সৈয়দপুর উপজেলা

Banglapedia admin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৪:৩৪, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

সৈয়দপুর উপজেলা (নীলফামারী জেলা)  আয়তন: ১২১.৬৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৪৪´ থেকে ২৫°৫২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫১´ থেকে ৮৯°০১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নীলফামারী সদর ও কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) উপজেলা, দক্ষিণে বদরগঞ্জ ও পার্বতীপুর উপজেলা, পূর্বে তারাগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে চিরিরবন্দর ও খানসামা উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৬৪৪৬১; পুরুষ ১৩৩৭৩৭, মহিলা ১৩০৭২৪। মুসলিম ২৪৪১৬৬, হিন্দু ১৯৯৪৬, বৌদ্ধ ১৪, খ্রিস্টান ২৮৩ এবং অন্যান্য ৫২।

জলাশয় প্রধান নদী: খড়খড়িয়া ও চিকলি।

প্রশাসন সৈয়দপুর থানা গঠিত হয় ১৯১৫ সালে এবং বর্তমানে এটি একটি উপজেলা।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৩৯ ৩৯ ১৩০০৪১ ১৩৪৪২০ ২১৭৪ ৫৭.৮ (২০০১) ৪৫.২
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৩৪.৪৯ (২০০১) ১৫ ৪২ ১২৭১০৪ ৩২৬৫ (২০০১) ৬৩.৯
পৌরসভার বাইরে উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
- ২৯৩৭ - ৫৯.৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কামারপুকুর ৪০ ৪১৩৫ ১২৯০৯ ১২৮৪৪ ৫১.৪
কাশিরাম বেলপুকুর ৬৭ ৫৪৯৫ ১৫৮১৬ ১৫৭৩০ ৪১.১
বাঙালিপুর ২৩ ৩৫২৩ ৯৮২৪ ১০০৫১ ৫৫.০
বোথলাগাড়ি ২৭ ৫৯০৯ ১৯০০১ ১৮৮৬৫ ৪১.৬
খাটামধুপুর ৫৪ ৪৮৫৫ ১১১২৭ ১১১৯০ ৪২.৪

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ চিনি মসজিদ (১৮৬৩, ইসলামবাগ), নট সেটেলমেন্ট কারাগার (১৮৭১, নতুন বাবুপাড়া), মর্তুজা ইনস্টিটিউট (১৮৮২, সৈয়দপুর শহর), সৈয়দপুর গির্জা (১৮৯৩), ক্রাইস্ট চার্চ অব বাংলাদেশ (১৯০৬)।

ঐতিহাসিক ঘটনা এক সময় সৈয়দপুর কামরূপ রাজ্যের অধীন ছিল। গৌড়াধিপতি আলাউদ্দিন সৈয়দ হোসেন শাহ কামরূপ অভিযান করার জন্য বর্তমান সৈয়দপুরের অদূরে কেল্লাবাড়ী হাটে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। উক্ত দূর্গ থেকে তিনি কামরূপ রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। পরবর্তী সময়ে হোসেন শাহের বংশধরেরা উক্ত স্থানে জায়গীর প্রাপ্ত হন।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ অবাঙালিদের (বিহারি) হামলায় সৈয়দপুর উপজেলার বেশ কয়েকজন নিরীহ বাঙালি প্রাণ হারায়। ৬ই এপ্রিল সৈয়দপুরের ফকিরপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর যুদ্ধ হয়। এতে বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও বাঙ্গালি আনসার বাহিনী ব্যাপকভাবে অংশ নেয়। তবে পাকিস্তানি সৈন্যদের সংখ্যা ও তাদের ভারী অস্ত্রশস্ত্রের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা সুবিধা করতে না পারায় পিছু হটতে বাধ্য হয়। ৭ এপ্রিল পাকসেনারা এ উপজেলায় নিরীহ লোকের ওপর নির্যাতন চালায় ও হত্যা করে। তাছাড়া ২৩ জুন গোলাহাটে পাকসেনারা ৩৫০ জন নিরীহ বাঙালিকে গুলি করে হত্যা করে। সৈয়দপুরের গোলাহাটে ১টি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিস্তারিত দেখুন সৈয়দপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১০।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ২৪০, মন্দির ৩৭, গির্জা ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ইসলামবাগ চিনি মসজিদ, সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, মিস্ত্রিপাড়া শিবমন্দির ও কালী মন্দির, সৈয়দপুর গির্জা, ক্রাইষ্ট চার্চ অব বাংলাদেশ (১৯০৬)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৪.৬%; পুরুষ ৫৭.৪%, মহিলা ৫১.৬%। কলেজ ৫, হোমিওপ্যাথিক কলেজ ১, কারিগরি কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৫, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭৮, কিন্ডার গার্টেন ৫, মাদ্রাসা ২০, এতিমখানা ৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সৈয়দপুর কলেজ (১৯৫৩), সৈয়দপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজ (১৯৮১), কামারপুকুর ডিগ্রী কলেজ (১৯৯৫), সৈয়দপুর সরকারি কারিগরি কলেজ (১৯৬৭), হোমিওপ্যাথিক কলেজ (১৯৭৩), সৈয়দপুর ক্যান্ট-পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সৈয়দপুর আদর্শ বালিকা স্কুল এন্ড কলেজ (২০০২), সৈয়দপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬), তুলশীরাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), সোনাখুলী কামিল মাদ্রাসা (১৯৩৫), আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল-উলুম মাদ্রাসা (১৯৪৫)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: আলাপন, সৈয়দপুর বার্তা, জনসমস্যা, মানব সমস্যা, দাগ; মাসিক: তৃণ, অতন্দ্র; ত্রৈমাসিক: দিগন্ত।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৩৫, লাইব্রেরি ৫, সিনেমা হল ৪, নাট্যমঞ্চ ১, সংগীত বিদ্যালয় ৩, নাট্যদল ৯, সার্কাস দল ১, সাহিত্য সংগঠন ২।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৫.৩৯%, অকৃষি শ্রমিক ৫.২০%, ব্যবসা ১৮.৭৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৬.৩৯%, চাকরি ১৭.৭০%, নির্মাণ ২.৩৪%, ধর্মীয় সেবা ০.২৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৬২% এবং অন্যান্য ১৩.৩৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৩৫.৭৪%, ভূমিহীন ৬৪.২৬%। শহরে ২৬.৫৩% এবং গ্রামে ৪৪.০৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আলু, তামাক, আদা, রসুন, পিঁয়াজ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  তিল, সরিষা।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, তাল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৩২, গবাদিপশু ১৮, হাঁস-মুরগি ১৪৭।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৫১.৭৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৩৬.৯২ কিমি; রেলপথ ৭.২৬ কিমি; বিমানবন্দর ১।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল, আটাকল, বরফকল, রেলকারখানা, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, ইটভাটা, ওয়েল্ডিং কারখানা, বিড়ি ফ্যাক্টরি, এ্যালুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২০, মেলা ২। ত্রিমোহনীর হাট, সিপাইগঞ্জ হাট, হাজারীহাট, পোড়ারহাট, চওড়াহাট, কামারপুকুর হাট, ডাঙ্গার হাট, সাতপাই হাট, কারখানাগেট বাজার, রেল বাজার এবং পোড়ারহাট মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, পাট, গম, শাকসবজি, এ্যালুমিনিয়াম দ্রব্যাদি, বিস্কুট।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬১.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৬%, ট্যাপ ২.৮% এবং অন্যান্য ১.৬%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫৬.৭% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৫.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৭.৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে­ক্স ১, রেলওয়ে হাসপাতাল ১, চক্ষু হাসপাতাল ১, ডায়াবেটিক হাসপাতাল ১, শিশু ও মাতৃসদন হাসপাতাল ১, বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৫, ক্লিনিক ৫।

এনজিও ব্র্যাক, আশা।  [আবদুস সাত্তার]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; সৈয়দপুর উপজেলার সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।