কৃষিবনায়ন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''কৃষিবনায়ন''' (Agroforestry)'''  '''কৃষি ও বনের সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে জমির ব্যবহার। এর প্রধান উদ্দেশ্য ফসলের সঙ্গে বৃক্ষ বা অনুরূপ কোনো দ্রুতবর্ধনশীল উদ্ভিদ জন্মানো। কৃষিবনায়ন উদ্যান, বন ও পশুপালন কার্যক্রমসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষি কাজের জন্য একই জমির যুগপৎ ব্যবহারের একটি গুরুত্বপূর্ণ টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা কৌশল। কখনও কখনও এটা সামাজিক বনায়ন ও বসতবাড়ির বনায়নের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। একটি সনাতন প্রথা হলেও জমি, অঞ্চল ও প্রতিবেশ অবস্থানুযায়ী এ পদ্ধতিকে আরও বাস্তবসম্মত ও গতিশীল মডেলে পরিণত করা যায়। মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ ছাড়াও কৃষিবনায়ন কোনো স্থানের প্রতিবেশে ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। খাদ্য সমস্যার সমাধানে, মরুকরণরোধে, পল্লি ও শহরতলি উন্নয়নে, বনসংরক্ষণ ও কর্মসংস্থান সম্পর্কিত জাতীয় সমস্যা নিরসনের একটি আর্থ-সামাজিক উদ্যোগ হিসেবে এবং বিভিন্ন ভূমিস্তরের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহারের জন্যই কৃষিবনায়ন আবশ্যক। কৃষিবনায়ন পদ্ধতি বনজ বৃক্ষ ও ফসল উদ্ভিদের মধ্যে পারস্পরিক বিকাশের সুযোগ ঘটিয়ে প্রাকৃতিক সুস্থিতি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
'''কৃষিবনায়ন''' (Agroforestry)'''   কৃষি ও বনের সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে জমির ব্যবহার। এর প্রধান উদ্দেশ্য ফসলের সঙ্গে বৃক্ষ বা অনুরূপ কোনো দ্রুতবর্ধনশীল উদ্ভিদ জন্মানো। কৃষিবনায়ন উদ্যান, বন ও পশুপালন কার্যক্রমসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষি কাজের জন্য একই জমির যুগপৎ ব্যবহারের একটি গুরুত্বপূর্ণ টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা কৌশল। কখনও কখনও এটা সামাজিক বনায়ন ও বসতবাড়ির বনায়নের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। একটি সনাতন প্রথা হলেও জমি, অঞ্চল ও প্রতিবেশ অবস্থানুযায়ী এ পদ্ধতিকে আরও বাস্তবসম্মত ও গতিশীল মডেলে পরিণত করা যায়। মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ ছাড়াও কৃষিবনায়ন কোনো স্থানের প্রতিবেশে ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। খাদ্য সমস্যার সমাধানে, মরুকরণরোধে, পল্লি ও শহরতলি উন্নয়নে, বনসংরক্ষণ ও কর্মসংস্থান সম্পর্কিত জাতীয় সমস্যা নিরসনের একটি আর্থ-সামাজিক উদ্যোগ হিসেবে এবং বিভিন্ন ভূমিস্তরের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহারের জন্যই কৃষিবনায়ন আবশ্যক। কৃষিবনায়ন পদ্ধতি বনজ বৃক্ষ ও ফসল উদ্ভিদের মধ্যে পারস্পরিক বিকাশের সুযোগ ঘটিয়ে প্রাকৃতিক সুস্থিতি বজায় রাখতে সাহায্য করে।


বাংলাদেশে কৃষিবনায়ন চর্চা মোটামুটি ব্যাপক হলেও এর ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত নিম্নমানের। বৃক্ষের নির্বাচন এবং রোপণকৌশল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যেমন তেমনভাবে সম্পন্ন হয়, অথচ বসতবাড়ির চারপাশে জন্মানো গাছপালার ওপরই দেশ অনেকাংশে নির্ভরশীল। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত নগরায়ণ ও অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফলে কৃষিবনায়ন ব্যবস্থা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। অনেক সময়ে নতুন গাছ না লাগিয়েই বছরে বসতবাড়ির গাছপালার প্রায় ১০% কেটে ফেলা হয়। সম্প্রতি কৃষিজমির আশেপাশে আরও অধিক পরিমাণে বিভিন্ন জাতের গাছ লাগানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে কয়েকটি প্রজাতি উপযুক্ত বিবেচিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে বাবলা,  [[খয়ের|খয়ের]], খেজুর,  [[কাঁঠাল|কাঁঠাল]], তাল, ও  [[আম|আম]] প্রধান এবং শিমুল, সাদা শিমুল,  [[নারিকেল|নারিকেল]],  [[সুপারি]],  [[লিচু|লিচু]] ও কয়েক ধরনের বাঁশ হলো অপ্রধান বৃক্ষ যেগুলি  [[ফল|ফল]], দামি কাঠ, জ্বালানি, গৃহনির্মাণ সরঞ্জামের মতো কিছু অর্থকরী সামগ্রীর জন্য সমতলে ফসলের জমির পাশেও লাগানো যায়। তিস্তার বন্যাবিধৌত উঁচু সমতলে  [[নিম|নিম]], আম, খয়ের, শিশু, কাঁঠাল এবং কয়েক প্রজাতির বাঁশ লাগানোর সুপারিশ করা হয়েছে। কৃষিবনায়নের ধারণা বর্তমানে বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।  [মোস্তফা কামাল পাশা]
বাংলাদেশে কৃষিবনায়ন চর্চা মোটামুটি ব্যাপক হলেও এর ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত নিম্নমানের। বৃক্ষের নির্বাচন এবং রোপণকৌশল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যেমন তেমনভাবে সম্পন্ন হয়, অথচ বসতবাড়ির চারপাশে জন্মানো গাছপালার ওপরই দেশ অনেকাংশে নির্ভরশীল। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত নগরায়ণ ও অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফলে কৃষিবনায়ন ব্যবস্থা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। অনেক সময়ে নতুন গাছ না লাগিয়েই বছরে বসতবাড়ির গাছপালার প্রায় ১০% কেটে ফেলা হয়। সম্প্রতি কৃষিজমির আশেপাশে আরও অধিক পরিমাণে বিভিন্ন জাতের গাছ লাগানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে কয়েকটি প্রজাতি উপযুক্ত বিবেচিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে বাবলা,  [[খয়ের|খয়ের]], খেজুর,  [[কাঁঠাল|কাঁঠাল]], তাল, ও  [[আম|আম]] প্রধান এবং শিমুল, সাদা শিমুল,  [[নারিকেল|নারিকেল]],  [[সুপারি]],  [[লিচু|লিচু]] ও কয়েক ধরনের বাঁশ হলো অপ্রধান বৃক্ষ যেগুলি  [[ফল|ফল]], দামি কাঠ, জ্বালানি, গৃহনির্মাণ সরঞ্জামের মতো কিছু অর্থকরী সামগ্রীর জন্য সমতলে ফসলের জমির পাশেও লাগানো যায়। তিস্তার বন্যাবিধৌত উঁচু সমতলে  [[নিম|নিম]], আম, খয়ের, শিশু, কাঁঠাল এবং কয়েক প্রজাতির বাঁশ লাগানোর সুপারিশ করা হয়েছে। কৃষিবনায়নের ধারণা বর্তমানে বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।  [মোস্তফা কামাল পাশা]


আরও দেখুন [[বন ও বনবিজ্ঞান|বন ও বনবিজ্ঞান]]; [[বসতবাড়ির গাছগাছালি|বসতবাড়ির গাছগাছালি]]; [[সামাজিক বনায়ন|সামাজিক বনায়ন]]।
''আরও দেখুন''  [[বন ও বনবিজ্ঞান|বন ও বনবিজ্ঞান]]; [[বসতবাড়ির গাছগাছালি|বসতবাড়ির গাছগাছালি]]; [[সামাজিক বনায়ন|সামাজিক বনায়ন]]।


[[en:Agroforestry]]
[[en:Agroforestry]]

০৭:২৫, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

কৃষিবনায়ন (Agroforestry) কৃষি ও বনের সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে জমির ব্যবহার। এর প্রধান উদ্দেশ্য ফসলের সঙ্গে বৃক্ষ বা অনুরূপ কোনো দ্রুতবর্ধনশীল উদ্ভিদ জন্মানো। কৃষিবনায়ন উদ্যান, বন ও পশুপালন কার্যক্রমসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষি কাজের জন্য একই জমির যুগপৎ ব্যবহারের একটি গুরুত্বপূর্ণ টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা কৌশল। কখনও কখনও এটা সামাজিক বনায়ন ও বসতবাড়ির বনায়নের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। একটি সনাতন প্রথা হলেও জমি, অঞ্চল ও প্রতিবেশ অবস্থানুযায়ী এ পদ্ধতিকে আরও বাস্তবসম্মত ও গতিশীল মডেলে পরিণত করা যায়। মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ ছাড়াও কৃষিবনায়ন কোনো স্থানের প্রতিবেশে ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। খাদ্য সমস্যার সমাধানে, মরুকরণরোধে, পল্লি ও শহরতলি উন্নয়নে, বনসংরক্ষণ ও কর্মসংস্থান সম্পর্কিত জাতীয় সমস্যা নিরসনের একটি আর্থ-সামাজিক উদ্যোগ হিসেবে এবং বিভিন্ন ভূমিস্তরের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহারের জন্যই কৃষিবনায়ন আবশ্যক। কৃষিবনায়ন পদ্ধতি বনজ বৃক্ষ ও ফসল উদ্ভিদের মধ্যে পারস্পরিক বিকাশের সুযোগ ঘটিয়ে প্রাকৃতিক সুস্থিতি বজায় রাখতে সাহায্য করে।

বাংলাদেশে কৃষিবনায়ন চর্চা মোটামুটি ব্যাপক হলেও এর ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত নিম্নমানের। বৃক্ষের নির্বাচন এবং রোপণকৌশল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যেমন তেমনভাবে সম্পন্ন হয়, অথচ বসতবাড়ির চারপাশে জন্মানো গাছপালার ওপরই দেশ অনেকাংশে নির্ভরশীল। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত নগরায়ণ ও অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফলে কৃষিবনায়ন ব্যবস্থা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। অনেক সময়ে নতুন গাছ না লাগিয়েই বছরে বসতবাড়ির গাছপালার প্রায় ১০% কেটে ফেলা হয়। সম্প্রতি কৃষিজমির আশেপাশে আরও অধিক পরিমাণে বিভিন্ন জাতের গাছ লাগানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে কয়েকটি প্রজাতি উপযুক্ত বিবেচিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে বাবলা,  খয়ের, খেজুর,  কাঁঠাল, তাল, ও  আম প্রধান এবং শিমুল, সাদা শিমুল,  নারিকেলসুপারিলিচু ও কয়েক ধরনের বাঁশ হলো অপ্রধান বৃক্ষ যেগুলি  ফল, দামি কাঠ, জ্বালানি, গৃহনির্মাণ সরঞ্জামের মতো কিছু অর্থকরী সামগ্রীর জন্য সমতলে ফসলের জমির পাশেও লাগানো যায়। তিস্তার বন্যাবিধৌত উঁচু সমতলে  নিম, আম, খয়ের, শিশু, কাঁঠাল এবং কয়েক প্রজাতির বাঁশ লাগানোর সুপারিশ করা হয়েছে। কৃষিবনায়নের ধারণা বর্তমানে বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।  [মোস্তফা কামাল পাশা]

আরও দেখুন বন ও বনবিজ্ঞান; বসতবাড়ির গাছগাছালি; সামাজিক বনায়ন