স্টুয়ার্ট, চার্লস

স্টুয়ার্ট, চার্লস (১৭৬৪-১৮৩৭)  প্রাচ্যতত্ত্ববিদ ও বেঙ্গল আর্মির অফিসার। পেশাগত দৃষ্টিতে বাংলার ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে স্টুয়ার্ট একজন পথপ্রদর্শক ঐতিহাসিক। ১৮০৩ সালে তিনি মেজর হিসেবে বাংলার পদাতিক বাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করে গভর্ণর জেনারেল  ওয়েলেসলী প্রতিষ্ঠিত ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে ফারসি ভাষার সহকারী অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। ১৮০৭ সালে তিনি হার্টফোর্ডশায়ার অঞ্চলের হেইলিবেরিতে অবস্থিত ইস্ট ইন্ডিয়া কলেজে প্রাচ্য ভাষার অধ্যাপক পদে যোগ দেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক স্থাপিত হেইলিবেরি কলেজের উদ্দেশ্য ছিল ভারতে কোম্পানি ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র শাসনের জন্য বাছাই করা ক্যাডেটদের ভারত বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া। এ কলেজে  ষ্টুয়ার্ট ১৮২৬ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। লক্ষণীয় যে, ভারতে চার্লস স্টুয়ার্টের কর্মজীবন সমাপ্তির পরই তাঁর প্রাচ্য সম্পর্কিত সবগুলি রচনা সংকলিত এবং প্রকাশিত হয়েছিল।

সমসাময়িক প্রাচ্যতত্ত্ববিদ্দের মধ্যে স্টুয়ার্টের রচিত হিস্ট্রি অব বেঙ্গল ফ্রম দি ফার্স্ট মোহামেডান ইনভেশন আনটিল দি ভার্চুয়াল কনকোয়েস্ট অব দ্যাট কান্ট্রি বাই দি ইংলিশ, ১৭৫৭ গ্রন্থটিই ছিল প্রথম ব্যাপক গবেষণা ও বিশ্লেষণধর্মী গ্রন্থ। স্টুয়ার্ট তাঁর ডেসক্রিপটিভ ক্যাটালগ অব দি ওরিয়েন্টাল লাইব্রেরি অব দি লেট টিপু সুলতান উইথ মেমোয়ের্স অব হায়দর আলী (কেমব্রিজ ১৮০৯) গ্রন্থের জন্যও স্মরণীয় হয়ে আছেন। ফারসি ও হিন্দী ভাষায় বিশেষ বুৎপত্তির কারণে স্টুয়ার্ট অত্যন্ত সফলভাবে  মির্জা আবু তালেব খান-এর ফারসি ভাষায় লিখিত ভ্রমণ কাহিনী (৩ খন্ড) সফল অনুবাদ করতে সক্ষম হন। মির্জা আবু তালেব আঠারো শতকের শেষের দিকে ব্রিটেন ও ইউরোপে ভ্রমণ করেন। এই অনুবাদ ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এর প্রধান কারণ পাশ্চাত্যের পাঠকগণ গুরুত্বের সহিত লক্ষ্য করেছেন পাশ্চাত্য সভ্যতা সম্পর্কে একজন প্রাচ্য মনিষীর চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা এবং তাঁর প্রতিক্রিয়া। আবু তালিব জানান যে, পাশ্চাত্য সভ্যতায় সামরিক শক্তি ছাড়া এমন বেশী কিছু গর্ব করার নেই যা প্রাচ্য সভ্যতাকেম্লান করে দিতে পারে।  [সিরাজুল ইসলাম]