রানীক্ষেত রোগ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

("'''রানীক্ষেত রোগ''' (Ranikhet Disease) রানীক্ষেত মুরগির একটি তীব্র সংক..." দিয়ে পাতা তৈরি)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
'''রানীক্ষেত রোগ''' (Ranikhet Disease)  রানীক্ষেত মুরগির একটি তীব্র সংক্রামক রোগ যা খুবই ছোঁয়াচে। এই রোগ ইংল্যান্ডের নিউক্যাসেলে প্রথম সনাক্ত হয় এবং নিউক্যাসল রোগ নামে পরিচিতি লাভ করে। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। সাধারণত, প্রাপ্তবয়স্ক মুরগির তুলনায় ছানারা এই রোগে বেশি সংবেদনশীল। মুরগির পাশাপাশি টার্কি, কোয়েল, কবুতর, গিনি ফাউল, কাক, তোতা প্রভৃতিও এ রোগে আক্রান্ত হয়। পাখিরা সারা বছরই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে, তবে শীত ও বসন্ত ঋতুতে এ রোগের সংক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। একবার এটি  কোনো পাখির ঝাঁকে ছড়িয়ে পড়লে অনেক পাখি আক্রান্ত হতে পারে। মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায় এবং যে পাখিগুলো সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠে তারা জীবাণুবহনকারী হিসেবে সুস্থ পাখিদের মধ্যে রোগ ছড়াতে পারে।  
'''রানীক্ষেত রোগ''' (Ranikhet Disease)  রানীক্ষেত মুরগির একটি তীব্র সংক্রামক রোগ যা খুবই ছোঁয়াচে। এই রোগ ইংল্যান্ডের নিউক্যাসেলে প্রথম সনাক্ত হয় এবং নিউক্যাসল রোগ নামে পরিচিতি লাভ করে। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। সাধারণত, প্রাপ্তবয়স্ক মুরগির তুলনায় ছানারা এই রোগে বেশি সংবেদনশীল। মুরগির পাশাপাশি টার্কি, কোয়েল, কবুতর, গিনি ফাউল, কাক, তোতা প্রভৃতিও এ রোগে আক্রান্ত হয়। পাখিরা সারা বছরই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে, তবে শীত ও বসন্ত ঋতুতে এ রোগের সংক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। একবার এটি  কোনো পাখির ঝাঁকে ছড়িয়ে পড়লে অনেক পাখি আক্রান্ত হতে পারে। মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায় এবং যে পাখিগুলো সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠে তারা জীবাণুবহনকারী হিসেবে সুস্থ পাখিদের মধ্যে রোগ ছড়াতে পারে।  


'''রোগের সংক্রমণ'''  সংক্রমিত পাখি এই ভাইরাসের প্রধান বাহক। সংক্রামিত পাখির  বিষ্ঠা, লালা ইত্যাদির সংস্পর্শে বা খাদ্যের মাধ্যমে এই জীবাণু  সুস্থ পাখির দেহে প্রবেশ করলে সংক্রমণ ঘটে।
''রোগের সংক্রমণ''  সংক্রমিত পাখি এই ভাইরাসের প্রধান বাহক। সংক্রামিত পাখির  বিষ্ঠা, লালা ইত্যাদির সংস্পর্শে বা খাদ্যের মাধ্যমে এই জীবাণু  সুস্থ পাখির দেহে প্রবেশ করলে সংক্রমণ ঘটে।


'''লক্ষণ'''  (ক) রোগের তীব্র পর্যায়ে মোরগ/মুরগি হঠাৎ তীব্র শব্দ করে ও লাফাতে থাকে এবং অবশেষে  মারা যায়। এই রোগের মৃত্যুর হার প্রায় ১০০%; (খ) তীব্র সংক্রমণে মুরগির ডায়রিয়া, ক্ষুধা হ্রাস, কাশি এবং হাঁচি (নাক দিয়ে স্রাব) শুরু হয়। সংক্রামিত পাখির তন্দ্রাচ্ছন্নতার উপসর্গ দেখা যায় এবং মুখ খুলে দীর্ঘ  শ্বাসগ্রহণ করে; (গ) তন্দ্রা, ডানা ঝরে পড়া এবং মাঝে মাঝে সবুজাভ ডায়রিয়া দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে সদ্য ভূমিষ্ট ছানাগুলির মৃত্যুর হার প্রায় ৯০-৯৫%; (ঘ) সংক্রমণ মৃদু হলে প্রাপ্তবয়স্ক মুরগির শ্বাসকষ্ট হয়। ডিম উৎপাদন নাটকীয়ভাবে কমে যায়, মুরগির বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়।
''লক্ষণ''  (ক) রোগের তীব্র পর্যায়ে মোরগ/মুরগি হঠাৎ তীব্র শব্দ করে ও লাফাতে থাকে এবং অবশেষে  মারা যায়। এই রোগের মৃত্যুর হার প্রায় ১০০%; (খ) তীব্র সংক্রমণে মুরগির ডায়রিয়া, ক্ষুধা হ্রাস, কাশি এবং হাঁচি (নাক দিয়ে স্রাব) শুরু হয়। সংক্রামিত পাখির তন্দ্রাচ্ছন্নতার উপসর্গ দেখা যায় এবং মুখ খুলে দীর্ঘ  শ্বাসগ্রহণ করে; (গ) তন্দ্রা, ডানা ঝরে পড়া এবং মাঝে মাঝে সবুজাভ ডায়রিয়া দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে সদ্য ভূমিষ্ট ছানাগুলির মৃত্যুর হার প্রায় ৯০-৯৫%; (ঘ) সংক্রমণ মৃদু হলে প্রাপ্তবয়স্ক মুরগির শ্বাসকষ্ট হয়। ডিম উৎপাদন নাটকীয়ভাবে কমে যায়, মুরগির বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়।


'''প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ'''  (১) ছানা এবং প্রাপ্তবয়স্ক মুরগির জন্য কঠোরভাবে টিকা সময়সূচি অনুসরণ করা উচিত; (২) হাঁস-মুরগির ঘর অবশ্যই যথাযথভাবে পরিষ্কার করতে হবে; বাড়ির চত্বর, আবাসন সরঞ্জাম এবং আঙিনা যেখানে পাখি পালন করা হয় সেগুলিকে জীবাণুনাশক ব্যবহার করে ঘন ঘন জীবাণুমুক্ত করতে হবে; (৩) চাষের এলাকায় জৈব-নিরাপত্তা কঠোরভাবে বজায় রাখতে হবে এবং বাজার থেকে কেনা নতুন পাখিকে সুস্থ পাখি থেকে আলাদাভাবে রাখতে হবে; (৪) আক্রান্ত মৃত পাখি মাটির নিচে চাপা দেওয়া উচিত। এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মনে রাখতে হবে ‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম’। তাই এই রোগ প্রতিরোধের জন্য যথাযথ টিকাদান অপরিহার্য।  [হোসেন মো. সেলিম এবং সিরাজুল হক]
'''প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ'''  (১) ছানা এবং প্রাপ্তবয়স্ক মুরগির জন্য কঠোরভাবে টিকা সময়সূচি অনুসরণ করা উচিত; (২) হাঁস-মুরগির ঘর অবশ্যই যথাযথভাবে পরিষ্কার করতে হবে; বাড়ির চত্বর, আবাসন সরঞ্জাম এবং আঙিনা যেখানে পাখি পালন করা হয় সেগুলিকে জীবাণুনাশক ব্যবহার করে ঘন ঘন জীবাণুমুক্ত করতে হবে; (৩) চাষের এলাকায় জৈব-নিরাপত্তা কঠোরভাবে বজায় রাখতে হবে এবং বাজার থেকে কেনা নতুন পাখিকে সুস্থ পাখি থেকে আলাদাভাবে রাখতে হবে; (৪) আক্রান্ত মৃত পাখি মাটির নিচে চাপা দেওয়া উচিত। এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মনে রাখতে হবে ‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম’। তাই এই রোগ প্রতিরোধের জন্য যথাযথ টিকাদান অপরিহার্য।  [হোসেন মো. সেলিম এবং সিরাজুল হক]


[[en:Ranikhet Disease]]
[[en:Ranikhet Disease]]

০৫:৪৩, ২ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

রানীক্ষেত রোগ (Ranikhet Disease) রানীক্ষেত মুরগির একটি তীব্র সংক্রামক রোগ যা খুবই ছোঁয়াচে। এই রোগ ইংল্যান্ডের নিউক্যাসেলে প্রথম সনাক্ত হয় এবং নিউক্যাসল রোগ নামে পরিচিতি লাভ করে। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। সাধারণত, প্রাপ্তবয়স্ক মুরগির তুলনায় ছানারা এই রোগে বেশি সংবেদনশীল। মুরগির পাশাপাশি টার্কি, কোয়েল, কবুতর, গিনি ফাউল, কাক, তোতা প্রভৃতিও এ রোগে আক্রান্ত হয়। পাখিরা সারা বছরই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে, তবে শীত ও বসন্ত ঋতুতে এ রোগের সংক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। একবার এটি কোনো পাখির ঝাঁকে ছড়িয়ে পড়লে অনেক পাখি আক্রান্ত হতে পারে। মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায় এবং যে পাখিগুলো সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠে তারা জীবাণুবহনকারী হিসেবে সুস্থ পাখিদের মধ্যে রোগ ছড়াতে পারে।

রোগের সংক্রমণ সংক্রমিত পাখি এই ভাইরাসের প্রধান বাহক। সংক্রামিত পাখির বিষ্ঠা, লালা ইত্যাদির সংস্পর্শে বা খাদ্যের মাধ্যমে এই জীবাণু সুস্থ পাখির দেহে প্রবেশ করলে সংক্রমণ ঘটে।

লক্ষণ (ক) রোগের তীব্র পর্যায়ে মোরগ/মুরগি হঠাৎ তীব্র শব্দ করে ও লাফাতে থাকে এবং অবশেষে মারা যায়। এই রোগের মৃত্যুর হার প্রায় ১০০%; (খ) তীব্র সংক্রমণে মুরগির ডায়রিয়া, ক্ষুধা হ্রাস, কাশি এবং হাঁচি (নাক দিয়ে স্রাব) শুরু হয়। সংক্রামিত পাখির তন্দ্রাচ্ছন্নতার উপসর্গ দেখা যায় এবং মুখ খুলে দীর্ঘ শ্বাসগ্রহণ করে; (গ) তন্দ্রা, ডানা ঝরে পড়া এবং মাঝে মাঝে সবুজাভ ডায়রিয়া দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে সদ্য ভূমিষ্ট ছানাগুলির মৃত্যুর হার প্রায় ৯০-৯৫%; (ঘ) সংক্রমণ মৃদু হলে প্রাপ্তবয়স্ক মুরগির শ্বাসকষ্ট হয়। ডিম উৎপাদন নাটকীয়ভাবে কমে যায়, মুরগির বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়।

প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ (১) ছানা এবং প্রাপ্তবয়স্ক মুরগির জন্য কঠোরভাবে টিকা সময়সূচি অনুসরণ করা উচিত; (২) হাঁস-মুরগির ঘর অবশ্যই যথাযথভাবে পরিষ্কার করতে হবে; বাড়ির চত্বর, আবাসন সরঞ্জাম এবং আঙিনা যেখানে পাখি পালন করা হয় সেগুলিকে জীবাণুনাশক ব্যবহার করে ঘন ঘন জীবাণুমুক্ত করতে হবে; (৩) চাষের এলাকায় জৈব-নিরাপত্তা কঠোরভাবে বজায় রাখতে হবে এবং বাজার থেকে কেনা নতুন পাখিকে সুস্থ পাখি থেকে আলাদাভাবে রাখতে হবে; (৪) আক্রান্ত মৃত পাখি মাটির নিচে চাপা দেওয়া উচিত। এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মনে রাখতে হবে ‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম’। তাই এই রোগ প্রতিরোধের জন্য যথাযথ টিকাদান অপরিহার্য। [হোসেন মো. সেলিম এবং সিরাজুল হক]