হেলথ হ্যাজার্ড

হেলথ হ্যাজার্ড (Health Hazard) বলতে ক্ষতির সম্ভাব্য উৎসকে বোঝায়, আর যে হ্যাজার্ড কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে তাকে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত করে তাকে হেলথ হ্যাজার্ড বলে। হেলথ হ্যাজার্ড ভৌত, রাসায়নিক বা জৈবিক কোনো উপাদান হতে পারে, যার সংস্পর্শে এসে তৎক্ষনাৎ কোনো মারাত্মক প্রভাব না পড়লেও পরিমাপযোগ্য (শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ) বা অপরিমাপযোগ্য (নির্দিষ্ট কোনো অনুভূতি) লক্ষণ ও উপসর্গের প্রকাশ পায়। এই ৩টি শ্রেণির বাইরেও বর্তমানে আরো ২ ধরনের হেলথ হ্যাজার্ড অত্যন্ত সাধারণ বলে বিবেচিত, বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে; যার মধ্যে রয়েছে এর্গোনোমিক বা কর্মদক্ষতা সম্পর্কিত হ্যাজার্ড (উদাঃ ভার উত্তোলন এবং পুনরাবৃত্ত গতি) এবং সাইকোলজিকাল বা আচরণগত হ্যাজার্ড (উদাঃ বুলিং) যা দুশ্চিন্তা, চাপ, ভয় এবং হতাশা সৃষ্টি করে। কিছুক্ষেত্রে হেলথ হ্যাজার্ড সেফটি হ্যাজার্ডের অনুরুপ যা কোনো রোগের পরিবর্তে তাৎক্ষণিক ক্ষতের সৃষ্টি করে। আবার কিছু হেলথ হ্যাজার্ড সহজেই পরীক্ষার মাধ্যমে সনাক্ত ও নির্ণয় করা যায়, তবে কিছু অদৃশ্য হেলথ হ্যাজার্ড রয়েছে যেগুলো দৃষ্টির অগোচরে থাকে বা প্রাথমিকভাবে হেলথ হ্যাজার্ড বলে মনে হয় না। ভৌত হেলথ হ্যাজার্ডের মধ্যে রয়েছে শব্দ, কম্পাংক, তাপমাত্রা (বেশি কিংবা কম), চাপ, তেজস্ক্রিয়তা (আয়নাইজিং বা নন-আয়নাইজিং), বৈদ্যুতিক শক্তি ইত্যাদি। রাসায়নিক হেলথ হ্যাজার্ডের মধ্যে রাসায়নিক পদার্থ (কঠিন, তরল বা গ্যাসীয়) যা নিউরোটক্সিন, কার্সিনোজেন (ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ), ডার্মাটোলজিক এজেন্ট (চর্মরোগ সংক্রান্ত উপাদান), রিপ্রোডাক্টিভ টক্সিন, বিভিন্ন সংবেদনশীল পদার্থ, নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী পদার্থ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এসকল ঝুঁকি বাড়িতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে কিংবা সমাজে দেখা দিতে পারে। রাসায়নিক হেলথ হ্যাজার্ডের সংস্পর্শে আসার সবচেয়ে সাধারণ পথ হচ্ছে শ্বাসগ্রহণের মাধ্যমে, যদিও কিছুক্ষেত্রে তা প্রত্যক্ষ স্পর্শ বা খাদ্য-পানীয় গ্রহণের মাধ্যমেও হয়ে থাকে। অপরদিকে বায়োলজিকাল হ্যাজার্ডের উৎপত্তি হয় কোনো জৈবিক পদার্থ থেকে, যা গুরুতর রোগের সৃষ্টি করে। এদের মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাংগাস, বিভিন্ন টক্সিন, বিভিন্ন পরজীবি ইত্যাদি। অন্যান্য হেলথ হ্যাজার্ডের তুলনায় এই শ্রেণীর হ্যাজার্ডের মোকাবেলা করতে কিছু নির্দিষ্ট ও সঙ্গতিপূর্ণ কার্যক্রমের প্রয়োজন হয়। কর্মদক্ষতা সম্পর্কিত হেলথ হ্যাজার্ড হচ্ছে কর্মক্ষেত্রের নকশা, হস্তচালিত কাজ (কিছু তোলা, ঠেলা, টানা ইত্যাদি), সরঞ্জামাদির বিন্যাস, এবং আসীন কাজ (পিছলে পড়া, হোঁচট খাওয়া, পড়ে যাওয়া, বসা কিংবা দাঁড়ানো) যা মাস্কুলোস্কেলেটাল (পেশী এবং কঙ্কালতন্ত্রের) সিস্টেমের জন্য কোনো ঝুঁকির কারণ হতে পারে। বিভিন্ন ঝুঁকির বিশ্লেষণ, হ্যাজার্ড সনাক্তকরণ এবং নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তার বিনাশ করা, প্রতিস্থাপন, প্রকৌশল নিয়ন্ত্রণ, প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষামূলক সামগ্রীর উপযুক্ত ব্যবহার সকল ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। [মো. রাকিবুল ইসলাম]