হাড়ের গেঁটে বাত

হাড়ের গেঁটে বাত (Osteoarthritis) হলো বাতজনিত রোগের অন্যতম সাধারণ রূপ যা বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে। এটি ‘অস্টিওআর্থোসিস’ নামেও পরিচিত এবং এটি সাইনোভিয়াল জয়েন্টগুলির একটি রোগ। সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জয়েন্টে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া; ফোলা এবং ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া যা সময়ের সাথে সাথে আরও খারাপ হতে পারে এবং বিষণ্নতার কারণ হতে পারে ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

এই রোগের বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে হাড় নরম হওয়া এবং আর্টিকুলার তরুণাস্থির ক্রমান্বয় ক্ষতি অন্যতম। ক্ষতির মধ্যে সাইনোভিয়াম, মেনিস্কাস (হাঁটুতে), পেরিয়ার্টিকুলার লিগামেন্ট এবং সাবকন্ড্রালসহ হাড়ের সমগ্র জয়েন্টে ক্রমান্বয়ে কাঠামোগত এবং জৈব রাসায়নিক পরিবর্তনও জড়িত। এই পরিবর্তনের ফলে অস্টিওআর্থারাইটিসের বৈশিষ্ট্য যেমন ঘন হওয়া সাবকন্ড্রাল হাড়, সাইনোভিয়ামের বিভিন্ন স্তরের প্রদাহ, সাইনোভিয়াল প্রসারণ, মেনিস্কাল অবক্ষয়, অস্থি মজ্জার ক্ষত, সিস্ট গঠন এবং অস্টিওফাইট এর বিকাশ দেখা যায়। রোগের অগ্রগতি খুব ধীরে ধীরে ঘটে যা হাড়ের জয়েন্টের ধ্বংস, ব্যথা এবং সর্বোপরি প্রাপ্তবয়স্কদের অক্ষমতার কারণ হতে পারে ।

বিভিন্ন ইটিওলজিকাল কারণ অস্টিওআর্থারাইটিসে অবদান রাখে যার মধ্যে রয়েছে বয়স বৃদ্ধি, লিঙ্গ, জয়েন্টে আঘাত, স্থূলতা, বিপাকীয় রোগ এবং জেনেটিক প্রবণতা। জেনেটিক গবেষণায় দেখা গেছে যে বিভিন্ন ধরণের বৃদ্ধিসূচক উপাদান যেমন ট্রান্সফরমিং গ্রোথ ফ্যাক্টর-বিটা (TGF-β) ও ডবিøউএনটি-৩এ (Wnt3a) এবং ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর যেমন Smad3, β-catenin এবং HIF-2α অস্টিওআর্থারাইটিসের বিকাশে অবদান রাখে। প্রকৃতপক্ষে, অস্টিওআর্থারাইটিস বিকাশ এবং অগ্রগতির সাথে এই সিগন্যালিং ফ্যাক্টরগুলির একে অপরের সাথে কিভাবে তথ্য আদান-প্রদান করে তা উন্মোচন করা প্রয়োজন।

যেহেতু রোগের সূচনা এবং অগ্রগতির সাথে জড়িত জেনেটিক এবং আণবিক প্রক্রিয়া কারণ এখনও অস্পষ্ট তাই এই রোগ নিরাময়যোগ্য নয়। সফলভাবে অস্টিওআর্থারাইটিসের চিকিৎসা করার জন্য রোগীর প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে ডাক্তাররা বিভিন্ন পন্থা (Multidisciplinary approach) ব্যবহার করেন। শেষ পর্যায়ে জয়েন্ট প্রতিস্থাপন বর্তমানে এই রোগের একমাত্র চিকিৎসার বিকল্প। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা এবং ব্যথার ওষুধ গ্রহণ এই রোগের লক্ষণ কমাতে পারে। [জিমাম মাহমুদ]