সত্যপীরের ভিটা, পাহাড়পুর

সত্যপীরের ভিটা, পাহাড়পুর  নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার অধীনে পাহাড়পুর বিহার থেকে ৩৬৫ মিটার পূর্বে অবস্থিত। সত্যপীরভিটার বর্তমান নামের উৎপত্তি ষোল-সতের শতকের পূর্বে হয়েছে বলে মনে হয় না। এ ভিটায় একটি তারা মন্দির এবং বিভিন্ন আকার ও আয়তনের প্রচুর নিবেদন স্তূপের ধ্বংসাবশেষ বিদ্যমান। মন্দির অঙ্গনের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৫০টি পোড়ামাটির ফলক, আটহাত বিশিষ্ট দেবীমূর্তি ও বৌদ্ধ ধর্মীয় মতবাদ লিপি খোদিত পোড়ামাটির গোল সীলগুলি থেকেই এই ভিটা ও তারা মন্দিরের অভিন্নতা প্রতিপন্ন হয়েছে। আবিষ্কৃত দেবী মূর্তিটি বৌদ্ধদেবী শীতাতপত্র তারা বলেই মনে হয়।

সত্যপীরের ভিটা, পাহাড়পুর

পুরাকীর্তিসমূহের তিনদিকে বেষ্টনী দেওয়াল ছিল। উত্তর দিকে কোন দেওয়ালের অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি। প্রত্নস্থলটি আকৃতিতে একটি অসমান্তরাল বাহু বিশিষ্ট চতুর্ভুজ। এর দৈর্ঘ্য ৭৬ মি থেকে ৯১ মি এবং প্রস্থ ৪৩ মি থেকে ৫৭ মি। সমগ্র প্রত্নাবশেষ এবং প্রধান মন্দিরের প্রবেশপথ দক্ষিণ দিকে।

পরিবেষ্টিত স্থানের বিশেষ কাঠামো হচ্ছে প্রধান মন্দিরটি। এ মন্দির ১৫ মি প্রশস্ত এবং ২৪ মি দীর্ঘ। আয়তাকার এই মন্দির দুই অংশে গঠিত। পূজার স্থানটি উত্তর দিকে এবং চতুর্দিকে প্রদক্ষিণপথসহ স্তম্ভযুক্ত হলঘরটি দক্ষিণদিকে। হলঘরের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায় না।

মন্দির এলাকায় ১৩২টি নিবেদন স্তূপ আছে। মন্দিরের চতুর্দিকে বিভিন্ন আকৃতির ও নকশার নিবেদন সূতপের সংখ্যাধিক্য এবং অলংকরণ এর খ্যাতি ও গুরুত্বের প্রতি সাক্ষ্য দেয়। এখানকার স্তূপগুলির মধ্যে প্রধান মন্দিরের কাছাকাছি অঙ্গনের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অবস্থিত চতুষ্কোণ স্তূপটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই সূতপের প্রতিবাহুর দৈর্ঘ্য ৩ মি এবং বহির্ভাগের সূতপটি অলংকৃত ইট দিয়ে শোভিত। খননের ফলে এই সূতপের মধ্যস্থলে ১ মি বর্গ বিশিষ্ট একটি বাঁধানো স্মারক-কুঠুরি আবিষ্কৃত হয়েছে। কুঠুরিটি কয়েক হাজার ছোট ছোট মাটির নিবেদন সূতপের প্রতিকৃতি দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল। মনে হয় মন্দিরে আগত হাজার হাজার তীর্থযাত্রী তাদের ভক্তি ও শ্রদ্ধার প্রতীকস্বরূপ এগুলি স্মারক কুঠুরিতে উৎসর্গ করতেন।

সত্যপীরভিটায় আবিষ্কৃত প্রধান প্রত্নবস্ত্তগুলি হলো পোড়ামাটির ফলকচিত্র, অলংকৃত ইট এবং স্বল্প মূল্যের পাথরের গুটিকা (পুঁতি)। এছাড়া কিছু তারামূর্তি, ব্রোঞ্জ নির্মিত একটি জম্ভল মূর্তি এখানকার অন্যতম উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার। বঙ্গসেনা কর্তৃক পূর্বে ক্ষতিগ্রস্থ এই মন্দির বারো শতকের শুরুতে নালন্দা লিপিতে বর্ণিত বিপুলশ্রীমিত্র কর্তৃক সংস্কার করা হয়। মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের উপর মুসলিম যুগের একটি ইটের স্থাপনা অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়।  [শফিকুল আলম]