বাবুবাজার

বাবুবাজার  ঢাকা শহরের প্রথম পাইকারি চালের বাজার। এটি ১৯২৫ সালে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বাদামতলীতে স্থাপিত হয়। ঢাকার নবাব পরিবারের খাজা আব্দুল হাফিজ এবং অন্যান্য ব্যবসায়ী বাজারটি স্থাপনের জন্য নদী তীরবর্তী একটি জায়গা সরকারের নিকট থেকে ইজারা গ্রহণ করেন। এই বাজারের প্রথম চাল ব্যবসায়ীদের মধ্যে ছিলেন হাজি মুজাফ্ফার ব্যাপারী ও আলম চান ব্যাপারী। বিশ শতকের ত্রিশের দশকে এই বাজারে সাত থেকে দশটি দোকান ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের সময় ব্রিটিশ সরকার খোলা বাজারে চাল ব্যবসায়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে বাদামতলীতে চালের ব্যবসায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ১৯৫৪ সালে বাংলার যুক্তফ্রন্ট সরকার নিষেধাজ্ঞাটি প্রত্যাহার করে। বাজারটি নিকটবর্তী বাবুবাজার এলাকা পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হয় এবং ১৯৬০ দশকের মাঝামাঝি বাবুবাজার ও বাদামতলী এক হয়ে ঢাকার প্রধান পাইকারি চালের বাজারে পরিণত হয়।

বাবুবাজারে বর্তমানে তিনশত পঞ্চাশটি চালের আড়ত রয়েছে। অধিকাংশ আড়তই অংশীদারী কারবার। কিছু পারিবারিক এবং ব্যক্তি মালিকানায়ও রয়েছে। অতীতে বাবুবাজারে বেশিরভাগ চাল সরবরাহকারী ছিলেন বরিশাল এবং ময়মনসিংহের। প্রায় ৯০% চাল সরবরাহ করা হতো নদীপথে। সত্তর-এর শেষের দিকে বরিশাল চালের ঘাটতি অঞ্চলে পরিণত হয়। এখন বাবুবাজারে সরবরাহের অধিকাংশ আসে দিনাজপুর, রাজশাহী, নওগাঁ, ময়মনসিংহ, জামালপুর এবং শেরপুর থেকে। এর প্রায় ৯০% সরবরাহ হয় ট্রাকে। পাইকাররা নগদে বা বাকিতে চাল ক্রয় করেন এবং নগদে বা কমিশনের ভিত্তিতে ছোট কারবারিদের নিকট বিক্রয় করেন। কিন্তু বাবুবাজারের ব্যবসায়ীরা চাল পুনঃবিক্রয়ের পূর্বে উচ্চ গুণসম্পন্ন, মধ্যম গুণসম্পন্ন ও নিম্ন গুণসম্পন্ন এই তিনটি অংশে ভাগ করেন। তাদের মতে এই বাজারে চালের প্রকার পঞ্চাশটিরও বেশি। বছরে মে থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সর্বাধিক চাল কেনা-বেচা হয়। বাবুবাজারে প্রতিদিন ১৫,০০০ বস্তা থেকে ২০,০০০ বস্তা (প্রতি বস্তা = ৮৪ কেজি) চাল বিক্রয় হয়।  [মো মাসুদুর রহমান]