অ-নবায়নযোগ্য শক্তি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''অ-নবায়নযোগ্য শক্তি''' (Non-renewable Energy) নবায়ন করা যায় না এমন জ্বালানি বা শক্তি। ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের শক্তিসম্পদের মজুত কমতে থাকে এবং সঞ্চয় সীমিত হওয়ার দরুন তা একসময় নিঃশেষ হয়ে যায়। সকল প্রকার জীবাশ্ম জ্বালানি এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। | '''অ-নবায়নযোগ্য শক্তি''' (Non-renewable Energy) নবায়ন করা যায় না এমন জ্বালানি বা শক্তি। ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের শক্তিসম্পদের মজুত কমতে থাকে এবং সঞ্চয় সীমিত হওয়ার দরুন তা একসময় নিঃশেষ হয়ে যায়। সকল প্রকার জীবাশ্ম জ্বালানি এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। | ||
জীবাশ্ম জ্বালানিসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ [[প্রাকৃতিক গ্যাস|প্রাকৃতিক গ্যাস]] সম্পদে সমৃদ্ধ। যদিও বাংলাদেশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এ শক্তিসম্পদের প্রকৃত মজুত এখনও সুস্পষ্ট নয়, [[পেট্রোবাংলা|পেট্রোবাংলা]]-র বিশেষজ্ঞগণের মতে বাংলাদেশে এ যাবতকালে আবিষ্কৃত সর্বমোট ২৩টি গ্যাস ক্ষেত্রে উত্তোলনযোগ্য [প্রমাণিত সম্ভাব্য] প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিমাণ প্রায় ২১.০৫ টি.সি.এফ। এর মধ্যে ২০০৯ সনের জুন মাস পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৮.৩৭ টি.সি.এফ। অর্থাৎ অবশিষ্ট উত্তোলনযোগ্য প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুতের পরিমাণ ১২.৬৮ টি,সি.এফ। ২০০৯-১০ অর্থ বছরে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ছিল প্রায় ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ধারণা করা হচ্ছে এ হার বেড়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা দাঁড়াবে ৪৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটে। পেট্রোবাংলা থেকে দেয়া তথ্য অনুযায়ী সম্ভাব্য মজুতসমূহকেও যদি উত্তোলনযোগ্য করে তোলা যায় তাতেও প্রাকৃতিক গ্যাসের যে পরিমাণ দাঁড়াবে চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তা কোনোভাবেই ২০১৫ সনের পরে আর সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে যে সমস্ত জ্বালানি ব্যবহার করা হয়ে থাকে তার শতকরা ৭৫ ভাগই হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। তাই খুব শীঘ্রই নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার এবং গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করা না গেলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে কঠিন জ্বালানি সংকটের মুখোমুখি হতে হবে। উত্তোলনযোগ্য প্রকৃত মজুতের পরিমাণ এর প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। দেশের পেট্রোলিয়াম চাহিদার অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। | জীবাশ্ম জ্বালানিসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ [[প্রাকৃতিক গ্যাস|প্রাকৃতিক গ্যাস]] সম্পদে সমৃদ্ধ। যদিও বাংলাদেশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এ শক্তিসম্পদের প্রকৃত মজুত এখনও সুস্পষ্ট নয়, [[পেট্রোবাংলা|পেট্রোবাংলা]]-র বিশেষজ্ঞগণের মতে বাংলাদেশে এ যাবতকালে আবিষ্কৃত সর্বমোট ২৩টি গ্যাস ক্ষেত্রে উত্তোলনযোগ্য [প্রমাণিত সম্ভাব্য] প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিমাণ প্রায় ২১.০৫ টি.সি.এফ। এর মধ্যে ২০০৯ সনের জুন মাস পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৮.৩৭ টি.সি.এফ। অর্থাৎ অবশিষ্ট উত্তোলনযোগ্য প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুতের পরিমাণ ১২.৬৮ টি,সি.এফ। ২০০৯-১০ অর্থ বছরে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ছিল প্রায় ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ধারণা করা হচ্ছে এ হার বেড়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা দাঁড়াবে ৪৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটে। পেট্রোবাংলা থেকে দেয়া তথ্য অনুযায়ী সম্ভাব্য মজুতসমূহকেও যদি উত্তোলনযোগ্য করে তোলা যায় তাতেও প্রাকৃতিক গ্যাসের যে পরিমাণ দাঁড়াবে চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তা কোনোভাবেই ২০১৫ সনের পরে আর সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে যে সমস্ত জ্বালানি ব্যবহার করা হয়ে থাকে তার শতকরা ৭৫ ভাগই হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। তাই খুব শীঘ্রই নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার এবং গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করা না গেলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে কঠিন জ্বালানি সংকটের মুখোমুখি হতে হবে। উত্তোলনযোগ্য প্রকৃত মজুতের পরিমাণ এর প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। দেশের পেট্রোলিয়াম চাহিদার অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। | ||
বিভিন্ন ধরনের [[পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ|পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ]] ভিন্ন ভিন্ন খাতে ব্যবহার করা হয়। এদের মধ্যে ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল এবং অকটেন বহুল ব্যবহূত। এল.পি গ্যাস লিমিটেড নামক কোম্পানি কর্তৃক বাজারজাতকৃত | বিভিন্ন ধরনের [[পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ|পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ]] ভিন্ন ভিন্ন খাতে ব্যবহার করা হয়। এদের মধ্যে ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল এবং অকটেন বহুল ব্যবহূত। এল.পি গ্যাস লিমিটেড নামক কোম্পানি কর্তৃক বাজারজাতকৃত [[তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস|তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস]] (LPG)-এ প্রোপেন ও বুটেনের পরিমাণ সর্বাধিক। রান্নার জন্য জ্বালানি হিসেবে এ তরল গ্যাস খুবই জনপ্রিয় এবং মোটরযানেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ১৯৭৮-৭৯ সালে [[চট্টগ্রাম জেলা|চট্টগ্রামে]] প্রথম এল.পি.জি বোতলজাতকরণ প্ল্যান্ট নির্মিত হয়। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে নির্মিত হয় আরও একটি প্ল্যান্ট। প্ল্যান্ট দু’টি একত্রে ৬২ মে টন এলপিজি এবং ২৭০,০০০ লিটার মোটর স্পিরিট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন। তবে কাঁচামালের স্বল্পতার কারণে বর্তমানে প্ল্যান্ট দু’টি থেকে ১৬ মে টন এল.পি.জি এবং ১০২,০০০ লিটার মোটর স্পিরিট উৎপাদন হচ্ছে। তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস থেকে হাইড্রোজেন সালফাইড সম্পূর্ণ দূর করার জন্য এবং সালফারের অন্যান্য গঠন সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য সীমার নিচে রাখার জন্য একটি বিশেষ ইউনিট (LPG Sweetening Unit) স্থাপন করা হয়। এল.পি গ্যাসের অধিক চাহিদাসম্পন্ন এলাকাগুলিতে গ্যাস সংরক্ষণ সুবিধাবিশিষ্ট এল.পি.জি বলয় স্থাপন করা হয়। ১৯৯৭-৯৮ সালে এল.পি গ্যাস লিমিটেড তিনটি তেল বাজারজাতকরণ কোম্পানির মাধ্যমে সর্বমোট ১০৬.১০ কোটি সিলিন্ডার এল.পি গ্যাস বাজারজাত করে যার প্রতিটি সিলিন্ডারে ছিল ১২.৫ কিলোগ্রাম তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস। | ||
অপরদিকে, ১৯৯৮ সালে সিলেটের কৈলাস টিলায় তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের মজুত, বোতলজাতকরণ এবং বিতরণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এল.পি গ্যাস লিমিটেড এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিবছর অতিরিক্ত ৫,০০০ মে টন এল.পি গ্যাস বোতলজাত করে তেল বাজারজাতকরণ কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বাজারজাত করে। বর্তমানে উপযোক্ত দুটি | অপরদিকে, ১৯৯৮ সালে সিলেটের কৈলাস টিলায় তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের মজুত, বোতলজাতকরণ এবং বিতরণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এল.পি গ্যাস লিমিটেড এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিবছর অতিরিক্ত ৫,০০০ মে টন এল.পি গ্যাস বোতলজাত করে তেল বাজারজাতকরণ কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বাজারজাত করে। বর্তমানে উপযোক্ত দুটি প্ল্যান্ট থেকে এল.পি গ্যাস লিমিটেড বার্ষিক মোট ২১,০০০ মে টন গ্যাস বোতলজাত করছে। এল.পি গ্যাসের বর্তমান চাহিদা বছরে প্রায় ৩,৩৫,০০০ মে টন। বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা মোট চাহিদার মাত্র ৮ শতাংশ মেটাতে সক্ষম হচ্ছে। এল.পি গ্যাসের বর্ধিত চাহিদা মেটানোর জন্য সরকার এল.পি গ্যাস আমদানির নীতি গ্রহণ করেছে। মোটামুটিভাবে ৬০,০০০ মে টন এল.পি গ্যাস আমদানি ও বোতলজাতকরণের জন্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান এল.পি.জি প্ল্যান্টকে ধীরে ধীরে ২০ লক্ষ টন বোতলজাতকরণ ক্ষমতাসম্পন্ন প্ল্যান্টে উন্নীত করার পরিকল্পনা সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। সরকারের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তা দেশের জনগণের ব্যাপক উপকার বয়ে আনবে, বিশেষ করে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাসকারী জনগণে উপকৃত হবে। জ্বালানি কাঠের ব্যবহার অনেক হ্রাস পাবে এবং বৃক্ষ নিধনরোধ হলে তা [[পরিবেশ|পরিবেশ]] ভারসাম্য রক্ষায়ও সহায়তা করবে। ইতোমধ্যে বসুন্ধরা এল.পি গ্যাস লিমিটেড নামে একটি দেশিয় কোম্পানি বিদেশ থেকে এল.পি গ্যাস আমদানি শুরু করেছে এবং খুলনার মংলায় স্থাপিত বোতলজাতকরণ প্ল্যান্ট থেকে গ্যাস বোতলজাত করে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বাজারজাত করছে। | ||
কয়লা ১৯৫০ এর দশক পর্যন্ত বিশ্বে জৈব রাসায়নিক কাঁচামালের প্রাথমিক উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। বিশেষত বিশ শতকে জ্বালানি শক্তির প্রাথমিক উৎস হিসেবে কয়লার সিংহভাগ ভূমিকা ছিল। ২০০৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হতে বড় পুকুরিয়া ভূগর্ভস্থ কয়লাখনি থেকে বাণিজ্যিকভাবে [[কয়লা|কয়লা]] উৎপাদন শুরু হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে উৎপাদিত কয়লার পরিমাণ ছিল ০.৮৬ মিলিয়ন মে টন। এ কয়লার বৃহত্তর অংশ খনির সম্মুখে অবস্থিত ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন প্ল্যান্টে ব্যবহূত হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক | কয়লা ১৯৫০ এর দশক পর্যন্ত বিশ্বে জৈব রাসায়নিক কাঁচামালের প্রাথমিক উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। বিশেষত বিশ শতকে জ্বালানি শক্তির প্রাথমিক উৎস হিসেবে কয়লার সিংহভাগ ভূমিকা ছিল। ২০০৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হতে বড় পুকুরিয়া ভূগর্ভস্থ কয়লাখনি থেকে বাণিজ্যিকভাবে [[কয়লা|কয়লা]] উৎপাদন শুরু হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে উৎপাদিত কয়লার পরিমাণ ছিল ০.৮৬ মিলিয়ন মে টন। এ কয়লার বৃহত্তর অংশ খনির সম্মুখে অবস্থিত ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন প্ল্যান্টে ব্যবহূত হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক ফুলবাড়ীতে একটি উন্মুক্ত কয়লাখনি স্থাপনের প্রস্তাব রয়েছে। বাংলাদেশের ৫টি কয়লাক্ষেত্রে মোট মজুদ প্রায় ২৭০০ মিলিয়ন টন। বাংলাদেশে আবিষ্কৃত ও উত্তোলিত কয়লার বৃহত্তর অংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেহেতু বাংলাদেশের প্রধান জ্বালানি সম্পদের মজুদ সীমিত তাই সরকারের উচিত যত শীঘ্র সম্ভব কয়লানীতি চূড়ান্তকরণের মাধ্যমে অন্যান্য কয়লাক্ষেত্রগুলো থেকে উৎপাদনের ব্যবস্থা করা। | ||
''সারণি'' ১ বাংলাদেশের কয়লা মজুদ। | ''সারণি'' ১ বাংলাদেশের কয়লা মজুদ। | ||
২৭ নং লাইন: | ২৭ নং লাইন: | ||
| দিঘীপাড়া (দিনাজপুর) || ১৯৯৫ || ২০৫ || ২০০ || --- | | দিঘীপাড়া (দিনাজপুর) || ১৯৯৫ || ২০৫ || ২০০ || --- | ||
|- | |- | ||
| | | ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) || ১৯৯৭ || ১৫২-২৪৬ || ৩৮০ || উন্মুক্ত খনি পদ্ধতি প্রস্তাবিত | ||
|} | |} | ||
দিনাজপুর জেলার দীঘিপাড়াতে যে কয়লাখনি আবিষ্কার হয়েছে তার মজুত এখনও হিসাব করা হয় নি। [রফিকুল ইসলাম] | দিনাজপুর জেলার দীঘিপাড়াতে যে কয়লাখনি আবিষ্কার হয়েছে তার মজুত এখনও হিসাব করা হয় নি। [রফিকুল ইসলাম] | ||
[[en:Non-renewable Energy]] | [[en:Non-renewable Energy]] |
০৬:১৪, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
অ-নবায়নযোগ্য শক্তি (Non-renewable Energy) নবায়ন করা যায় না এমন জ্বালানি বা শক্তি। ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের শক্তিসম্পদের মজুত কমতে থাকে এবং সঞ্চয় সীমিত হওয়ার দরুন তা একসময় নিঃশেষ হয়ে যায়। সকল প্রকার জীবাশ্ম জ্বালানি এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
জীবাশ্ম জ্বালানিসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পদে সমৃদ্ধ। যদিও বাংলাদেশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এ শক্তিসম্পদের প্রকৃত মজুত এখনও সুস্পষ্ট নয়, পেট্রোবাংলা-র বিশেষজ্ঞগণের মতে বাংলাদেশে এ যাবতকালে আবিষ্কৃত সর্বমোট ২৩টি গ্যাস ক্ষেত্রে উত্তোলনযোগ্য [প্রমাণিত সম্ভাব্য] প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিমাণ প্রায় ২১.০৫ টি.সি.এফ। এর মধ্যে ২০০৯ সনের জুন মাস পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৮.৩৭ টি.সি.এফ। অর্থাৎ অবশিষ্ট উত্তোলনযোগ্য প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুতের পরিমাণ ১২.৬৮ টি,সি.এফ। ২০০৯-১০ অর্থ বছরে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ছিল প্রায় ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ধারণা করা হচ্ছে এ হার বেড়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা দাঁড়াবে ৪৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটে। পেট্রোবাংলা থেকে দেয়া তথ্য অনুযায়ী সম্ভাব্য মজুতসমূহকেও যদি উত্তোলনযোগ্য করে তোলা যায় তাতেও প্রাকৃতিক গ্যাসের যে পরিমাণ দাঁড়াবে চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তা কোনোভাবেই ২০১৫ সনের পরে আর সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে যে সমস্ত জ্বালানি ব্যবহার করা হয়ে থাকে তার শতকরা ৭৫ ভাগই হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। তাই খুব শীঘ্রই নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার এবং গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করা না গেলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে কঠিন জ্বালানি সংকটের মুখোমুখি হতে হবে। উত্তোলনযোগ্য প্রকৃত মজুতের পরিমাণ এর প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। দেশের পেট্রোলিয়াম চাহিদার অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে।
বিভিন্ন ধরনের পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ ভিন্ন ভিন্ন খাতে ব্যবহার করা হয়। এদের মধ্যে ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল এবং অকটেন বহুল ব্যবহূত। এল.পি গ্যাস লিমিটেড নামক কোম্পানি কর্তৃক বাজারজাতকৃত তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (LPG)-এ প্রোপেন ও বুটেনের পরিমাণ সর্বাধিক। রান্নার জন্য জ্বালানি হিসেবে এ তরল গ্যাস খুবই জনপ্রিয় এবং মোটরযানেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ১৯৭৮-৭৯ সালে চট্টগ্রামে প্রথম এল.পি.জি বোতলজাতকরণ প্ল্যান্ট নির্মিত হয়। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে নির্মিত হয় আরও একটি প্ল্যান্ট। প্ল্যান্ট দু’টি একত্রে ৬২ মে টন এলপিজি এবং ২৭০,০০০ লিটার মোটর স্পিরিট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন। তবে কাঁচামালের স্বল্পতার কারণে বর্তমানে প্ল্যান্ট দু’টি থেকে ১৬ মে টন এল.পি.জি এবং ১০২,০০০ লিটার মোটর স্পিরিট উৎপাদন হচ্ছে। তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস থেকে হাইড্রোজেন সালফাইড সম্পূর্ণ দূর করার জন্য এবং সালফারের অন্যান্য গঠন সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য সীমার নিচে রাখার জন্য একটি বিশেষ ইউনিট (LPG Sweetening Unit) স্থাপন করা হয়। এল.পি গ্যাসের অধিক চাহিদাসম্পন্ন এলাকাগুলিতে গ্যাস সংরক্ষণ সুবিধাবিশিষ্ট এল.পি.জি বলয় স্থাপন করা হয়। ১৯৯৭-৯৮ সালে এল.পি গ্যাস লিমিটেড তিনটি তেল বাজারজাতকরণ কোম্পানির মাধ্যমে সর্বমোট ১০৬.১০ কোটি সিলিন্ডার এল.পি গ্যাস বাজারজাত করে যার প্রতিটি সিলিন্ডারে ছিল ১২.৫ কিলোগ্রাম তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস।
অপরদিকে, ১৯৯৮ সালে সিলেটের কৈলাস টিলায় তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের মজুত, বোতলজাতকরণ এবং বিতরণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এল.পি গ্যাস লিমিটেড এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিবছর অতিরিক্ত ৫,০০০ মে টন এল.পি গ্যাস বোতলজাত করে তেল বাজারজাতকরণ কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বাজারজাত করে। বর্তমানে উপযোক্ত দুটি প্ল্যান্ট থেকে এল.পি গ্যাস লিমিটেড বার্ষিক মোট ২১,০০০ মে টন গ্যাস বোতলজাত করছে। এল.পি গ্যাসের বর্তমান চাহিদা বছরে প্রায় ৩,৩৫,০০০ মে টন। বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা মোট চাহিদার মাত্র ৮ শতাংশ মেটাতে সক্ষম হচ্ছে। এল.পি গ্যাসের বর্ধিত চাহিদা মেটানোর জন্য সরকার এল.পি গ্যাস আমদানির নীতি গ্রহণ করেছে। মোটামুটিভাবে ৬০,০০০ মে টন এল.পি গ্যাস আমদানি ও বোতলজাতকরণের জন্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান এল.পি.জি প্ল্যান্টকে ধীরে ধীরে ২০ লক্ষ টন বোতলজাতকরণ ক্ষমতাসম্পন্ন প্ল্যান্টে উন্নীত করার পরিকল্পনা সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। সরকারের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তা দেশের জনগণের ব্যাপক উপকার বয়ে আনবে, বিশেষ করে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাসকারী জনগণে উপকৃত হবে। জ্বালানি কাঠের ব্যবহার অনেক হ্রাস পাবে এবং বৃক্ষ নিধনরোধ হলে তা পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায়ও সহায়তা করবে। ইতোমধ্যে বসুন্ধরা এল.পি গ্যাস লিমিটেড নামে একটি দেশিয় কোম্পানি বিদেশ থেকে এল.পি গ্যাস আমদানি শুরু করেছে এবং খুলনার মংলায় স্থাপিত বোতলজাতকরণ প্ল্যান্ট থেকে গ্যাস বোতলজাত করে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বাজারজাত করছে।
কয়লা ১৯৫০ এর দশক পর্যন্ত বিশ্বে জৈব রাসায়নিক কাঁচামালের প্রাথমিক উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। বিশেষত বিশ শতকে জ্বালানি শক্তির প্রাথমিক উৎস হিসেবে কয়লার সিংহভাগ ভূমিকা ছিল। ২০০৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হতে বড় পুকুরিয়া ভূগর্ভস্থ কয়লাখনি থেকে বাণিজ্যিকভাবে কয়লা উৎপাদন শুরু হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে উৎপাদিত কয়লার পরিমাণ ছিল ০.৮৬ মিলিয়ন মে টন। এ কয়লার বৃহত্তর অংশ খনির সম্মুখে অবস্থিত ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন প্ল্যান্টে ব্যবহূত হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক ফুলবাড়ীতে একটি উন্মুক্ত কয়লাখনি স্থাপনের প্রস্তাব রয়েছে। বাংলাদেশের ৫টি কয়লাক্ষেত্রে মোট মজুদ প্রায় ২৭০০ মিলিয়ন টন। বাংলাদেশে আবিষ্কৃত ও উত্তোলিত কয়লার বৃহত্তর অংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেহেতু বাংলাদেশের প্রধান জ্বালানি সম্পদের মজুদ সীমিত তাই সরকারের উচিত যত শীঘ্র সম্ভব কয়লানীতি চূড়ান্তকরণের মাধ্যমে অন্যান্য কয়লাক্ষেত্রগুলো থেকে উৎপাদনের ব্যবস্থা করা।
সারণি ১ বাংলাদেশের কয়লা মজুদ।
কয়লাক্ষেত্র জেলা | আবিস্কারের সন | কয়লাস্তরের গভীরতা | মজুদ | বর্তমান অবস্থা |
জামালগঞ্জ (জয়পুরহাট) | ১৯৬২ | ৬৪০-১১৫৪ | ১০৫৩ | কয়লা উত্তোলন লাভজনক নয় |
বড়পুকুরিয়া (দিনাজপুর) | ১৯৮৫ | ১১৮-৫০৬ | ৩০৩ | ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন হচ্ছে |
খালাশপীর (রংপুর) | ১৯৮৯ | ২৫৭-৪৫১ | ১৪৭ | --- |
দিঘীপাড়া (দিনাজপুর) | ১৯৯৫ | ২০৫ | ২০০ | --- |
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) | ১৯৯৭ | ১৫২-২৪৬ | ৩৮০ | উন্মুক্ত খনি পদ্ধতি প্রস্তাবিত |
দিনাজপুর জেলার দীঘিপাড়াতে যে কয়লাখনি আবিষ্কার হয়েছে তার মজুত এখনও হিসাব করা হয় নি। [রফিকুল ইসলাম]