হ্যালোফিলস

হ্যালোফিলস (Halophile) একটি গ্রিক শব্দ, যার অর্থ 'লবণ প্রেমী'। যে সব জীব সমুদ্রের চেয়ে বেশি মাত্রার লবণ ঘনত্বের মাঝে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারে তাদেরকে হ্যালোফিলস বলে। এ ধরনের জীব উচ্চমাত্রার লবণযুক্ত পরিবেশে পাওয়া যায়। যেমন: লবণাক্ত পানির হ্রদ, কুয়া, জলাশয় কিংবা লবণাক্ত মাটি। হ্যালোফিলসগুলো হলো অৎপযবধব ডোমেনের কিছু শৈবাল ও ছত্রাক। যেমন: Dunaliella salina এবং এক প্রকার Nitzschia শৈবাল; Wallemia ichthyophaga, Chromohalobacter beijerinckii, Tetragenococcus halophilus ব্যাকটেরিয়া এবং Wallemia ichthyophaga নামক ছত্রাক।

শ্রেণিবিভাগ হ্যালোফিলসকে তাদের লবণ (NaCl) সহনীয়তার পরিমান অনুযায়ী শ্রেণিবদ্ধ করা যায়। যেমন: (১) মৃদু লবণ সহনীয় {সহনমাত্রা ০.২-০.৮৫ মোল (১-৫%) NaCl}; (২) মাঝারি মাত্রার লবণ সহনীয় {সহনমাত্রা ০.৮৫-৩.৪০ মোল (৫-২০%) NaCl} এবং (৩) উচ্চ মাত্রার লবণ সহনীয় {সহনমাত্রা ৪.০০-৫.১০ মোল (২০-৩০%) NaCl}।

অপরদিকে অ-হ্যালোফিলিক অনুজীবগুলি <০.২ M (১%) NaCl এর ঘনত্বে বৃদ্ধি পায়। হ্যালোটলারেন্ট অনুজীবগুলি উচ্চমাত্রার লবণের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি উভয় পরিবেশে জন্মাতে পারে। এ ধরনের জীবগুলো বিভিন্ন ধরনের শক্তির উৎস ব্যবহার করে থাকে। এরা অক্সিজেনযুক্ত বা অক্সিজেনবিহীন উভয় পরিবেশে জন্মাতে পারে।

গুরুত্ব বিভিন্ন ধরনের লবণাক্ত খাবার (যেমন: সয়াসস, চাইনিজ সীম বীজ, লবণাক্ত কডমাছ, লবণাক্ত এনকোভি, সয়ারক্রাউট ইত্যাদি) এর গাজঁনে প্রায়ই অপরিহার্য উপাদান হিসেবে হ্যালোফিলসকে যোগ করা হয়। এর একটি উদাহরণ হলো লবণদ্রবনে সংরক্ষিত সীম বীজ এবং লবণে সংরক্ষিত হেরিং মাছে Chromohalobacter beijerinckii ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি। তাছাড়া লবণে সংরক্ষিত এনকোভি এবং সয়াসসে Tetragenococcus halophilus পাওয়া যায়। এ ধরনের জীবগুলো বিস্তৃত পরিসরের লবণ ঘনত্বে বৃদ্ধি পেতে পারে বলে তাদেরকে জৈব জ্বালানি উৎপাদনের সেরা উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হ্যালোফিলস উৎপন্ন এনজাইমগুলো লবণের খুব উচ্চঘনত্বে (পটাসিয়াম ক্লোরাইড এর ঘনত্ব ∼৪ মোল এবং সোডিয়াম ক্লোরাইড এর ঘনত্ব ∼৫ মোল এর বেশি) ক্রিয়াশীল থাকে বলে জৈব জ্বালানি উৎপাদনের সময় এনজাইমের প্রভাব বৃদ্ধির জন্য এদের ব্যাবহার করা হয়। [মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী]