বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী বাংলাদেশে সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। বাংলাদেশের সকল জেলা ও থানা (বর্তমানে উপজেলা) পর্যায়ে শিল্পকলার চর্চা ও বিকাশের উদ্দেশে সাবেক পাকিস্তান আর্টস কাউন্সিল ভেঙ্গে দিয়ে ১৯৭৪ সালে জাতীয় সংসদের এক বিধিবলে এটি ঢাকার রমনা থানার সেগুনবাগিচায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত।
চারুকলা, সঙ্গীত, নৃত্য ও নাট্যকলার চর্চা ও প্রসারই মূলত এ প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য। এসবের বিকাশের স্বার্থে গুণী শিল্পীদের যথাযথ মূল্যায়ন, যেমন প্রতিভাবান শিল্পীদের সক্রিয় সহায়তা ও স্বীকৃতি প্রদান, সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে অনুদান প্রদান, অতীত ঐতিহ্য ও সমকালীন সংস্কৃতি বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা এবং সঙ্গীত, নাট্য ও চারুকলা বিষয়ে আন্তর্দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উৎসবাদির আয়োজন এই প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়নে করা হয়ে থাকে। এখানে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের অঙ্গ হিসেবে সঙ্গীত-উৎসব, সম্মেলন, সেমিনার, নাট্যানুষ্ঠান, ওয়ার্কশপ, বিতর্কানুষ্ঠান, স্টাডি গ্রুপ পরিচালনা ও সিম্পোজিয়ামের আয়োজন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চিত্রকলা প্রদর্শনী, বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন ও পুরস্কার প্রদান, বিদেশে সরকারি পর্যায়ে বাংলাদেশের শিল্প ও সাংস্কৃতিক দল প্রেরণ ও বিদেশী সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জ্ঞাপন, দেশের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে তাদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কৃত করা এবং শিল্প ও সংস্কৃতিবিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গ্রন্থ, সাময়িকী ও পরিচিতি-জ্ঞাপক স্মরণিকা প্রকাশ ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে।
পাঁচটি বিভাগের মাধ্যমে একাডেমীর যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বিভাগগুলি হচ্ছে: ১. গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগ; ২. অর্থ, হিসাব ও পরিকল্পনা বিভাগ; ৩. চারুকলা বিভাগ; ৪. নাট্যকলা বিভাগ এবং ৫. সঙ্গীত ও নৃত্য বিভাগ। এই পাঁচটি বিভাগ পরিচালিত হয় পাঁচ জন পরিচালকের দায়িত্বে। একাডেমীর সর্বোচ্চ নির্বাহী কর্মকর্তা হচ্ছেন মহাপরিচালক। সরকার কর্তৃক নিযুক্ত এই মহাপরিচালকই সার্বিক প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন।
শিল্পকলা একাডেমীর বিশাল চত্বরে প্রশাসনিক ভবনের পাশাপাশি রয়েছে একটি নবনির্মিত অত্যাধুনিক জাতীয় নাট্যশালা। এটি ২০০১ সালের জুন মাসে উদ্বোধন করা হয়। এখানকার মঞ্চে নাট্যপ্রদর্শনসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। চিত্রকর্ম প্রদর্শনের জন্য রয়েছে একটি গ্যালারি এবং প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য রয়েছে তৎসংলগ্ন বিভিন্ন বিভাগীয় কক্ষ। বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই এর শাখা রয়েছে এবং সেগুলির কর্মতৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রীয় ইউনিট হিসেবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী। উপজেলা পর্যায়েও এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ১৯৯০ থেকে SHILPAKALA নামে একটি বার্ষিক ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশ করছে। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের লালন ও বিকাশে এই একাডেমী প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। [সমবারু চন্দ্র মহন্ত]