হাইপারসেন্সিটিভিটি

হাইপারসেন্সিটিভিটি (Hypersensitivity) হাইপারসেন্সিটিভিটি বা অতিসংবেদনশীলতা (হাইপারসেন্সিটিভিটি প্রতিক্রিয়া নামেও পরিচিত) হচ্ছে কোন অ্যান্টিজেন অথবা অ্যালার্জেনের বিরুদ্ধে স্বাভাবিক প্রতিরোধের অতিমাত্রায় বা অনাকাঙ্খিত প্রতিক্রিয়া। এগুলোকে সাধারণত প্রতিরোধ পদ্ধতির অতি-প্রতিক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং এদের ফলাফল ক্ষতিকর বা অস্বস্তিকর। হাইপারসেন্সিটিভিটি প্রতিক্রিয়াসমূহ চার ভাগে ভাগ করা যায়: টাইপ ১ অথবা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, এটি বহিরাগত কোনো প্রোটিন যা স্বাভাবিক অবস্থায় প্রকৃতিতে বিরাজমান এমন কিছু (যেমন- পরাগরেণু, ডিম, বাদাম, খোলা যুক্ত মাছ, ধূলিকণা, বিড়ালের লোম) দেহে প্রবেশের ফলে তার বিরুদ্ধে জাত IgE অ্যান্টিবডির মধ্যস্থতায় ঘটে থাকে; টাইপ ২ অথবা সাইটোটক্সিক প্রতিক্রিয়া, এতে দেহ-কোষের বহিরাবরনের অথবা কোষ-বহিস্থ ম্যাট্রিক্স অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে উৎপন্ন IgG বা IgM অ্যান্টিবডির মধ্যস্থতায় দেহ-কোষ ধ্বংস, কর্মক্ষমতা নষ্ট, অথবা টিস্যুর ক্ষতিসাধন হয় (যেমন পরিসঞ্চালিত লাল রক্ত কোষ); টাইপ M অথবা ইমিউন কমপ্লেক্সজনিত প্রতিক্রিয়া, যেগুলো (ইমিউন কমপ্লেক্স) রক্ত প্রবাহের সাথে দেহে পরিভ্রমন করে এবং পর্যাপ্তভাবে নিষ্কাসন না হয়ে বরং বিভিন্ন টিস্যু যেমন ত্বক, হাড়ের জয়েন্ট, রক্তবাহি নালি, অথবা গ্লমেরুলিতে জমা হতে পারে, এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে; এবং টাইপ ৪ অথবা বিলম্বিত প্রতিক্রিয়া, এটি নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য প্রভাবিত কোষ যেমন বিশেষ T সেল (টিলিম্ফোসাইট) জনিত অনাকাঙ্খিত প্রতিক্রিয়া।

ব্যাপকভাবে, প্রথম তিন ধরণকে তাৎক্ষণিক হাইপারসেন্সিটিভিটি প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয় কারণ এগুলো অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটে। চতুর্থ ধরণকে বিলম্বিত হাইপারসেন্সিটিভিটি প্রতিক্রিয়া নামে অবিহিত করা হয় কারণ এটা ঘটতে অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসার পর থেকে সাধারণত ১২ ঘণ্টার অধিক সময় লাগে, যেখানে সর্বোচ্চ প্রতিক্রিয়ার সময় ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে। সচরাচর টাইপ ১ হাইপারসেন্সিটিভিটি প্রতিক্রিয়ার কারণে যে সমস্ত রোগ হয় তার মধ্যে হে (খড়) জ্বর, রাইনাইটিস, এলার্জি, এলার্জি জনিত হাঁপানি, কনজাংটিভাইটিস, ত্বকে খুশকি জাতীয় চর্মরোগ অন্তর্ভুক্ত; টাইপ ২ প্রতিক্রিয়ায় স্বতঃঅনাক্রম্য বা অটোইমিউন হিমোলাইটিক রক্তাল্পতা, নবজাতকের হিমোলাইটিক রক্তাল্পতা অন্তর্ভুক্ত; টাইপ ৩ প্রতিক্রিয়ায় সিরাম অসুস্থতা, সিস্টেমিকলুপাস এরিথেমাটোসাস, ফারমারসলাং রোগ (অতিসংবেদনশীল নিউমোনিটিস), অজ্ঞাত কারণজনিত ক্রমবর্ধনশীল গ্রন্থিপ্রদাহ (রিউমাটয়িড আর্থরাইটিস) অন্তর্ভুক্ত; টাইপ ৪ প্রতিক্রিয়ায় নিকেল ধাতুর সংস্পর্শ সংবেদনশীলতা অথবা কোনো কোনো উদ্ভিদ যেমন বিষাক্ত আইভি সংবেদনশীলতা, অঙ্গপ্রতিস্থাপন প্রত্যাখ্যান, কুষ্ঠ বা য²ার প্রতি ত্বকের অতিসংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া, ভাইরাল সংক্রমণ যেমন হামের প্রতি অতি রঞ্জিত প্রতিক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত। [লায়লা নূর ইসলাম]