্বাপেক্ষা আতঙ্কজনক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৩ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল।

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম, কক্সবাজার বরিশাল, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, বরগুনা এবং খুলনায় আরও একটি ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এ সময়ে ৫-৮ মিটার উচ্চ জোয়ার জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয়, এই ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ২৪০ কিমি/ঘণ্টা, ১৫০০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, ৭০,০০০ গবাদিপশু ধ্বংস হয়েছিল এবং সর্বমোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৬০০০ কোটি টাকা।  [এইচ.এস মোজাদ্দাদ ফারুক

বন্যা  প্রচুর বৃষ্টিপাত অথবা নদনদীর পানি বৃদ্ধির কারণে ভূভাগের প্লাবিত হয়ে পড়া। সাধারণত ভারি বৃষ্টিপাত, বরফ অথবা তুষার গলা পানি অথবা এদের মিলিত পানি নদীপ্রণালীর ধারণ ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে গেলে বন্যা সংঘটিত হয়। প্রতি বছর মৌসুমি ঋতুতে বাংলাদেশের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূ-ভাগ বন্যা প্লাবিত হয়। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, ভূ-কাঠামো, ভূ-প্রকৃতি এবং ভূমিরূপ বন্যা সংঘটনের জন্য দায়ী। মে মাস থেকেই এদেশে সাধারণত বন্যা শুরু হয়ে থাকে এবং নভেম্বর মাস পর্যন্ত তা স্থায়ী হতে পারে। বিগত পঞ্চাশ বছরে সংঘটিত বন্যাগুলির মধ্যে পাঁচটি বন্যা ছিল ব্যাপক বিস্তৃত এবং ধ্বংসাত্মক। এগুলি হচ্ছে ১৯৫৫, ১৯৭৪, ১৯৮৭, ১৯৮৮ এবং ১৯৯৮ সালের বন্যা।

বন্যা কবলিত গ্রাম

বাংলাদেশে সংঘটিত বন্যাকে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়: ক) মৌসুমি বন্যা (monsoon flood) - এই বন্যা ঋতুগত, নদনদীর পানি ধীরে ধীরে উঠানামা করে এবং বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত করে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে; খ) আকস্মিক বন্যা (flash flood) - আকস্মিক পাহাড়ি ঢল অথবা স্বল্প সময়ে সংঘটিত প্রবল বৃষ্টিপাত থেকে কিংবা প্রাকৃতিক অথবা মানবসৃষ্ট বাঁধ ভেঙে সংঘটিত হয়; এবং গ) জোয়ারসৃষ্ট বন্যা: সংক্ষিপ্ত স্থিতিকাল বিশিষ্ট এই বন্যার উচ্চতা সাধারণত ৩ থেকে ৬ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে এবং ভূভাগের নিষ্কাশন প্রণালীকে আবদ্ধ করে ফেলে।

বাংলাদেশের বন্যা সংঘটনের জন্য দায়ী কারণগুলি হচ্ছে: ১) সাধারণভাবে নিম্ন উচ্চতাবিশিষ্ট ভূসংস্থান যার উপর দিয়ে প্রধান প্রধান নদী প্রবাহিত হয়েছে। নদীগুলি তাদের শাখা-প্রশাখা এবং উপনদীর সমন্বয়ে ঘন বিন্যস্ত নিষ্কাশন জালিকা গড়ে তুলেছে; ২) দেশের বাইরে নদনদীর উজান এলাকায় এবং দেশের অভ্যন্তরে ভারি বৃষ্টিপাত; ৩) হিমালয় পর্বতে তুষার গলন এবং প্রাকৃতিকভাবে হিমবাহের স্থানান্তর সংঘটন; ৪) পলি সঞ্চয়নের ফলে নদনদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া/নদীর পার্শ্বদেশ দখল হয়ে যাওয়া/ভূমিধ্বস সংঘটন; ৫) প্রধান প্রধান নদীসমূহে একসঙ্গে পানি বৃদ্ধি এবং এক নদীর ওপর অন্য নদীর প্রভাব বিস্তার করা; ৬) প্রকৃতির ওপর মানবীয় হস্তক্ষেপ; ৭) জোয়ারভাটা এবং বায়ুপ্রবাহের বিপরীতমুখী ক্রিয়ার ফলে নদনদীর সমুদ্রমুখী প্রবাহ ধীরগতি প্রাপ্ত হওয়া (back water effect); ৮) সমুদ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া; ৯) ভূ-গাঠনিক বিশৃঙ্খলা (ভূমিকম্প, নদীর প্রবাহ ও ভূরূপতত্ত্বে পরিবর্তন); ১০) সম্ভাব্য গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া প্রভৃতি।

নদীভাঙন  প্রতিবৎসর এদেশের লক্ষ লক্ষ অধিবাসী নদীভাঙনের শিকার হয়। মাঠের শস্য, ক্ষেত ও বসতভিটার ভূমি বিলীন হয়ে যায় নদীভাঙনের মাধ্যমে। হিসাবে দেখা যায় বাংলাদেশের সর্বমোট প্লাবনভূমির প্রায় ৫% ভূমি প্রত্যক্ষভাবে নদীভাঙনের কবলে পড়ছে। দেশের ৪৯৬টি উপজেলা বা থানার মধ্যে ৯৪টি উপজেলায় নদীভাঙনের ঘটনা ঘটেছে। ১৯৯৩ সালের জুন মাসে দেশের ১৬টি জেলার নদীভাঙনের ফলে ২৫.০০০ এর বেশি পরিবার গৃহহীন হয়। বর্ষা মৌসুমে তীর ছাপিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়া, তীরভাঙন এবং তীররেখার পরিবর্তন খুবই সাধারণ চিত্র। নদীসমূহের আচমকা পরিবর্তনমুখী আচরণ এবং আগ্রাসন কেবল গ্রামের প্লাবনভূমির অধিবাসীদেরকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না, শহরাঞ্চলের বর্ধিষ্ণু জনপদ ও অবকাঠামোরও অনিষ্ট সাধন করে।

বাংলাদেশের নদীভাঙনে অধিকমাত্রায় সমর্থ নদীগুলো হলো গঙ্গা, যমুনা, পদ্মা এবং লোয়ার মেঘনা। গঙ্গার ডান ও বাম তীর ধরে প্রতিবৎসর ভাঙনের হার যথাক্রমে ৫৬ মিটার এবং ২০ মিটার। ১৯৭৩ থেকে ২০০০ সাল সময়ের মধ্যে যমুনার প্রশস্তি ঘটার হার হলো ১২৮মি/বৎসর। এ সময়ে যমুনার গড় প্রশস্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে ৯.৭ থেকে ১১.২ কিমি। ১৯৮৪-৯২ সাল পর্যন্ত সময়ে বাম তীরাঞ্চল সর্বোচ্চ ভাঙনের শিকার হয়, আরিচা থেকে সামান্য উজানে এই ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দেয়।

২৮ বৎসর ধরে যমুনা নদীর প্রশস্তায়নের ফলে বাংলাদেশে প্রবহমান যমুনা নদীর ২২০ কিমি দীর্ঘ গতিপথে ৭০.০০০ হেক্টর প্লাবনভূমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

পদ্মা নদীর তীররেখা অতিমাত্রায় অস্থির এবং প্রশস্তায়নের হার ১৫৯ মিটার/বৎসর। লোয়ার মেঘনা তার উভয় তীরের ভূমি ক্ষয়ের ফলে মধ্যবর্তী গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে। ১৯৮৪-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সময়ে চাঁদপুরের ভাটির দিকের পশ্চিমপ্রান্তীয় তীরভূমি ব্যাপক ভাঙনের কবলে পড়ে এবং তীব্র ভাঙনের ফলে একটি বিশাল অঞ্চল নদীগর্ভে হারিয়ে যায়। এ সময়ে ভাঙনের হার ছিল অত্যন্ত অধিক ৮২৪ মিটার/বৎসর, এটি একই সময়ে যমুনার প্রশস্তায়নের হারের চেয়ে অনেক বেশি (১৮৪ মিটার/বৎসর)। নদী বক্ষে নতুন ভূমি জেগে উঠার পরিমাণের চেয়ে ভূমি হারানোর পরিমাণ অনেক বেশি। বাংলাদেশের নদীসমূহের গতিপথে এই ভূমিক্ষয় ভূবৃদ্ধির ঘটনা নদীর ভাঙ্গাগড়ার বৈশিষ্ট্যময় এক চিরকালীন চিত্র। নদী অঞ্চলের স্থানীয় রাজনীতিতে এ প্রক্রিয়া যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে।

উপকূলীয় ভাঙন  দুইটি মূল ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলের সংযুক্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বদ্বীপ সদৃশ উপকূলীয় রেখা গড়ে উঠেছে: নিষ্ক্রিয় বা পরিত্যক্ত গঙ্গা জোয়ারভাটা প্লাবনভূমি এবং সক্রিয় মেঘনা বদ্বীপ সমভূমি। গঙ্গা জোয়ারভাটা প্লাবনভূমি তুলনামূলকভাবে পুরাতন, মেঘনা ব-দ্বীপ সমভূমি সেক্ষেত্রে ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে নবীন। মেঘনা বদ্বীপ, সমভূমি চট্টগ্রাম উপকূলের পূর্ব থেকে পশ্চিমে তেঁতুলিয়া প্রণালী পর্যন্ত বিস্তৃত। ভূমিক্ষয়-ভূবৃদ্ধি প্রক্রিয়া এই অংশে অধিক ক্রিয়াশীল। বৃহত্তর মানচিত্রের তুলনামূলক বিচারে দেখা যায় গঙ্গা ব্রহ্মপুত্র নদীর বদ্বীপ সমুদ্র অভিমুখে গত দুই শতাব্দী ধরে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পায় নাই। পরিবর্তন গোচরীভূত হতে পারে সন্দ্বীপ এবং তৎসংলগ্ন দ্বীপসমূহে, হাতিয়া দ্বীপে, ভোলা দ্বীপে এবং নোয়াখালীর মূলভূমির উপকূলীয় রেখা বরাবর। গত ২০০ বৎসরের হিসাবে দেখা যায় সন্দ্বীপ দ্বীপের আকার হ্রাস পেয়েছে। সন্দ্বীপ প্রণালী নদীগুলির প্রধান ধারার নিকট থেকে ১৭৬৪-১৭৯৩ সালের দিকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। এসময়ে হাতিয়া দ্বীপ দক্ষিণ দিকে সম্প্রসারিত এবং লক্ষণীয়ভাবে স্থানান্তরিত হয়। ভোলা দ্বীপও উত্তর-দক্ষিণে সম্প্রসারিত হয়। দ্বীপসমূহ সাধারণভাবে ৫০ কিমি এর মত দক্ষিণ অভিমুখে সরে গিয়েছে।

নদীভাঙন

ভূমিধ্বস  বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় একটি সাধারণ ঘটনা, বিশেষত বান্দরবান এবং রাঙ্গামাটি জেলায়। প্রতি বৎসর বিশেষত বর্ষা মৌসুমে প্রাকৃতিক এবং মানব সৃষ্ট উভয় ভাবে ভূমিধ্বসের ঘটনা ঘটে। বান্দরবান শহরের সাথে দেশের অন্যান্য অংশের সাথে সংযোগরক্ষাকারী সড়কসমূহ প্রায় প্রতি বৎসরই ভূমিধ্বসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শহরের সাথে সংলগ্ন এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। শুধুমাত্র সড়ক ব্যবস্থা নয় একই সাথে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভৌতকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মূল্যবান জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। ইমারত এবং অন্যান্য ভৌতকাঠামো নির্মাণের কারণে সৃষ্ট ভূমিধ্বস প্রতিরোধে পার্বত্য জেলা সমূহের শহর এবং উপ শহর কেন্দ্রগুলিতে এ ধরনের নির্মাণ কর্ম অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। খাড়া পাহাড়ি ঢালে ঝুম চাষ এবং অন্যান্য চাষাবাদ পদ্ধতির প্রভাব, ভূমিধ্বস সংঘটনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাহাড় কর্তন ভূমিধ্বসের অপর একটি প্রধান কারণ। ভূমিধ্বস প্রতিরোধে সাধারণ প্রকৌশল প্রযুক্তিগুলি হলো ভূপৃষ্ঠের উপরের এবং ভূপৃষ্ঠের অব্যবহিত নিচের স্তরে কর্মরত নিষ্কাশন ব্যবস্থা গড় তোলা; ঢাল থেকে অস্থিতিশীল উপকরণের অপসারণ, মাটি আটকে রাখার জন্য প্রাচীর নির্মাণ, বা উল্লিখিত কৌশল কিছু সমন্বিত ব্যবস্থা। এসবের অনেকগুলিই বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যবহূত হচ্ছে। একটি সফল সমন্বিত প্রাণপ্রকৌশল এবং নিষ্কাশন নিয়ন্ত্রণ কৌশল (জিও-জুট টেক্সটাইল পদ্ধতি) ভূমিধ্বস থেকে নিরাপত্তা বিধান ও প্রশমনে বান্দরবানে পরিচালিত হয়েছে। ১৯৭৭ সালে খাগড়াছড়ি এবং কক্সবাজার জেলায় ১৬০টি ভূমিধ্বস নিম্নাভিমুখ এলাকাসমূহ জিআইএস কৌশল ব্যবহার করে চিহ্নিত করা হয়েছিল।  [সিফাতুল কাদের চৌধুরী]

আর্সেনিক  বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে, গাঙ্গেয় পললভূমির ভূগর্ভস্থ জলস্তর জনগণের জন্য পানি সরবরাহে ব্যবহূত হচ্ছে। প্রাকৃতিকভাবে এ পানিতে আর্সেনিক দূষণ ঘটছে, যা লক্ষলক্ষ মানুষের স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশে আর্সেনিক দুষণীয় মাত্রায় পাওয়া গেছে এমন এলাকাসমূহ প্রধানত দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল (লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর) দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল (কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর) এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় অংশে (নবাবগঞ্জ) সীমাবদ্ধ, যা গঙ্গা ব-দ্বীপ সমভূমির অন্তর্ভুক্ত। ভূগর্ভস্থ জলস্তরের ১০০ মিটার উচ্চ স্তরের মধ্যে প্রধানত আর্সেনিকের কেন্দ্রীভবন ঘটে। ভূ-পৃষ্ঠের পানির স্রোতের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া শেষাবধি আর্সেনিক দূর করবে কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হতে হাজার হাজার অথবা দশ হাজার বৎসর সময়ের প্রয়োজন হবে। পশ্চিমবঙ্গেও একইরূপ ভূতাত্ত্বিক এবং জল ভূতাত্ত্বিক অবস্থায় আর্সেনিক দূষণ ঘটেছে। ভূ-পৃষ্ঠের পানিতে আর্সেনিক দূষণ মানবজাতির সম্মুখে নতুন কোন স্বাস্থ্যসমস্যা নয় এবং এটিকে সফলভাবে মোকাবেলা করা যেতে পারে। স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা যেমন আর্সেনিক পাওয়া গেছে এমন কূপ, নলকূপ চিহ্নিত করণ, দূষণমুক্ত ভূ-পৃষ্ঠের উপরের পানি ব্যবহার, বৃষ্টির পানি এবং বাড়িতে আর্সেনিক দূষণ মুক্তকরণ স্থাপনা নির্মাণের মত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থাদি যেমন দূষণহীন ভূগর্ভস্থ জলস্তরে কূপ স্থাপন, জনসমষ্টি ভিত্তিক আর্সেনিক দূষণ মুক্তকরণ স্থাপনা নির্মাণ এবং দূষণমুক্ত ভূ-পৃষ্ঠের উপরের পানির সরবরাহ প্রণালী গড়ে তোলার বিষয়টি বিবেচিত হতে পারে। এ সংক্রান্ত দীর্ঘমেয়াদী গবেষণার ক্ষেত্রে আর্সেনিক দূষণযুক্ত পানি দ্বারা সেচের বিষয়টি বিবেচ্য হওয়া উচিত। ভূগর্ভস্থ পানির উত্তোলন নিম্নতম পর্যায়ে রাখতে হবে এবং সংযোজিত ব্যবস্থায় ভূ-পৃষ্ঠের উপরের পানির ব্যবহার এবং ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে ভবিষ্যত পানি উন্নয়ন নীতি গ্রহণ করতে হবে।  [মোঃ কামরুল হাসান]

ভূমিকম্প  বাংলাদেশের উত্তরে এবং উত্তর পূর্বে রয়েছে উচ্চ ভূকম্প সক্রিয় এলাকা, প্রধান ভূমিকম্প সমূহের কিছু এ অঞ্চল থেকে উৎপত্তি হয়েছে এবং দেশের সংলগ্ন এলাকাসমূহ এর প্রভাব পড়েছে। সমগ্র বাংলাদেশকে তিনটি ভূ-কম্প বলয়ে বিভক্ত করা হয়। দেশের উত্তরাঞ্চলীয় অংশের আওতায় রয়েছে রংপুর, ময়মনসিংহ এবং সিলেট এর শহর এলাকা বলয় ১ ভুক্ত যেখানে ভূমিকম্প সর্বোচ্চ কম্পন তীব্রতার মাত্রা IX পরিবর্তিত মারকালি স্কেলে...। ভূকম্পবলয়-২ এর আওতায় রয়েছে দিনাজপুর, বগুড়া, ঢাকা ও চট্টগ্রামের শহর এলাকাসমূহ এবং এ কম্পন মাত্রা VIII। দেশের দক্ষিণাঞ্চল সর্বনিম্ন ভূমিকম্প সক্রিয় অঞ্চল, এখানে সবোর্চ্চ তীব্রতা মাত্রা VII অতিক্রম করে না। এ অঞ্চল ভূকম্প বলয়-৩ এর অন্তর্ভুক্ত। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন সাধারণ ইমারতগুলোর উচ্চতা ৬০ মিটারের অধিক হওয়া ঠিক নয়। বাংলাদেশের সংঘটিত প্রধান প্রধান ভূমিকম্পসমূহের তালিকা- নাম, তারিখ উপকেন্দ্র এবং রেকটির স্কেলে বিস্তারসহ নিম্নে উল্লেখ করা হয়। কাছার ভূমিকম্প (তারিখ-১ অক্টোবর ১৮৬৯, উপকেন্দ্র- জৈন্তিয়া পর্বত, বিস্তার-৭.৫); বেঙ্গল ভূমিকম্প (তারিখ-১৪ জুলাই ১৮৮৫, উপকেন্দ্র-বগুড়া চ্যুতি, বিস্তার-৭.০); ভয়াবহ ভারতীয় ভূমিকম্প (তারিখ-১২ ডিসেম্বর, ১৮৯৭, উপকেন্দ্র-শিলং মালভূমি, বিস্তার-৮.৭); শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্প (তারিখ ৮ জুলাই ১৮৯১৮, উপকেন্দ্র বালিসেরা উপত্যকা, শ্রীমঙ্গল, বিস্তার- ৭.৩) ধুবরি ভূমিকম্প (তারিখ-৩ জুলাই ১৯৩০, উপকেন্দ্র ধুবরি শহর, আসাম, বিস্তার-৭.১) বিহার-নেপাল ভূমিকম্প (তারিখ-১৫ জানুয়ারি, ১৯৩৪, উপকেন্দ্র-দারভাঙ্গা, বিস্তার- ৮.৩); আসাম ভূমিকম্প (তারিখ-১৫ অগাস্ট, ১৯৫০ উপকেন্দ্র- আসামের অরুণাচল, বিস্তার- ৮.৫)। খুবই সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশ এবং সন্নিকটস্থ এলাকায় সংঘটিত ভূমিকম্পগুলি হলো: সিলেট ভূমিকম্প (তরিখ-৫ অগাস্ট ১৯৯৭, উপকেন্দ্র জানা যায় নাই, বিস্তার-৬.০০); চট্টগ্রাম ভূমিকম্প (তারিখ-২১ নভেম্বর ১৯৯৭, উপকেন্দ্র- ইন্দো বাংলাদেশ সীমান্ত, বিস্তার-৬.০০); এবং মহেশখালী দ্বীপ ভূমিকম্প (তারিখ-২২ জুলাই ১৯৯৯, উপকেন্দ্র- মহেশখালী দ্বীপের পশ্চিমাঞ্চল, বিস্তার-৫.২)। বাংলাদেশের জেলাভিত্তিক ভৌগোলিক ইশতেহারে বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত ভূমিকম্পের প্রভাব সম্পর্কে তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে। বাংলাদেশে মাত্র একটি ভূমিকম্প রেকর্ড কেন্দ্র রয়েছে, বাংলাদেশের আবহাওয়া বিভাগের আওতায় চট্টগ্রাম শহরে এই কেন্দ্রটি অবস্থিত।  [মোঃ খুরশিদ আলম]

আরও দেখুন উপকূলীয় ভাঙন; ঘূর্ণিঝড়; ভূমিকম্প; ভূমিধস; বন্যা; নদীভাঙন; মৃত্তিকা ক্ষয়; বজ্রঝড়, জলোচ্ছ্বাস

গ্রন্থপঞ্জি AM Chowdhury, ‘Rose Petals for Tropical Cyclones’, Nuclear Science and Applications (118), 1978; AM Chowdhury et al, ‘Sterering Wind Effects on Cyclone Tracks in the Bay of Bengal’, The Dhaka University Journal of Science 43 (1), January 1995; BBS, 1998 Statistical Yearbook of Bangladesh (19th edition), Bangladesh Bureau of Statistics, Government of the People’s Republic of Bangladesh, 1999; K Nizamuddin ed, Disaster in Bangladesh: Selected Readings, Disaster Research Training and Management Centre, University of Dhaka, 2001.