সোনারগাঁও উপজেলা

সোনারগাঁও উপজেলা (নারায়ণগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ১৭১.৬৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৩২´ থেকে ২৩°৪৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩১´ থেকে ৯০°৪১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে মুন্সিগঞ্জ সদর ও গজারিয়া উপজেলা, পূর্বে হোমনা ও গজারিয়া উপজেলা, পশ্চিমে বন্দর (নারায়ণগঞ্জ), নারায়ণগঞ্জ সদর ও রূপগঞ্জ উপজেলা ও ডেমরা থানা।

জনসংখ্যা ৪০০৩৫৮; পুরুষ ২০৪৪৩৮, মহিলা ১৯৫৯২০। মুসলিম ৩৮৫৫৩৯, হিন্দু ১৪৪৮৪, বৌদ্ধ ৬৭, খ্রিস্টান ২৩৫ এবং অন্যান্য ৩৩।

জলাশয় প্রধান নদী: মেঘনা, শীতলক্ষ্যা ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র (মৃতপ্রায়)।

প্রশাসন সোনারগাঁও থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১০ ২৫৭ ৩৯৮ ৩২৭৯৬ ৩৬৭৫৬২ ২৩৩২ ৬২.৬ ৫৩.৯
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৯.০৬ ৬০ ৩২৭৯৬ ৩৬২০ ৬২.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কাঁচপুর ৪৩ ৩১০২ ৩১২২৮ ২৯৫০৬ ৬২.৯
জামপুর ৩৪ ৫২১৮ ২২৮২৪ ২২০০৭ ৫২.৫
নোয়াগাঁও ৬০ ৩১৫০ ১০৯৭৪ ১১৬০২ ৪৪.৮
পিরিজপুর ৬৯ ৪২৩৯ ২৪৭০৭ ২০৭৩৩ ৫৯.৮
বড়দি ২৭ ৩৪৬৫ ১২৪৭৮ ১৩২৮৫ ৪১.৯
বৈদ্যের বাজার ২৪ ২২৫১ ১১৬৫৮ ১১৩৭৭ ৪২.১
মুগরা পাড়া ৫১ ২০৮৯ ১৭২৯৯ ১৬২০৭ ৬২.৭
শম্ভুপুরা ৮৬ ৩৮৫৯ ১৩০১৭ ১৩৬২৯ ৫৫.৩
সন্মানদি ৯৪ ৫০৫৪ ১৮৯১৮ ১৯১১১ ৫১.৮
সাদিপুর ৭৭ ৪৫৮৮ ২৪৫২৩ ২২৪৭৯ ৪৯.০

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ জালাল উদ্দিন ফতেহ শাহের এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ (১৪৮৯), সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহের সমাধি (১৪১০), আলাউদ্দিন হোসেন শাহের এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ (১৫২২), শাহ লঙ্গরের সমাধি (১৪২২), পাঁচপীরের দরগাহ, গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড, খাসনগর দীঘি, কোম্পানির কুঠি, ইউসুফ গঞ্জের মসজিদ, গেয়ালদি মসজিদ (১৫১৯), লাঙ্গলবন্দ তীর্থস্থান, পানাম নগর।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৩৩৫ থেকে ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সোনারগাঁও কখনো বাংলার রাজধানী আবার কখনো পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত ছিল। মরক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা ১৩৪৬ খ্র্রিস্টাব্দে সোনারগাঁও ভ্রমণ করেন। পানামের জমিদারেরা ব্রিটিশ বিরোধী স্বদেশী-আন্দোলন ও মহাত্মা গান্ধীর অহিংস-আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। ১৯৬৪ সালের সাম্প্রদায়িক মোহাজের সমস্যা সোনারগাঁওয়ের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পানামে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ লড়াইয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এসময় সন্মানদি, পিরিজপুর ও চিলারবাগে গণহত্যা সংঘটিত হয়।

বিস্তারিত দেখুন সোনারগাঁও উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১০।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪৬০, মন্দির ৩৬, মাযার ১০। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: জালাল উদ্দিন ফতেহ শাহের এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ (১৪৮৯), আলাউদ্দিন হোসেন শাহের এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ (১৫২২), ইউসুফ গঞ্জের মসজিদ, গেয়ালদি মসজিদ (১৫১৯)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৪.৬%; পুরুষ ৫৬.৭%, মহিলা ৫২.৫%। কলেজ ৪, ইনস্টিটিউশন ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮২, কমিউনিটি স্কুল ২৬, স্যাটেলাইট স্কুল ৯, মাদ্রাসা ১০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সোনারগাঁও ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৯), কাজী ফজলুল হক উইমেন্স কলেজ (১৯৮৮), সোনারগাঁও জিআর ইনস্টিটিউশন (১৯০০), বারদী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০০), পঞ্চমী ঘাট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৯), রিবর পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯১৬), জামপুর মাঝেরচর এমএসজিকে উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), বৈদ্যার বাজার এনএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, হোসেনপুর উচ্চ বিদ্যালয়, মহজমপুর উচ্চ বিদ্যালয়, মুগরা পাড়া এইচজিজিএস স্মৃতি বিদ্যায়তন (১৯৩৪)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সোনারগাঁও কাগজ (অনিয়মিত); মাসিক: সোনারগাঁও পরিক্রমা (অনিয়মিত), সোনারগাঁও পত্রিকা (অনিয়মিত)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, ক্লাব ২৬, মহিলা সংস্থা ১, যাত্রাদল ৫, সিনেমা হল ৬, খেলার মাঠ ১৯।

দর্শনীয় স্থান বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন (সোনারগাঁও)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ২৫.৯৫%, অকৃষি শ্রমিক ২.৬০%, শিল্প ৪.২৭%, ব্যবসা ২৩.৭৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৫১%, চাকরি ২০.৩১%, নির্মাণ ১.৬১%, ধর্মীয় সেবা ০.৩১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৪.৬৮% এবং অন্যান্য ১২.০২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫২.৪৯%, ভূমিহীন ৪৭.৫১%। শহরে ৩২.৫৫% এবং গ্রামে ৫২.৭৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, আখ, পাট, তিল, মসুর, খেসারি, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  কাউন, তিসি, সরিষা।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, লিচু, কলা, কাঁঠাল, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১২, হাঁস-মুরগি ৭৮০, হ্যাচারি ৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৪৭.৩২ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪১.৯৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৭৪.৯৪ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, স্পিনিং মিল, স্টিল মিল, প্রিন্টিং মিল, রোলিং মিল, পেপার মিল, অয়েল মিল, টেক্সাটাইল মিল।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৬, মেলা ৬। আনন্দ বাজার হাট, কাইকারটেক হাট এবং লোক ও কারুশিল্প মেলা, লোকনাথ ব্রক্ষ্মচারীর মেলা, মঙ্গল গ্রামের গাছতলার মেলা, হামছাদির পাগলা মেলা ও উদ্ভবগঞ্জের বউ মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য শিল্পদ্রব্য, শাড়ী, তাঁতের কাপড়, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৯৬.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯২.৯%, ট্যাপ ৪.৯% এবং অন্যান্য ২.২%। এ উপজেলায় অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৭.০% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২১.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩, ক্লিনিক ১০।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৬৯ সালে ঘূর্ণিঝড়ে এ উপজেলার সন্মানদি ইউনিয়নের নাজিরপুর নীলকান্দা গ্রামের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়ে যায়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, ভার্ক, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ।  [শামসুদ্দোহা চৌধুরী]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; সোনারগাঁও উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।