খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ২টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়'''  দেশের নবম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। খুলনা শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাশে ১০৬ একর জমির ওপর এই বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। ১৯৭৪ সালে কুদরত-ই-খুদা কমিশনের প্রতিবেদনে খুলনা বিভাগে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের গুরুত্ব প্রথম উত্থাপিত হয়। ১৯৭৯ সালের নভেম্বরে সরকার খুলনায় প্রথম একটি কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু এতদঞ্চলের জনসাধারণের দাবি ওঠে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের। ১৯৮৫ সালে সরকার দুটি কমিটি গঠন করেন ১) জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী কমিটি (শিক্ষা ও প্রশাসনিক কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য) ২) মাহবুবুজ্জামান কমিটি (বিশ্ববিদ্যালয় স্থান নির্ধারণের জন্য)। উভয় কমিটির রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে ১৯৮৭ সালের ৪ জানুয়ারি খুলনায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় এবং একই বছর এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। এরপর জাতীয় সংসদে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯০ পাস হয়।
'''খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়'''  দেশের নবম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। খুলনা শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে ময়ুর নদী সংলগ্ন খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাশে ১০৭.২৭ একর জমির ওপর এই বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। ১৯৭৪ সালে কুদরত-ই-খুদা কমিশনের প্রতিবেদনে খুলনা বিভাগে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের গুরুত্ব প্রথম উত্থাপিত হয়। ১৯৭৯ সালের নভেম্বরে সরকার খুলনায় প্রথম একটি কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু এতদঞ্চলের জনসাধারণের দাবি ওঠে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের। ১৯৮৫ সালে সরকার দুটি কমিটি গঠন করেন ১. জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী কমিটি (শিক্ষা ও প্রশাসনিক কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য) ২. মাহবুবুজ্জামান কমিটি (বিশ্ববিদ্যালয় স্থান নির্ধারণের জন্য)। উভয় কমিটির রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে ১৯৮৭ সালের ৪ জানুয়ারি খুলনায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় এবং একই বছর এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। এরপর জাতীয় সংসদে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯০ পাস হয়।
[[Image:KhulnaUniversityMujibMemorial.jpg|thumb|400px|মুজিবশতবর্ষ ২০২০-২০২১ লক্ষ্যে 'কালজয়ী মুজিব' ম্যূরাল]]
১৯৯১ সালে প্রফেসর ড. গোলাম রহমানকে প্রথম উপাচার্য নিযুক্ত করা হয় এবং একই বছর ৩১ আগষ্ট ৪টি বিভাগে ৮০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে একটি দোতলা ভবনে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হয়। বিভাগগুলি হলো বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা (বিপ্রপ্র) স্কুলের অধীন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল, স্থাপত্য এবং নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিন এবং ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের অধীন ব্যবস্থাপনা ডিসিপ্লিন (পরবর্তীকালে ব্যবসায় প্রশাসন)। ১৯৯২ সালে জীব বিজ্ঞান স্কুলের অধীন ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি এবং মেরিন বায়োলজি (পরবর্তীকালে ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি), ১৯৯৫ সালে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এগ্রোটেকনোলজি, ১৯৯৬ সালে পরিবেশ বিজ্ঞান এবং ১৯৯৮ সালে ফার্মেসি ও মৃত্তিকা বিজ্ঞান (বর্তমানে সয়েল, ওয়াটার এন্ড এনভায়রণমেন্ট) ডিসিপ্লিনসমূহ খোলা হয়।


১৯৯১ সালে প্রফেসর ড. গোলাম রহমানকে প্রথম উপাচার্য নিযুক্ত করা হয় এবং একই বছর ৩১ আগষ্ট ৪টি বিভাগে ৮০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে একটি দোতলা ভবনে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হয়। বিভাগগুলি হলো বিজ্ঞান, প্রকৌশল প্রযুক্তিবিদ্যা (বিপ্রপ্র) স্কুলের অধীন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল, স্থাপত্য এবং নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিন এবং ব্যবস্থাপনা ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের অধীন ব্যবস্থাপনা ডিসিপ্লিন (পরবর্তীকালে ব্যবসায় প্রশাসন)। ১৯৯২ সালে জীব বিজ্ঞান স্কুলের অধীন ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি এবং মেরিন বায়োলজি (পরবর্তীকালে ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি), ১৯৯৫ সালে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এগ্রোটেকনোলজি, ১৯৯৬ সালে পরিবেশ বিজ্ঞান এবং ১৯৯৮ সালে ফার্মেসি ও মৃত্তিকা বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনসমূহ খোলা হয়।  
বিপ্রপ্র স্কুলের অধীন ১৯৯৭ সালে ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৯৯৮ সালে গণিত এবং ২০০৯ সালে পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন বিজ্ঞান ও ২০১১ সালে পরিসংখ্যন ডিসিপ্লিন খোলা হয়। ১৯৯৯ সালে কলা মানবিক স্কুলের অধীন ইংরেজি ডিসিপ্লিন, ২০০৯ সালে বাংলা এবং ২০১৬ সালে হিস্ট্রি এন্ড সিভিলাইজেশন এবং সমাজ বিজ্ঞান স্কুলের অধীন অর্থনীতি এবং ২০০৩ সালে সমাজবিজ্ঞান ২০১১ সালে ডিভেলাপমেন্ট স্টাডিজ এবং ২০১৫ সালে মাস কমিউনিকেশন এবং জার্নালিজম ডিসিপ্লিন চালু করা হয়। ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের অধীন ২০১৬ সালে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট চালু করা হয়। 'ল' স্কুলের অধীনে ২০১৭ সালে ল ডিসিপ্লিন চালু করা হয়।


[[Image:KhulnaUniversityAcademyBhavan.jpg|thumb|right|খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবন]]
খুলনা আর্ট কলেজ (১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত) নামে শতবর্ষ পুরাতন একটি আর্ট শিল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলনাতে চালু ছিলো। ২০০৯ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় উক্ত আর্ট কলেজকে আত্মীকরণ করে ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্টস-এ রূপান্তরিত করে। পরবর্ত্তিতে ২০১৪ সালে ইনস্টিটিউটকে ফাইন আর্টস স্কুল-এ রূপান্তরিত করা হয় এবং বর্তমানে উক্ত স্কুলের অধীন তিনটি ডিসিপ্লিন চালু রয়েছে: ড্রইং এন্ড পেইনটিং, প্রিন্ট মেকিং এবং ভাষ্কর্য ডিসিপ্লিন। ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে এডুকেশন স্কুল যাত্রা শুরু করে; বর্তমানে এর অধীন ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন এন্ড রিসার্স ডিসিপ্লিন চালু রয়েছে।


বিপ্রপ্র স্কুলের অধীন ১৯৯৭ সালে ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৯৯৮ সালে গণিত এবং ২০০৯ সালে পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনসমূহ খোলা হয়। ১৯৯৯ সালে কলা মানবিক স্কুলের অধীন ইংরেজি ডিসিপ্লিন এবং সমাজ বিজ্ঞান স্কুলের অধীন অর্থনীতি ডিসিপ্লিন এবং ২০০৩ সালে সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিন চালু করা হয়। ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের অধীন স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের আওতায় এমবিএ ও ইএমবিএ, উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ প্রোগ্রামের আওতায় বিবিএ টিউটোরিয়াল সেন্টার এবং ১৯৯৫ সাল থেকে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়া কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের আওতায় পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম এবং ইকোনমিক্স ডিসিপ্লিনের আওতায় মাস্টার্স অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ কোর্স চালু রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পোষ্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি প্রদান করে আসছে। কম্পিউটার ও ইংরেজি কোর্স সকল ডিসিপ্লিনের জন্য বাধ্যতামূলক। ২০০১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার এবং সেন্টার ফর ইনটিগ্রেটেড স্টাডিজ অব দি সুন্দরবনস (সিআইএসএস) এবং ২০০৯ সালে ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্টস-এর কাজ শুরু করে। খুলনা সিটি করপোরেশন উইমেন্স কলেজ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। ১৯৯৭ সালের ১০ এপ্রিল প্রথম, ২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় এবং ২০০৫ সালের ১৯ মার্চ তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৩ সালের ৯ মার্চ প্রথম সিনেট সভা এবং ২০০৭ সালের ৯ আগষ্ট দ্বিতীয় সিনেট সভা অনুষ্ঠিত হয়।
[[Image:KhulnaUniversityAdministrativeBuilding.jpg|thumb|left|400px|প্রশাসনিক ভবন]]
বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আটটি স্কুল, একটি ইনস্টিটিউট এসবের অধীনে উনত্রিশটি ডিসিপ্লিন রয়েছে। ২০০১ সালে মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার (এমএলসি) এবং সেন্টার ফর ইনটিগ্রেটেড স্টাডিজ অব দি সুন্দরবনস (সিআইএসএস) চালু করা হয়। ২০১৪ সালে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) ও ২০১৫ সালে সেন্টার অব এক্সিলেন্স ইন টিচিং এন্ড লার্নিং (সিইটিএল) কর্মকাণ্ড শুরু করে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের গবেষণা পরিচালনার জন্য একটি রিসার্চ সেল ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্টাডিজ নামে গবেষণা পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। অধিকন্তু কয়েকটি ডিসিপ্লিন নিজস্ব গবেষণা পত্রিকা প্রকাশ করে থাকে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি কর্মকান্ড নিয়ে প্রকাশিত হয় ত্রৈমাসিক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বার্তা। খুলনা সিটি কর্পোরেশন উইমেন্স কলেজ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম এবং ষষ্ঠ কনভোকেশন অনুষ্ঠিত হয় যখাক্রমে ১৯৯৭, ২০০১, ২০০৫, ২০১০, ২০১৫ ও ২০১৯ সালে। প্রথম ও দ্বিতীয় সিনেট সভা যথাক্রমে ২০০৩ সালের ৯ মার্চ ২০০৭ সালের ৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়। কম্পিউটার, ইংরেজি, বাংলা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কোর্সসমূহ সকল ডিসিপ্লিন কর্তৃক কারিকুলামে অর্ন্তভূক্তি ও পাঠদান বাধ্যতামূলক।
[[Image:KhulnaUniversityCentralLibraryAcademicBuilding.jpg|thumb|400px|কাজী নজরুল ইসলাম কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও ৩য় একাডেমিক ভবন]]
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিশটি আধুনিক গবেষণাগার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কম্পিউটার গবেষণাগার, বিল্ডিং সায়েন্স গবেষণাগার, আধুনিক স্থাপত্য নকশা প্রস্তুতের জন্য একাস্টিক অ্যান্ড লাইটিং গবেষণাগার, বায়োটেকনোলজি গবেষণাগার ও টিস্যুজ কালচার গবেষণাগার রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে সেন্টার ফর জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিষ্টেম (সিজিআইএস), ফটোগ্রামেট্রি অ্যান্ড রিমোট সেনসিং গবেষণাগার, খামার, নার্সারি, ফিল্ড অ্যান্ড ভিলেজ গবেষণাগার, সিসমোগ্রাফ মেশিন এবং কোস্টাল ফিশারিজ রিসার্চ স্টেশন।


খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হল যুগোপযোগী এবং প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা  করা, দেশের স্থায়ী উন্নতির জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু আহরণ, সদ্ব্যবহার ও সংরক্ষণ করা, আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সর্বোচ্চ শিক্ষার মান বজায় রাখা, মৌলিক ব্যবহারিক গবেষণা পরিচালনা করা এবং বৈশ্বিক চাহিদা পূরণের জন্য যোগ্য ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৯ জন বিদেশি ছাত্রছাত্রীসহ ৬,৯৮০ শিক্ষার্থী, ৪৮৭ জন শিক্ষক, ২৯৮ জন কর্মকর্তা ও ৩৪৯ জন কর্মচারি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ এবং ছাত্র-রাজনীতি সেশনজট মুক্ত। শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনার জন্য একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক প্রতি বছর একটি সময়সূচি অনুমোদিত হয়। ক্লাস ১৩ সপ্তাহ, প্রস্তুতিমূলক ছুটি ২ সপ্তাহ, পরীক্ষা ৩ সপ্তাহ এবং ফলাফল প্রকাশের জন্য ৩ সপ্তাহ।
ক্যাম্পাসে ২টি প্রশাসনিক ভবন, ৩টি একাডেমিক ভবন, ৩টি ছাত্রদের ও ২টি ছাত্রীদের জন্য মোট ৫টি আবাসিক হল, ক্যাফিটিরিয়া, অগ্রণী ব্যাংক, ২টি মসজিদ, মুক্তমঞ্চ, শহীদ মিনার, কটকা স্মৃতিসৌধ, পোস্ট অফিস, মুক্তিযুদ্ধ ভাষ্কর্য, মুজিব শতবর্ষ ২০২০-২০২১ লক্ষ্যে কালজয়ী মুজিব ম্যূরাল ইত্যাদি রয়েছে। উপাচার্যের বাসভবনসহ শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য রয়েছে কয়েকটি আবাসিক ভবন।


খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কম্পিউটার গবেষণাগার, বিল্ডিং সায়েন্স গবেষণাগার, আধুনিক স্থাপত্য নকশা প্রস্তুতের জন্য একাস্টিক অ্যান্ড লাইটিং গবেষণাগার, বায়োটেননোলজি গবেষণাগার ও টিস্যুজ কালচার গবেষণাগার রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার ফর জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিষ্টেম (সিজিআইএস), ফটোগ্রামেট্রি অ্যান্ড রিমোট সেনসিং গবেষণাগার, খামার, নার্সারি, ফিল্ড অ্যান্ড ভিলেজ গবেষণাগার, সিসমোগ্রাফ মেশিন এবং কোস্টাল ফিশারিজ রিসার্চ স্টেশন।
১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিসহ রয়েছে শার্লী ইসলাম লাইব্রেরি (প্রয়াত শার্লী ইসলাম বিলেতে বসবাসরত প্রফেসর মোজাহারুল ইসলামের স্ত্রীর স্মৃতি রক্ষার্থে প্রদত্ত অনুদানে নির্মিত)। লাইব্রেরি দুটিতে ৪৫,৫০০ পুস্তক ও ৫,০০০ জার্নাল আছে। লাইব্রেরি দুটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কের আওতায় এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সাথে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘ব্যান্স লিংক’, ‘ব্যান্স ডক’ এবং ইউজিসির ‘বার্নেট’ প্রজেক্ট এর সাথে সম্পৃক্ত।


খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৪,৭০০ শিক্ষার্থীসহ ১২ জন বিদেশি ছাত্রছাত্রী, ৩২২ জন শিক্ষক, ১৪৮ জন কর্মকর্তা ও ১৬৪ জন কর্মচারী রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ এবং ছাত্র-রাজনীতি ও সেশনজট মুক্ত। শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনার জন্য একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক প্রতি বছর একটি সময়সূচি অনুমোদিত হয়। ক্লাস ১৩ সপ্তাহ, প্রস্তুতিমূলক ছুটি ২ সপ্তাহ, পরীক্ষা ৩ সপ্তাহ এবং ফলাফল প্রকাশের জন্য ৩ সপ্তাহ।
বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে ৭ জন পূর্ণকালীন চিকিৎসক, একটি জরুরি বিভাগ, দুটি এ্যাম্বুলেন্স, এক্সরে মেশিন এবং দন্ত বিভাগ রয়েছে। এছাড়া প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষারও ব্যবস্থা রয়েছে।


ক্যাম্পাসে ২টি প্রশাসনিক ভবন, ৩টি একাডেমিক ভবন, ছাত্রছাত্রীদের জন্য ৩টি আবাসিক হল, ক্যাফিটিরিয়া, ব্যাংক, মসজিদ, মুক্তমঞ্চ,  [[শহীদ মিনার|শহীদ মিনার]], কটকা স্মৃতিসৌধ, পোস্ট অফিস ইত্যাদি রয়েছে। উপাচার্যের বাসভবনসহ শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রয়েছে কয়েকটি আবাসিক ভবন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল এবং টেনিস খেলার সুযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা জাতীয় আন্তর্জাতিক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে এবং ছাত্র-ছাত্রীগণ লেখাপড়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকা-ে উৎসাহী। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সাথে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের লিংক প্রোগ্রাম কার্যকরী রয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হল যুগোপযোগী এবং প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা, দেশের স্থায়ী উন্নতির জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠূ আহরণ, সদ্ব্যবহার ও সংরক্ষণ করা, আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সর্বোচ্চ শিক্ষার মান বজায় রাখা, মৌলিক ও ব্যবহারিক গবেষণা পরিচালনা করা এবং বৈশ্বিক চাহিদা পূরণের জন্য যোগ্য ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা।  [গাজী আবদুল্লাহেল বাকী]
 
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিটি বেশ সমৃদ্ধ। লাইব্রেরিতে ৪৫,৫০০ পুস্তক ,০০০ জার্নাল আছে।
 
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের গবেষণা পরিচালনার জন্য একটি রিসার্চ সেল ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্টাডিজ নামে গবেষণা পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। অধিকন্তু কয়েকটি ডিসিপ্লিন নিজস্ব গবেষণা পত্রিকা প্রকাশ করে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি কর্মকান্ড নিয়ে প্রকাশিত হয় ত্রৈমাসিক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বার্তা।
 
বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে ৭ জন পূর্ণকালীন চিকিৎসক, একটি জরুরি বিভাগ, দুটি এ্যাম্বুলেন্স, এক্সরে মেশিন এবং দন্ত বিভাগ রয়েছে। এছাড়া প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষারও ব্যবস্থা রয়েছে।


বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুটবল,  [[ক্রিকেট|ক্রিকেট]], ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল এবং টেনিস খেলার সুযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।  [গাজী আবদুল্লাহেল বাকী]
'''তথ্যসূত্র'''  বজলুল করিম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ২০১২; খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৭-২০১৮, ২৪ নভেম্বর ২০২০।


[[en:University of Khulna]]
[[en:Khulna University]]

১৬:০৯, ১৬ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়  দেশের নবম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। খুলনা শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে ময়ুর নদী সংলগ্ন খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাশে ১০৭.২৭ একর জমির ওপর এই বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। ১৯৭৪ সালে কুদরত-ই-খুদা কমিশনের প্রতিবেদনে খুলনা বিভাগে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের গুরুত্ব প্রথম উত্থাপিত হয়। ১৯৭৯ সালের নভেম্বরে সরকার খুলনায় প্রথম একটি কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু এতদঞ্চলের জনসাধারণের দাবি ওঠে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের। ১৯৮৫ সালে সরকার দুটি কমিটি গঠন করেন ১. জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী কমিটি (শিক্ষা ও প্রশাসনিক কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য) ২. মাহবুবুজ্জামান কমিটি (বিশ্ববিদ্যালয় স্থান নির্ধারণের জন্য)। উভয় কমিটির রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে ১৯৮৭ সালের ৪ জানুয়ারি খুলনায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় এবং একই বছর এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। এরপর জাতীয় সংসদে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯০ পাস হয়।

মুজিবশতবর্ষ ২০২০-২০২১ লক্ষ্যে 'কালজয়ী মুজিব' ম্যূরাল

১৯৯১ সালে প্রফেসর ড. গোলাম রহমানকে প্রথম উপাচার্য নিযুক্ত করা হয় এবং একই বছর ৩১ আগষ্ট ৪টি বিভাগে ৮০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে একটি দোতলা ভবনে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হয়। বিভাগগুলি হলো বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা (বিপ্রপ্র) স্কুলের অধীন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল, স্থাপত্য এবং নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিন এবং ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের অধীন ব্যবস্থাপনা ডিসিপ্লিন (পরবর্তীকালে ব্যবসায় প্রশাসন)। ১৯৯২ সালে জীব বিজ্ঞান স্কুলের অধীন ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি এবং মেরিন বায়োলজি (পরবর্তীকালে ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি), ১৯৯৫ সালে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এগ্রোটেকনোলজি, ১৯৯৬ সালে পরিবেশ বিজ্ঞান এবং ১৯৯৮ সালে ফার্মেসি ও মৃত্তিকা বিজ্ঞান (বর্তমানে সয়েল, ওয়াটার এন্ড এনভায়রণমেন্ট) ডিসিপ্লিনসমূহ খোলা হয়।

বিপ্রপ্র স্কুলের অধীন ১৯৯৭ সালে ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৯৯৮ সালে গণিত এবং ২০০৯ সালে পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন বিজ্ঞান ও ২০১১ সালে পরিসংখ্যন ডিসিপ্লিন খোলা হয়। ১৯৯৯ সালে কলা ও মানবিক স্কুলের অধীন ইংরেজি ডিসিপ্লিন, ২০০৯ সালে বাংলা এবং ২০১৬ সালে হিস্ট্রি এন্ড সিভিলাইজেশন এবং সমাজ বিজ্ঞান স্কুলের অধীন অর্থনীতি এবং ২০০৩ সালে সমাজবিজ্ঞান ২০১১ সালে ডিভেলাপমেন্ট স্টাডিজ এবং ২০১৫ সালে মাস কমিউনিকেশন এবং জার্নালিজম ডিসিপ্লিন চালু করা হয়। ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের অধীন ২০১৬ সালে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট চালু করা হয়। 'ল' স্কুলের অধীনে ২০১৭ সালে ল ডিসিপ্লিন চালু করা হয়।

খুলনা আর্ট কলেজ (১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত) নামে শতবর্ষ পুরাতন একটি আর্ট শিল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলনাতে চালু ছিলো। ২০০৯ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় উক্ত আর্ট কলেজকে আত্মীকরণ করে ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্টস-এ রূপান্তরিত করে। পরবর্ত্তিতে ২০১৪ সালে ইনস্টিটিউটকে ফাইন আর্টস স্কুল-এ রূপান্তরিত করা হয় এবং বর্তমানে উক্ত স্কুলের অধীন তিনটি ডিসিপ্লিন চালু রয়েছে: ড্রইং এন্ড পেইনটিং, প্রিন্ট মেকিং এবং ভাষ্কর্য ডিসিপ্লিন। ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে এডুকেশন স্কুল যাত্রা শুরু করে; বর্তমানে এর অধীন ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন এন্ড রিসার্স ডিসিপ্লিন চালু রয়েছে।

প্রশাসনিক ভবন

বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আটটি স্কুল, একটি ইনস্টিটিউট ও এসবের অধীনে উনত্রিশটি ডিসিপ্লিন রয়েছে। ২০০১ সালে মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার (এমএলসি) এবং সেন্টার ফর ইনটিগ্রেটেড স্টাডিজ অব দি সুন্দরবনস (সিআইএসএস) চালু করা হয়। ২০১৪ সালে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) ও ২০১৫ সালে সেন্টার অব এক্সিলেন্স ইন টিচিং এন্ড লার্নিং (সিইটিএল) কর্মকাণ্ড শুরু করে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের গবেষণা পরিচালনার জন্য একটি রিসার্চ সেল ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্টাডিজ নামে গবেষণা পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। অধিকন্তু কয়েকটি ডিসিপ্লিন নিজস্ব গবেষণা পত্রিকা প্রকাশ করে থাকে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি কর্মকান্ড নিয়ে প্রকাশিত হয় ত্রৈমাসিক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বার্তা। খুলনা সিটি কর্পোরেশন উইমেন্স কলেজ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম এবং ষষ্ঠ কনভোকেশন অনুষ্ঠিত হয় যখাক্রমে ১৯৯৭, ২০০১, ২০০৫, ২০১০, ২০১৫ ও ২০১৯ সালে। প্রথম ও দ্বিতীয় সিনেট সভা যথাক্রমে ২০০৩ সালের ৯ মার্চ ও ২০০৭ সালের ৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়। কম্পিউটার, ইংরেজি, বাংলা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কোর্সসমূহ সকল ডিসিপ্লিন কর্তৃক কারিকুলামে অর্ন্তভূক্তি ও পাঠদান বাধ্যতামূলক।

কাজী নজরুল ইসলাম কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও ৩য় একাডেমিক ভবন

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিশটি আধুনিক গবেষণাগার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কম্পিউটার গবেষণাগার, বিল্ডিং সায়েন্স গবেষণাগার, আধুনিক স্থাপত্য নকশা প্রস্তুতের জন্য একাস্টিক অ্যান্ড লাইটিং গবেষণাগার, বায়োটেকনোলজি গবেষণাগার ও টিস্যুজ কালচার গবেষণাগার রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে সেন্টার ফর জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিষ্টেম (সিজিআইএস), ফটোগ্রামেট্রি অ্যান্ড রিমোট সেনসিং গবেষণাগার, খামার, নার্সারি, ফিল্ড অ্যান্ড ভিলেজ গবেষণাগার, সিসমোগ্রাফ মেশিন এবং কোস্টাল ফিশারিজ রিসার্চ স্টেশন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৯ জন বিদেশি ছাত্রছাত্রীসহ ৬,৯৮০ শিক্ষার্থী, ৪৮৭ জন শিক্ষক, ২৯৮ জন কর্মকর্তা ও ৩৪৯ জন কর্মচারি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ এবং ছাত্র-রাজনীতি ও সেশনজট মুক্ত। শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনার জন্য একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক প্রতি বছর একটি সময়সূচি অনুমোদিত হয়। ক্লাস ১৩ সপ্তাহ, প্রস্তুতিমূলক ছুটি ২ সপ্তাহ, পরীক্ষা ৩ সপ্তাহ এবং ফলাফল প্রকাশের জন্য ৩ সপ্তাহ। ক্যাম্পাসে ২টি প্রশাসনিক ভবন, ৩টি একাডেমিক ভবন, ৩টি ছাত্রদের ও ২টি ছাত্রীদের জন্য মোট ৫টি আবাসিক হল, ক্যাফিটিরিয়া, অগ্রণী ব্যাংক, ২টি মসজিদ, মুক্তমঞ্চ, শহীদ মিনার, কটকা স্মৃতিসৌধ, পোস্ট অফিস, মুক্তিযুদ্ধ ভাষ্কর্য, মুজিব শতবর্ষ ২০২০-২০২১ লক্ষ্যে কালজয়ী মুজিব ম্যূরাল ইত্যাদি রয়েছে। উপাচার্যের বাসভবনসহ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য রয়েছে কয়েকটি আবাসিক ভবন।

১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিসহ রয়েছে শার্লী ইসলাম লাইব্রেরি (প্রয়াত শার্লী ইসলাম বিলেতে বসবাসরত প্রফেসর মোজাহারুল ইসলামের স্ত্রীর স্মৃতি রক্ষার্থে প্রদত্ত অনুদানে নির্মিত)। লাইব্রেরি দুটিতে ৪৫,৫০০ পুস্তক ও ৫,০০০ জার্নাল আছে। লাইব্রেরি দুটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কের আওতায় এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সাথে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘ব্যান্স লিংক’, ‘ব্যান্স ডক’ এবং ইউজিসির ‘বার্নেট’ প্রজেক্ট এর সাথে সম্পৃক্ত।

বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে ৭ জন পূর্ণকালীন চিকিৎসক, একটি জরুরি বিভাগ, দুটি এ্যাম্বুলেন্স, এক্সরে মেশিন এবং দন্ত বিভাগ রয়েছে। এছাড়া প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষারও ব্যবস্থা রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল এবং টেনিস খেলার সুযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে এবং ছাত্র-ছাত্রীগণ লেখাপড়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকা-ে উৎসাহী। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সাথে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের লিংক প্রোগ্রাম কার্যকরী রয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল যুগোপযোগী এবং প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা, দেশের স্থায়ী উন্নতির জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠূ আহরণ, সদ্ব্যবহার ও সংরক্ষণ করা, আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সর্বোচ্চ শিক্ষার মান বজায় রাখা, মৌলিক ও ব্যবহারিক গবেষণা পরিচালনা করা এবং বৈশ্বিক চাহিদা পূরণের জন্য যোগ্য ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা। [গাজী আবদুল্লাহেল বাকী]

তথ্যসূত্র বজলুল করিম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ২০১২; খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৭-২০১৮, ২৪ নভেম্বর ২০২০।