হবিগঞ্জ সদর উপজেলা

হবিগঞ্জ সদর উপজেলা (হবিগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ১৯১.৮৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°১৫´ থেকে ২৪°২৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°১৯´ থেকে ৯১°৩০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বানিয়াচং ও নবীগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলা, পূর্বে বাহুবল উপজেলা, পশ্চিমে লাখাই উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৬৩৬৯৫; পুরুষ ১৩১৩৯০, মহিলা ১৩২৩০৫। মুসলিম ২৩২৮৮৯, হিন্দু ৩০৫১০, বৌদ্ধ ২৯, খ্রিস্টান ৫২ এবং অন্যান্য ২১৫।

জলাশয় খোয়াই, বরাক ও সুতাং নদী এবং রত্না, ঘাড়ভাঙ্গা ও কুকি বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন হবিগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৮৯৩ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৯৪ ২২৫ ৮৩৩৮৭ ১৮০৩০৮ ১৩৭৪ ৬৩.০৯ (২০০১) ৪২.৭
পৌরসভা (হবিগঞ্জ)
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৭.১১ (২০০১) ৭৩ ৬৯৫১২ ৭৮০৩ (২০০১) ৭১.৮৭ (২০০১)
পৌরসভার বাইরে উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.৯৮ (২০০১) ১৩৮৭৫ ১৫২৪ (২০০১) ৫১.৯
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
গোপায়া ২২ ৩৬১২ ১৬০৯৪ ১৫৩২১ ৫০.৯
তেঘরিয়া ৯৫ ৮৫৭৭ ৯৫০৩ ৯৪১২ ৩৩.৮
নিজামপুর ৩৮ ৫০০৩ ১০৬৭৮ ১১২৪৩ ৫৭.৮
পৈল ৫৭ ৫২৮৩ ১১০৭৯ ১১৫৬৪ ৩৭.৪
রাজীউড়া ৬৬ ৫১৪২ ১১০০৪ ১১৭৪১ ৪১.৩
রিচি ৭৬ ৫০২১ ১৪৩১৬ ১৪৫০৫ ৩৪.৮
লস্করপুর ২৪ ২৮৭৭ ১১৪৫৩ ১১৬৯৪ ৪৬.৭
লুখড়া ২৮ ৮৪১৮ ১২২৭৩ ১২৩০৩ ২৮.৪

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ উচাইল শংকরপাশা মসজিদ (১৫১৩ খ্রি.)।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের সময় হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় সবচেয়ে বড় যে যুদ্ধটি সংঘটিত হয় তা ‘হবিগঞ্জ থানা ও বিদ্যুৎ ভবন’ যুদ্ধ নামে পরিচিত। উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেগুলির মধ্যে এম এ রব বীর উত্তমের নামে প্রতিষ্ঠিত গ্রন্থাগার ও জাদুঘর, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ এবং পৌরপার্কে নির্মিত ‘দুর্জয় ভাস্কর্য’ উল্লেখযোগ্য।

বিস্তারিত দেখুন হবিগঞ্জ সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১০।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ২১৩, মাযার ১৩, মন্দির ১৭, গির্জা ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: উচাইল শংকরপাশা মসজিদ, পৈলের প্রাচীন মসজিদ, দাউনগরের মসজিদ, মাছুলিয়ার আখড়া।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫০.৭%; পুরুষ ৫২.৯%, মহিলা ৪৮.৫%।  কলেজ ৪, প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ১, কারিগরি কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪৬, কিন্ডার গার্টেন ২, মাদ্রাসা ১৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজ, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৪৩), ফকিরাবাদ সরকারি হাইস্কুল (১৮৯০), হবিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), বি.কে.জি.সি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৩), জে.কে এন্ড এইচ.কে হাইস্কুল (১৯২৪), লস্করপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৪৩), হবিগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮৩), নিজামপুর দাখিল মাদ্রাসা (১৯৩৫), শায়েস্তাগঞ্জ কামিল মাদ্রাসা, হবিগঞ্জ দারুচ্ছুন্নাৎ সিনিয়র মাদ্রাসা।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: স্বদেশ বার্তা, খোয়াই, হবিগঞ্জ সমাচার, প্রতিদিনের বাণী, প্রভাকর, আজকের হবিগঞ্জ; সাপ্তাহিক: জনতার দলিল।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৭, শিল্পকলা একাডেমী ১, সংগীত একাডেমী ১, অডিটোরিয়াম ৩, নাট্যমঞ্চ ১, নাট্যদল ৫, যাত্রাদল ১, সাহিত্য সংগঠন ৩, সাংস্কৃতিক সংগঠন ৫, সিনেমা হল ৩, কমিউনিটি সেন্টার ২, খেলার মাঠ ৭, মহিলা সংগঠন ৫, ক্লাব ৬৫।

দর্শনীয় স্থান মহাকবি সৈয়দ সুলতান প্রতিষ্ঠিত সুলতানশী হাবেলী, মশাজানের ঐতিহাসিক সৈয়দ গোয়াসের (রঃ) দীঘি।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৭.১৩%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৭২%, ব্যবসা ১৬.৭৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৭৮%, চাকরি ৮.৭৪%, নির্মাণ ২.১১%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.২৫% এবং অন্যান্য ১২.১৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৫.৬৮%, ভূমিহীন ৪৪.৩২%। শহরে ৪৮.১৬% এবং গ্রামে ৫৮.৭৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আখ, আলু, পাট, মিষ্টি কুমড়া, চীনাবাদাম, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  কাউন, তিল, তিসি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, জাম।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৬০০, গবাদিপশু ৪০, হাঁস-মুরগি ১১২, হ্যাচারি ১১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৫৩ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১২ কিমি, কাঁচারাস্তা ৭৬ কিমি; রেলপথ ১১ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, সোয়ারী, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা বিস্কুট ফ্যাক্টরি, চিড়ামিল, রাইস মিল, স’মিল।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৫, মেলা ৩। চৌধুরী বাজার, কটিয়াদি বাজার, দাউদনগর বাজার ও শাহীবাজার এবং  কালীবাড়ির মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, চাল, আখের গুড়।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬৯.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ   এ উপজেলায় জালালাবাদ গ্যাস ফিল্ড অবস্থিত।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৯.৫%, ট্যাপ ৭.৭% এবং অন্যান্য ২.৮%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬৮.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৮.৪% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৩.১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে­ক্স ২, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ২, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৭, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১, ক্লিনিক ৩, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র ৩, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৩।

এনজিও কেয়ার, ব্র্যাক, আশা, কেয়ার, ভিশন। [মো. কবির হোসেন]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; হবিগঞ্জ সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।