সৈয়দা খাতুন, আখতার মহল

সৈয়দা খাতুন, আখতার মহল (১৯০০-১৯২৮)  সাহিত্যিক। ফরিদপুরে তাঁর জন্ম। পিতা আবদুর রহমান ছিলেন খ্যাতনামা উকিল। সেকালে নারীসমাজে বিশেষত মুসলিম নারীসমাজে শিক্ষার প্রচলন ছিল না। সৈয়দা খাতুনেরও কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। তিনি শৈশবে পারিবারিকভাবে বড় ভাইদের নিকট থেকে বাংলা শিখেছিলেন। কিন্তু এ সুযোগও তিনি বেশিদিন পাননি, কারণ মাত্র ১৩ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়। স্বামী মকবুলুল হক খাঁ ছিলেন নোয়াখালীর সাবের খাঁ এস্টেটের জমিদার সেরাজুল হক খাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র।

শ্বশুর বাড়িতে সৈয়দা খাতুন ব্যক্তিগত প্রয়াসে জ্ঞান চর্চার সুযোগ পান। সেখানে  মোহাম্মদীসওগাত  ইত্যাদি পত্রিকা নিয়মিত রাখা হতো। সৈয়দা খাতুন এসব পত্রিকা পাঠ করে বাংলা ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। পরে তিনি সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। তিনি গল্প, কবিতা ও  উপন্যাস লিখে তার পান্ডুলিপিগুলি একটি টিনের বাক্সে সযত্নে রেখে দিতেন। তখন এগুলি প্রকাশের সুযোগ বা চেষ্টা তাঁর ছিল না। আকস্মিকভাবে একদিন রচনাগুলি প্রকাশের সুযোগ আসে। ১৯২৬-এর কোনো এক সময় কাজী নজরুল ইসলামকে নোয়াখালী টাউন হলে সম্বর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করা হয়। তাতে সৈয়দা খাতুন কবির উদ্দেশে কবিতায় একটি অভিনন্দনপত্র রচনা করেন। এর ভাষা, শব্দঝংকার এবং  ছন্দ কবিকে মুগ্ধ করে। তিনি রচয়িতার নাম জানতে চান এবং এ সূত্রে নজরুলের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। অবশেষে নজরুলের অনুপ্রেরণা ও সহায়তায় সৈয়দা খাতুনের কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে। ‘সেলিমা বেগম’ ছদ্মনামে তাঁর লেখাগুলি সওগাত, মোহাম্মদী, নওরোজ প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। এ সময় মুসলিম মহিলাদের সাহিত্যাঙ্গনে প্রবেশ করাতে সওগাত সম্পাদক নাসিরউদ্দীন ও নজরুল একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এভাবে বেগম সুফিয়া কামালেরও সাহিত্যাঙ্গনে আবির্ভাব ঘটেছিল।

১৯২৭-এর শুরু থেকে ‘সেলিমা বেগম’ ছদ্মনামে সৈয়দা খাতুনের নিয়ন্ত্রিতা উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯২৮-এর ১১ জানুয়ারি সৈয়দা খাতুন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর উপন্যাসটি আরও দুই সংখ্যায় সমাপ্ত হয়। তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস মরণবরণ তাঁর মৃত্যুর পর স্বনামে সওগাত  পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। সৈয়দা খাতুনের সন্তানেরা ১৯৭৮ সালে ‘নিয়ন্ত্রিতা’ শিরোনামে এ দুটি উপন্যাসসহ তাঁর অন্যান্য প্রকাশিত-অপ্রকাশিত রচনার একটি সংকলন প্রকাশ করেন।  [আলি নওয়াজ]