শিবচর উপজেলা

শিবচর উপজেলা (মাদারীপুর জেলা)  আয়তন: ৩৩২.৯০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°১৫´ থেকে ২৩°৩০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৫´ থেকে ৯০°১৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পদ্মা নদী ও লৌহজং, শ্রীনগর ও সদরপুর উপজেলা, দক্ষিণে রাজৈর ও মাদারীপুর সদর উপজেলা, পূর্বে জাজিরা উপজেলা, পশ্চিমে ভাঙ্গা উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩১৮২২০; পুরুষ ১৫৬৫০৮, মহিলা ১৬১৭১২। মুসলিম ৩০৬০৩৪, হিন্দু ১২১৬৫, বৌদ্ধ ৪, খ্রিস্টান ৮ এবং অন্যান্য ৯।

জলাশয় পদ্মা, কুমার, ময়নাকাটা ও আড়িয়াল খাঁ নদী এবং পদ্মা বিল, মির্জার চর বিল, হাসেমদি বিল ও বড় কেশবপুর বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন শিবচর থানা গঠিত হয় ১৯৩০ সালে এবং ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৯ ১০১ ৫১৯ ৩২১১১ ২৮৬১০৯ ৯৫৬ ৫১.৩ (২০০১) ৪১.৫
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৮.৭৫ (২০০১) ১৭ ২৪১৫৪ ২২৬১ (২০০১) ৬৫.৯
পৌরসভার বাইরে উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৮.২৭ (২০০১) ৭৯৫৭ ৯৭৯ (২০০১) ৪৩.৪
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
উমেদপুর ৯৪ ৪৮৫৬ ১১৭৩২ ১১৯৪৭ ৪৮.৮
কাঁঠালবাড়ী ৫২ ৯১৭৯ ৯৭১৬ ৯৮৯৬ ৩৩.১
কাদিরপুর ৪৭ ৪৯৩০ ৭৩৩৭ ৭৫৮৩ ৪০.৬
কুতুবপুর ৫৮ ৩৭৭৫ ৮৭৬৭ ৮৬০৬ ৩৭.৫
চর জানাজাত ৩১ ৭৮৯২ ৮৭০৬ ৮৫২৮ ৩৩.৬
দত্তপাড়া ৩৬ ৬০৯২ ১১৯৭০ ১২৩৭৩ ৪৩.৫
দ্বিতীয় খণ্ড ৪২ ১৯৩৯ ৫৪৩০ ৫৭২২ ৪০.৬
নিলখী ৬৮ ৩৭২৮ ৫৯২৪ ৬৮৪৬ ৪১.১
পাঁচ চর ৭৩ ৩৪৪০ ১০১৩১ ৯১২১ ৪৫.২
বন্দরখোলা ১১ ৩৪৫৮ ৪৪৯৬ ৪৬৩৩ ৩৭.২
বয়রাতলা উত্তর ১৮ ৩১০৭ ৫৮৬৩ ৬৩৮০ ৩৯.৭
বয়রাতলা দক্ষিণ ১৫ ২৩০৮ ৪২৮১ ৪৭১৪ ৩৭.৮
বাঁশকান্দি ১৩ ৪৭৮৭ ৯৪৩৭ ৯৯৯৯ ৪৬.৩
ভদ্রাসন ২১ ২৩৭১ ৫০২০ ৫৩১৯ ৪৪.৫
ভাণ্ডারীকান্দি ২৬ ৩৩৫৭ ৪৭৭১ ৫৪০৭ ৪২.৭
মাদবরের চর ৬৩ ৫২৫২ ১২৯৭৪ ১৩০৮৪ ৪৩.৭
শিবচর ৮৪ ১৩১৯ ২৬২৬ ২৭৫৬ ৪০.৮
শিরুয়াইল ৮৯ ৩৮৯৮ ৭৬৪৪ ৮২৯২ ৪১.৬
সন্ন্যাসীর চর ৭৯ ৪৫৯২ ৭৮০৭ ৮২২৮ ৪২.৪

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ রাজা বসুর দুর্গামন্দির, হাজী শরীয়তউল্লাহর মাযার, বন্দখোলা মঠ, পাঁচ চর মঠ, বৈকুণ্ঠ চৌধুরী বাড়ির ধ্বংসাবশেষ ও রাশু বাবুর বাড়ি (গুয়াতলা)।

ঐতিহাসিক ঘটনা বাংলাদেশের বিখ্যাত ইসলামি সংস্কারক হাজী শরীয়তুল্লাহ (১৭৮১-১৮৪০) উপজেলার শ্যামাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঊনবিংশ শতাব্দিতে এ অঞ্চলে তাঁর নেতৃত্বে ফরায়েজি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে যা সমগ্র পূর্ববঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তাঁর পুত্র দুদু মিয়া (১৮১৯-১৮৬২) ফরায়েজি-প্রভাবিত অঞ্চলে ‘পঞ্চায়েত প্রথা’ পুনঃপ্রবর্তন করেন এবং আত্মরক্ষার প্রয়োজনে লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও এ উপজেলার লোকজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মুক্তিযুদ্ধ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধারা যেসব অপারেশন পরিচালনা করে সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল শিবচর থানা অপারেশন। এই অপারেশনে ১৪ জন রাজাকার নিহত হয়। অপরপক্ষে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে শিবচরে স্বাধীনতা চত্বর, ৭১ চত্বর, বিজয় চত্বর ‘মুক্তবাংলা’ ভাস্কর্য ও শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন শিবচর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১২৫৬, মন্দির ২৫, মাযার ১, দরগাহ ১, এতিমখানা ৩।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৩.৫%; পুরুষ ৪৪.৬%, মহিলা ৪২.৪%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭৫, স্যাটেলাইট স্কুল ২, কমিউনিটি স্কুল ১১, মাদ্রাসা ৭৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বরহামগঞ্জ সরকারি কলেজ (১৯৬৪), রিজিয়া বেগম মহিলা কলেজ (১৯৮৫), নুরুল আমিন ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৪), ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ (২০০১), বয়রাতলা আদর্শ কলেজ (২০০১), দত্তপাড়া টি এন একাডেমি (১৯৩৪), ভদ্রাসন জি.সি একাডেমি ও নন্দকুমার ইনস্টিটিউশন (১৯১০), রাজার চর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭২), কাঁঠালবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬২), শেখ ফজিলাতুন্নেছা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯৭৪), আরএম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩০), টেকেরহাট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫২), ভান্ডারীকান্দি এ.এম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৩), পাঁচ চর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), মুন্সিকাদিরপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫০), টেকেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়, উৎরাইল উচ্চ বিদ্যালয়, খানকান্দি সৈয়দ আশরাফ আলী উচ্চ বিদ্যালয়, বাহাদুরপুর শরিয়াতিয়া আলিয়া মাদ্রাসা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৪, শিল্পকলা একাডেমি ১, প্রেসক্লাব ১, সিনেমা হল ৪, ক্লাব ২৯, কমিউনিটি সেন্টার ১৫, অডিটোরিয়াম ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৩.৯৫%, অকৃষি শ্রমিক ২.১৬%, শিল্প ০.৮১%, ব্যবসা ১৪.৫৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.১৮%, চাকরি ৬.১৬%, নির্মাণ ১.২২%, ধর্মীয় সেবা ০.১৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৭১% এবং অন্যান্য ৮.০৯%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৫.৭৭%, ভূমিহীন ৩৪.২৩%। শহরে ৪৬.৩১%, গ্রামে ৬৭.৫৩% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, ডাল, আখ, পিঁয়াজ, রসুন, সরিষা, পান, চীনাবাদাম।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  কাউন, অড়হর, চীনা, তিল, মেথি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, বেল, তেঁতুল, কলা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ২০, হাঁস-মুরগি ৪১, কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র ১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৪৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১২৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫০১ কিমি; নৌপথ ৭৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, আটাকল, তেলকল, করাতকল।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, দারুশিল্প, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৯, মেলা ১। বরহামগঞ্জ, উৎরাইল, শেখপুর, দত্তপাড়া, টেকেরহাট, চান্দের চর ও মাদবরের চর হাট এবং বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  চীনাবাদাম, ডাল, পিঁয়াজ, রসুন, পান, সরিষা।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাভুক্ত। তবে ৪৫.৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.৯%, ট্যাপ ০.৫% এবং অন্যান্য ২.৬%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭২.৭% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৫.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.৪% পরিবারের কোনো স্যানিটেশন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে­ক্স ১, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১৫, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩, পশু হাসপাতাল ১।

এনজিও আশা, ব্র্যাক, কেয়ার। [মো. শাহজাহান খান]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; শিবচর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।