যুব উন্নয়ন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''যুব উন্নয়ন'''  বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩০% যুবক, যাদের বয়স ১৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এই দলভুক্ত বয়সের প্রায় ৭৫% গ্রামে বাস করে। যুবকরা জনসংখ্যার এক কর্মকুশল অংশ এবং সংগঠিত যুবকরা সমাজে আনতে পারে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। যুবকদের কল্যাণ এবং পথনির্দেশনা ও শিক্ষাদান, প্রশিক্ষণ ও চাকরিদান এসবই যুব উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
'''যুব উন্নয়ন''' বলতে বোঝানো হয় দিক-নির্দেশনা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে যুবকল্যাণ সাধন করা। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ যুবা, যাদের বয়স ১৫ হতে ৩০ বছরের মধ্যে। এই শ্রেণিভুক্ত মানুষের প্রায় ৭০ শতাংশ গ্রামে বাস করে। তবে জাতীয় যুবনীতি ২০১৭ অনুযায়ী যুবাদের বয়স ১৮ হতে ৩৫ বছরের মধ্যে। যুবারা জনসংখ্যার এক কর্মকুশল অংশ এবং সংগঠিত হয়ে তারা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে।


১৯৯১ সালে দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪০% ছিল যুবক। এর মধ্যে পুরুষ ৩৬.৭% এবং মহিলা ৪৫.৮%। শ্রমশক্তির সবচেয়ে উদ্যমী, সৃজনশীল, গতিশীল এবং উদ্ভাবনীমূলক অংশ এই যুবগোষ্ঠী অতীতে বিশেষ শ্রেণি হিসেবে বিবেচিত না হওয়ায় সরকার এক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে নি। ১৯৭৮ সালে সরকার যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয় নামে এক নতুন মন্ত্রণালয় গঠন করে যা পরে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাথে অঙ্গীভূত হয়েছে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর (DYD) ১৯৮০ সালের ডিসেম্বর মাসে গঠন করা হয় এবং এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮১ সালের মার্চ মাসে। এই অধিদপ্তর সরকারের যুব উন্নয়ন কার্যক্রমে লাভজনক কর্মসংস্থান এবং আয় সৃষ্টির সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেকারদের জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। দেশের মোট যুবকদের প্রায় অর্ধেকই দারিদ্র্যহেতু এবং যথেষ্ট দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের অভাবে বেকার বা অর্ধনিয়োজিত বলে ধারণা করা হয়। সুতরাং বেশিরভাগ যুবক অবস্থান করে যুব উন্নয়ন কাঠামোর মূলধারার বাইরে। বাংলাদেশ সরকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য দক্ষতা সৃষ্টি এবং কতিপয় ঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
১৯৯১ সালে দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশ ছিল যুবক। এর মধ্যে পুরুষ ৩৬.৭ শতাংশ এবং নারী ৪৫.৮ শতাংশ। শ্রমশক্তির সবচেয়ে উদ্যমী, সৃজনশীল, গতিশীল এবং উদ্ভাবনীমূলক অংশ এই যুবগোষ্ঠী অতীতে বিশেষ শ্রেণি হিসেবে বিবেচিত না হওয়ায় এক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। ১৯৭৮ সালে সরকার যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয় নামে এক নতুন মন্ত্রণালয় গঠন করে, যা পরে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়েছে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর (DYD) ১৯৮০ সালের ডিসেম্বর মাসে গঠন করা হয়, এবং এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮১ সালের মার্চ মাসে। এই অধিদপ্তর সরকারের যুব উন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে লাভজনক কর্মসংস্থান এবং আয় সৃষ্টির সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেকারদের জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে আসছে। দেশের মোট যুবকদের প্রায় অর্ধেকই দারিদ্রের কারণে এবং যথেষ্ট দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের অভাবে বেকার বা আধা-নিয়োজিত বলে ধারণা করা হয়। সুতরাং বেশিরভাগ যুবা যুব উন্নয়ন কাঠামোর মূলধারার বাইরে অবস্থান করছে। বাংলাদেশ সরকার যুবাদের আত্মকর্মসংস্থানের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য দক্ষতা সৃষ্টি এবং কতিপয় ঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে এসেছে। 


বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৭৩-৭৮) যুব উন্নয়নের জন্য সমন্বিত কৌশল গ্রহণ করে। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা যুবনিবাস এবং যুবকল্যাণ কেন্দ্রের মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যুবকদের জন্য কিছু সীমিত সমাজকল্যাণ সম্পৃক্ত সেবা প্রদান করে। দ্বি-বার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৭৮-৮০) যুব উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য ৯৫ মিলিয়ন টাকার সমপরিমাণ বরাদ্দ করা হয়। এর মধ্য থেকে ৭০.১ মিলিয়ন টাকা ব্যবহার করা হয়েছে। পরিকল্পিত সময়ে (২ বছর) ৪২,২৫৫ জন বেকার যুবককে প্রশিক্ষিত করার ভৌত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে প্রকৃতপক্ষে ৩৬,২০০ জন প্রশিক্ষিত হয়। দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৮০-৮৫) যুব উন্নয়ন কার্যক্রমে বরাদ্দ ছিল ২৬০ মিলিয়ন টাকা, যার মধ্যে ১৯৬ মিলিয়ন টাকা ব্যবহূত হয়। প্রায় ৪২,০০০ বেকার প্রশিক্ষণ লাভ করে বিভিন্ন বৃত্তি ও পেশায় নিয়োজিত হয় এবং পরিকল্পিত সময়ে ২,৯৯৯ জন যুবক আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্প গ্রহণ করে। তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৮৫-৯০) যুব উন্নয়ন কার্যক্রম চালু রাখার জন্য ১৭০ মিলিয়ন টাকা বরাদ্দ করে। আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে যুবকদের দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে থানা সম্পদ উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান প্রকল্প (TRDEP) শিরোনামে একটি নতুন প্রকল্প ১৯৮৮ সালের জুলাই মাসে ৭৬০ মিলিয়ন টাকার অধিক বাজেট বরাদ্দ নিয়ে শুরু হয়। তৃতীয় পরিকল্পনাকালে যুব উন্নয়ন কার্যক্রমের অধীনে ৪৩,৯৩৫ জন বেকার যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় এবং পরিকল্পিত সময়ের শেষে ৯৭.৭% লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়।
বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৭৩-৭৮) যুব উন্নয়নের জন্য সমন্বিত কৌশল গ্রহণ করা হয়েছিল। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় যুবনিবাস এবং যুবকল্যাণ কেন্দ্রের মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যুবাদের জন্য সীমিত আকারে কিছু সমাজকল্যাণ সেবা প্রদান করা হয়। দ্বি-বার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৭৮-৮০) যুব উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য ৯৫ মিলিয়ন টাকার সমপরিমাণ বরাদ্দ রাখা হয়। এর মধ্য হতে ৭০.১ মিলিয়ন টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। পরিকল্পিত সময়ে (২ বছর) ৪২,২৫৫ জন বেকার যুবককে প্রশিক্ষিত করার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যে বাস্তবে ৩৬,২০০ জন যুবা প্রশিক্ষিত হয়। দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৮০-৮৫) যুব উন্নয়ন কার্যক্রমে বরাদ্দ ছিল ২৬০ মিলিয়ন টাকা, যার মধ্যে ১৯৬ মিলিয়ন টাকা ব্যবহৃত হয়েছিল। প্রায় ৪২,০০০ বেকার প্রশিক্ষণ লাভ করে বিভিন্ন বৃত্তি ও পেশায় নিয়োজিত হয়, এবং পরিকল্পনার মেয়াদকালে ২,৯৯৯ জন যুবক আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্প গ্রহণ করে। তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৮৫-৯০) যুব উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ১৭০ মিলিয়ন টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে যুবাদের দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে থানা সম্পদ উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান প্রকল্প (TRDEP) শিরোনামে একটি নতুন প্রকল্প ১৯৮৮ সালের জুলাই মাসে ৭৬০ মিলিয়ন টাকার অধিক বরাদ্দ নিয়ে যাত্রা শুরু করে। তৃতীয় পরিকল্পনাকালে যুব উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় ৪৩,৯৩৫ জন বেকার যুবাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, এবং পরিকল্পিত সময়ের শেষে ৯৭.৭ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়।


চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৯০-৯৫) যুব উন্নয়ন কার্যক্রম স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠনের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধি, দারিদ্র্য দূরীকরণ, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং সমাজ উন্নয়নের পরিকল্পনা করে। এসব কার্যকলাপ বাস্তবায়নের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে ১.৬ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ করা হয়। পরিকল্পিত সময়ে বিভিন্ন পেশায় ৩,৫৮,৭০১ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় এবং ৩,০৪,৩৮৮ জন প্রকৃতপক্ষে প্রশিক্ষিত হয়। প্রশিক্ষিত যুবকদের মধ্যে  [[ক্ষুদ্রঋণ|ক্ষুদ্রঋণ]] সুবিধা সম্প্রসারণ করাই ছিল এ সময়ের যুব উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। পরিকল্পিত সময়ে ৩০৬.৯ মিলিয়ন টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতায় ৩২টি থানায় TRDEP বিস্তৃত করা হয়। সুফলভোগীদের মোট সংখ্যা ছিল ১,৯২,০০০ এবং এদের প্রত্যেককে ক্ষুদ্রঋণ নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়। পরিকল্পিত সময়ে TRDEP-এর সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে ১.২৫ বিলিয়ন টাকার ঋণ তহবিল নিয়ে ৫০টি নির্বাচিত থানায় পরিবারভিত্তিক কর্মসংস্থান কার্যক্রম গৃহীত হয়। গ্রামের যুবকদের পশুপালন, মৎস্যচাষ ও বৃক্ষরোপণে প্রশিক্ষণ এবং সাক্ষরতা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, পরিবার কল্যাণ, পরিবেশ উন্নয়ন, সম্পদ সংরক্ষণ প্রভৃতি সামাজিক-অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্তকরণে উদ্বুদ্ধ করার জন্য আবাসিক ভিত্তিতে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বিস্তৃত করা হয় ৬ থেকে ১০ জেলায়। তাছাড়া ভূমিহীন গ্রামীণ সুবিধাভোগীদের বিভিন্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে প্রশিক্ষিত করার জন্য ৩টি বিভাগীয় সদর দফতরে ৩টি আঞ্চলিক সম্পদ সংরক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। যুব কর্মকান্ড ৩১টি জেলার ৫০টি থানা থেকে বিস্তৃত করা হয় ৬৪টি জেলার ২৩০টি থানায়।
চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৯০-৯৫) যুব উন্নয়ন কার্যক্রমে স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠনের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধি, দারিদ্র্য দূরীকরণ, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, এবং সমাজ উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে ১.৬ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। পরিকল্পিত সময়ে বিভিন্ন পেশায় ৩,৫৮,৭০১ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়; কিন্তু বাস্তবে ৩,০৪,৩৮৮ জনকে প্রশিক্ষিত করা হয়। প্রশিক্ষিত যুবকদের মধ্যে [[ক্ষুদ্রঋণ|ক্ষুদ্রঋণ]] সুবিধা সম্প্রসারণ করাই ছিল এ সময়ের যুব উন্নয়ন কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। পরিকল্পিত সময়ে ৩০৬.৯ মিলিয়ন টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। এ সময়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতায় ৩২টি থানায় TRDEP বিস্তৃত করা হয়। সুফলভোগীদের মোট সংখ্যা ছিল ১,৯২,০০০ এবং এদের প্রত্যেককে ক্ষুদ্রঋণ নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়। পরিকল্পিত সময়ে TRDEP-এর সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে পরবর্তীকালে ১.২৫ বিলিয়ন টাকার ঋণ তহবিল নিয়ে ৫০টি নির্বাচিত থানায় পরিবারভিত্তিক কর্মসংস্থান কার্যক্রম গৃহীত হয়। গ্রামের যুবাদের পশুপালন, মৎস্যচাষ ও বৃক্ষরোপণে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং সাক্ষরতালাভ, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, পরিবার কল্যাণ, পরিবেশ উন্নয়ন, সম্পদ সংরক্ষণ প্রভৃতি আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্তকরণে উদ্বুদ্ধ করার জন্য আবাসিক ভিত্তিতে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ৬ থেকে ১০ জেলায় স্থাপন করা হয়। তাছাড়া ভূমিহীন গ্রামীণ সুবিধাভোগীদের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ডে প্রশিক্ষিত করার জন্য ৩টি বিভাগীয় সদর দপ্তরে ৩টি আঞ্চলিক সম্পদ সংরক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। যুব কর্মকা- ৩১টি জেলার ৫০টি থানা হতে ৬৪টি জেলার ২৩০টি থানায় বিস্তৃত করা হয়


সরকারের যুব উন্নয়ন কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হচ্ছে উদ্বুদ্ধকরণ, দক্ষতা প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্রঋণ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান যোগানোর মাধ্যমে যুবকদের লাভজনক আত্মকর্মসংস্থান গ্রহণে উৎসাহদান, কর্মদক্ষতায় উৎকর্ষ সাধনের জন্য সুযোগ-সুবিধা বিস্তার এবং কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও পেশাগত ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান। পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৯৭-২০০২) যুব উন্নয়ন কার্যক্রমে বরাদ্দ ছিল ৬.২৮ বিলিয়ন টাকা এবং বণ্টন করা হয়েছে ৯টি নতুন প্রকল্পে ৪ বিলিয়ন, TRDEP-এ ১.৫ বিলিয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ০.২৫ বিলিয়ন, প্রশিক্ষিত যুবকদের জন্য আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে ০.২০ বিলিয়ন, স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠনের মাধ্যমে মানব উন্নয়নে ০.১৫ বিলিয়ন, যুবসংঘের মাধ্যমে জনসংখ্যা এবং পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে ০.০৩ বিলিয়ন, আত্মকর্মসংস্থানে কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ শিক্ষিত যুবকদের সম্পৃক্তকরণ/জাতীয় সামাজিক সেবায় ০.১৫ বিলিয়ন টাকা।
সরকারের যুব উন্নয়ন কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হচ্ছে উদ্বুদ্ধকরণ, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্রঋণ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান জোগানোর মাধ্যমে যুবাদের লাভজনক আত্মকর্মসংস্থানে উৎসাহদান, কর্মদক্ষতায় উৎকর্ষ সাধনের জন্য সুযোগ-সুবিধার বিস্তার, এবং কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও পেশাগত ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান। পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৯৭-২০০২) যুব উন্নয়ন কার্যক্রমে বরাদ্দ ছিল ৬.২৮ বিলিয়ন টাকা। এর মাধ্যমে বণ্টন করা হয়েছিল: ৯টি নতুন প্রকল্পে ৪ বিলিয়ন টাকা, TRDEP-এ ১.৫ বিলিয়ন টাকা, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ০.২৫ বিলিয়ন টাকা, প্রশিক্ষিত যুবকদের জন্য আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে ০.২০ বিলিয়ন টাকা, স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠনের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নে ০.১৫ বিলিয়ন টাকা, যুবসংঘের মাধ্যমে জনসংখ্যা এবং পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে ০.০৩ বিলিয়ন টাকা, এবং আত্মকর্মসংস্থানে কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ শিক্ষিত যুবাদের সম্পৃক্তকরণ/জাতীয় সামাজিক সেবায় ০.১৫ বিলিয়ন টাকা।


সরকারের যুব উন্নয়ন কার্যক্রম এখন ৪৮০টি উপজেলায় বিস্তৃত হয়েছে। DYD গ্রামাঞ্চলের বেকার যুবকদের পশুপালন, হাঁসমুরগি পালন এবং মৎস্যচাষে আবাসিক প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। ৬৪টি জেলায় ৩০০’রও অধিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিবছর বিভিন্ন পেশায় ২,৫০,০০০ জন বেকার যুবককে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বৃত্তিগুলি হচ্ছে কম্পিউটার, বৈদ্যুতিক তার সংযোগকরণ, রেফ্রিজারেশন, গৃহাদির শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ, বৈদ্যুতিক উপকরণ মেরামত প্রভৃতি। যুবসংঘের মাধ্যমে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। এসবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে গ্রামের নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ, দারিদ্র্য দূরীকরণ, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পরিচর্যা এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চহারের প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ১৯৮১ সাল থেকে ডিসেম্বর ২০০৮ মেয়াদে মোট ৩ মিলিয়ন ৯৪ হাজার ৯৪৯ জন যুবক ও যুবমহিলাকে দক্ষতাবৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এদের মধ্যে ১.৭৩ মিলিয়নেরও অধিক আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছে। [হেলাল উদ্দিন আহমেদ]
সরকারের ভিশন-২০২১-এর আলোকে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১১-১৫) যুবাদের জন্য জাতীয় সার্ভিস কর্মসূচি চালু করা হয়। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১৬-২০) যুব উন্নয়নের কৌশলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল প্রশিক্ষণ ও চাকরি-বাজারের সংযোগ উন্নততর করা; প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ; মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ বরাদ্দ। বর্তমান পরিকল্পনা মেয়াদে অন্তর্ভুক্ত আছে: ১.৯০ মিলিয়নেরও অধিক সংখ্যক যুবাকে প্রশিক্ষণ প্রদান, যাদের মধ্যে ৫৯৬ হাজার স্বকর্মসংস্থানে নিয়োজিত হবে; এবং জাতীয় সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় অস্থায়ী কর্মসংস্থানের জন্য ৭৫ হাজার যুবাকে প্রশিক্ষণ প্রদান।  


[[en:Youth Development]]
সরকারের যুব উন্নয়ন কার্যক্রম এখন ৪৮৬টি উপজেলায় বিস্তৃত হয়েছে। DYD গ্রামাঞ্চলের বেকার যুবকদের তথ্যপ্রযুক্তি, পশুপালন, হাঁসমুরগি পালন এবং মৎস্যচাষে আবাসিক প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। ৬৪টি জেলায় ৩০০'রও অধিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিবছর বিভিন্ন পেশায় লক্ষ লক্ষ বেকার যুবককে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বৃত্তিগুলি হলো: কম্পিউটার প্রযুক্তি, বৈদ্যুতিক তার সংযোগকরণ, রেফ্রিজারেশন, আবাসিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিক উপকরণ মেরামত, প্রভৃতি। যুবসংঘের মাধ্যমেও বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। এসবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে গ্রামে নারীদের ক্ষমতায়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ, দারিদ্র্য দূরীকরণ, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পরিচর্যা, এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চহারের খারাপ প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি।


[[en:Youth Development]]
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ১৯৮১ সাল হতে ফেব্রুয়ারি ২০২০ সময়কালে মোট ৬ মিলিয়ন ৩০ হাজার ৭৬৭ জন যুবক ও যুবমহিলাকে দক্ষতাবৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। এদের মধ্যে ২.২০ মিলিয়নেরও অধিক আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছে।  [হেলাল উদ্দিন আহমেদ]
 
[[en:Youth Development]]


[[en:Youth Development]]
[[en:Youth Development]]

১৩:৩৯, ২০ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

যুব উন্নয়ন বলতে বোঝানো হয় দিক-নির্দেশনা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে যুবকল্যাণ সাধন করা। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ যুবা, যাদের বয়স ১৫ হতে ৩০ বছরের মধ্যে। এই শ্রেণিভুক্ত মানুষের প্রায় ৭০ শতাংশ গ্রামে বাস করে। তবে জাতীয় যুবনীতি ২০১৭ অনুযায়ী যুবাদের বয়স ১৮ হতে ৩৫ বছরের মধ্যে। যুবারা জনসংখ্যার এক কর্মকুশল অংশ এবং সংগঠিত হয়ে তারা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে।

১৯৯১ সালে দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশ ছিল যুবক। এর মধ্যে পুরুষ ৩৬.৭ শতাংশ এবং নারী ৪৫.৮ শতাংশ। শ্রমশক্তির সবচেয়ে উদ্যমী, সৃজনশীল, গতিশীল এবং উদ্ভাবনীমূলক অংশ এই যুবগোষ্ঠী অতীতে বিশেষ শ্রেণি হিসেবে বিবেচিত না হওয়ায় এক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। ১৯৭৮ সালে সরকার যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয় নামে এক নতুন মন্ত্রণালয় গঠন করে, যা পরে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়েছে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর (DYD) ১৯৮০ সালের ডিসেম্বর মাসে গঠন করা হয়, এবং এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮১ সালের মার্চ মাসে। এই অধিদপ্তর সরকারের যুব উন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে লাভজনক কর্মসংস্থান এবং আয় সৃষ্টির সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেকারদের জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে আসছে। দেশের মোট যুবকদের প্রায় অর্ধেকই দারিদ্রের কারণে এবং যথেষ্ট দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের অভাবে বেকার বা আধা-নিয়োজিত বলে ধারণা করা হয়। সুতরাং বেশিরভাগ যুবা যুব উন্নয়ন কাঠামোর মূলধারার বাইরে অবস্থান করছে। বাংলাদেশ সরকার যুবাদের আত্মকর্মসংস্থানের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য দক্ষতা সৃষ্টি এবং কতিপয় ঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে এসেছে।

বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৭৩-৭৮) যুব উন্নয়নের জন্য সমন্বিত কৌশল গ্রহণ করা হয়েছিল। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় যুবনিবাস এবং যুবকল্যাণ কেন্দ্রের মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যুবাদের জন্য সীমিত আকারে কিছু সমাজকল্যাণ সেবা প্রদান করা হয়। দ্বি-বার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৭৮-৮০) যুব উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য ৯৫ মিলিয়ন টাকার সমপরিমাণ বরাদ্দ রাখা হয়। এর মধ্য হতে ৭০.১ মিলিয়ন টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। পরিকল্পিত সময়ে (২ বছর) ৪২,২৫৫ জন বেকার যুবককে প্রশিক্ষিত করার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যে বাস্তবে ৩৬,২০০ জন যুবা প্রশিক্ষিত হয়। দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৮০-৮৫) যুব উন্নয়ন কার্যক্রমে বরাদ্দ ছিল ২৬০ মিলিয়ন টাকা, যার মধ্যে ১৯৬ মিলিয়ন টাকা ব্যবহৃত হয়েছিল। প্রায় ৪২,০০০ বেকার প্রশিক্ষণ লাভ করে বিভিন্ন বৃত্তি ও পেশায় নিয়োজিত হয়, এবং পরিকল্পনার মেয়াদকালে ২,৯৯৯ জন যুবক আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্প গ্রহণ করে। তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৮৫-৯০) যুব উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ১৭০ মিলিয়ন টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে যুবাদের দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে থানা সম্পদ উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান প্রকল্প (TRDEP) শিরোনামে একটি নতুন প্রকল্প ১৯৮৮ সালের জুলাই মাসে ৭৬০ মিলিয়ন টাকার অধিক বরাদ্দ নিয়ে যাত্রা শুরু করে। তৃতীয় পরিকল্পনাকালে যুব উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় ৪৩,৯৩৫ জন বেকার যুবাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, এবং পরিকল্পিত সময়ের শেষে ৯৭.৭ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়।

চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৯০-৯৫) যুব উন্নয়ন কার্যক্রমে স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠনের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধি, দারিদ্র্য দূরীকরণ, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, এবং সমাজ উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে ১.৬ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। পরিকল্পিত সময়ে বিভিন্ন পেশায় ৩,৫৮,৭০১ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়; কিন্তু বাস্তবে ৩,০৪,৩৮৮ জনকে প্রশিক্ষিত করা হয়। প্রশিক্ষিত যুবকদের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ সুবিধা সম্প্রসারণ করাই ছিল এ সময়ের যুব উন্নয়ন কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। পরিকল্পিত সময়ে ৩০৬.৯ মিলিয়ন টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। এ সময়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতায় ৩২টি থানায় TRDEP বিস্তৃত করা হয়। সুফলভোগীদের মোট সংখ্যা ছিল ১,৯২,০০০ এবং এদের প্রত্যেককে ক্ষুদ্রঋণ নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়। পরিকল্পিত সময়ে TRDEP-এর সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে পরবর্তীকালে ১.২৫ বিলিয়ন টাকার ঋণ তহবিল নিয়ে ৫০টি নির্বাচিত থানায় পরিবারভিত্তিক কর্মসংস্থান কার্যক্রম গৃহীত হয়। গ্রামের যুবাদের পশুপালন, মৎস্যচাষ ও বৃক্ষরোপণে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং সাক্ষরতালাভ, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, পরিবার কল্যাণ, পরিবেশ উন্নয়ন, সম্পদ সংরক্ষণ প্রভৃতি আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্তকরণে উদ্বুদ্ধ করার জন্য আবাসিক ভিত্তিতে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ৬ থেকে ১০ জেলায় স্থাপন করা হয়। তাছাড়া ভূমিহীন গ্রামীণ সুবিধাভোগীদের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ডে প্রশিক্ষিত করার জন্য ৩টি বিভাগীয় সদর দপ্তরে ৩টি আঞ্চলিক সম্পদ সংরক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। যুব কর্মকা- ৩১টি জেলার ৫০টি থানা হতে ৬৪টি জেলার ২৩০টি থানায় বিস্তৃত করা হয় ।

সরকারের যুব উন্নয়ন কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হচ্ছে উদ্বুদ্ধকরণ, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্রঋণ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান জোগানোর মাধ্যমে যুবাদের লাভজনক আত্মকর্মসংস্থানে উৎসাহদান, কর্মদক্ষতায় উৎকর্ষ সাধনের জন্য সুযোগ-সুবিধার বিস্তার, এবং কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও পেশাগত ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান। পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৯৭-২০০২) যুব উন্নয়ন কার্যক্রমে বরাদ্দ ছিল ৬.২৮ বিলিয়ন টাকা। এর মাধ্যমে বণ্টন করা হয়েছিল: ৯টি নতুন প্রকল্পে ৪ বিলিয়ন টাকা, TRDEP-এ ১.৫ বিলিয়ন টাকা, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ০.২৫ বিলিয়ন টাকা, প্রশিক্ষিত যুবকদের জন্য আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে ০.২০ বিলিয়ন টাকা, স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠনের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নে ০.১৫ বিলিয়ন টাকা, যুবসংঘের মাধ্যমে জনসংখ্যা এবং পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে ০.০৩ বিলিয়ন টাকা, এবং আত্মকর্মসংস্থানে কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ শিক্ষিত যুবাদের সম্পৃক্তকরণ/জাতীয় সামাজিক সেবায় ০.১৫ বিলিয়ন টাকা।

সরকারের ভিশন-২০২১-এর আলোকে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১১-১৫) যুবাদের জন্য জাতীয় সার্ভিস কর্মসূচি চালু করা হয়। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১৬-২০) যুব উন্নয়নের কৌশলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল প্রশিক্ষণ ও চাকরি-বাজারের সংযোগ উন্নততর করা; প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ; মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ বরাদ্দ। বর্তমান পরিকল্পনা মেয়াদে অন্তর্ভুক্ত আছে: ১.৯০ মিলিয়নেরও অধিক সংখ্যক যুবাকে প্রশিক্ষণ প্রদান, যাদের মধ্যে ৫৯৬ হাজার স্বকর্মসংস্থানে নিয়োজিত হবে; এবং জাতীয় সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় অস্থায়ী কর্মসংস্থানের জন্য ৭৫ হাজার যুবাকে প্রশিক্ষণ প্রদান।

সরকারের যুব উন্নয়ন কার্যক্রম এখন ৪৮৬টি উপজেলায় বিস্তৃত হয়েছে। DYD গ্রামাঞ্চলের বেকার যুবকদের তথ্যপ্রযুক্তি, পশুপালন, হাঁসমুরগি পালন এবং মৎস্যচাষে আবাসিক প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। ৬৪টি জেলায় ৩০০'রও অধিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিবছর বিভিন্ন পেশায় লক্ষ লক্ষ বেকার যুবককে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বৃত্তিগুলি হলো: কম্পিউটার প্রযুক্তি, বৈদ্যুতিক তার সংযোগকরণ, রেফ্রিজারেশন, আবাসিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিক উপকরণ মেরামত, প্রভৃতি। যুবসংঘের মাধ্যমেও বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। এসবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে গ্রামে নারীদের ক্ষমতায়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ, দারিদ্র্য দূরীকরণ, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পরিচর্যা, এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চহারের খারাপ প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ১৯৮১ সাল হতে ফেব্রুয়ারি ২০২০ সময়কালে মোট ৬ মিলিয়ন ৩০ হাজার ৭৬৭ জন যুবক ও যুবমহিলাকে দক্ষতাবৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। এদের মধ্যে ২.২০ মিলিয়নেরও অধিক আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছে। [হেলাল উদ্দিন আহমেদ]