রিকাবী বাজার মসজিদ

রিকাবী বাজার মসজিদ  মুন্সিগঞ্জ জেলার রিকাবী বাজার ইউনিয়নের অধীনে টেঙ্গর গ্রামে অবস্থিত। জেলা শহর থেকে প্রায় ৪.৮ কিমি এবং বিখ্যাত বাবা আদমের মসজিদের প্রায় ২ কিমি পশ্চিমে এর অবস্থান। এটি সম্পূর্ণরূপে সংস্কার করা একটি ইমারত। এর পূর্বদিকে একটি পাকা বারান্দা যোগ হয়েছে। বারান্দার কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের উপরে সংস্থাপিত একটি বাংলা শিলালিপির তথ্যানুযায়ী বাংলা ১৩৮৪ সনে মসজিদটিকে সংস্কার করা হয়।

এটি ইটের তৈরি একগম্বুজ বিশিষ্ট বর্গাকার মসজিদ এবং অভ্যন্তরভাগে এর প্রতিবাহুর পরিমাপ ৬.৯৫ মিটার। দেয়ালগুলি প্রায় ২.১৩ মিটার মোটা। মসজিদের বাইরের চারকোণে চারটি পার্শ্ববুরুজ ছিল, কিন্তু সংস্কার কাজের সময় সেগুলি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। মসজিদে পাঁচটি খিলান দ্বারা নির্মিত প্রবেশপথ রয়েছে, পূর্বদিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে। উত্তর ও দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথগুলি বর্তমানে জানালা হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। সবগুলি খিলানই দ্বি-কেন্দ্রিক আকৃতির। পূর্বদিকের কেন্দ্রীয় প্রবেশপথটি পাশেরগুলি অপেক্ষা বড়। পূর্বদিকের তিনটি প্রবেশপথ বরাবর অভ্যন্তরে কিবলা দেয়ালে সংস্কার করা তিনটি আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত অর্ধবৃত্তাকার মিহরাব রয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের ন্যায় কেন্দ্রীয় মিহরাবটিও পাশের মিহরাবগুলি থেকে বড়। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে খিলানপথের উভয়পাশে দুটি করে কুলুঙ্গি রয়েছে।

মসজিদের বর্গাকার প্রার্থনা কক্ষটি ইটের তৈরি বড় একটি স্কন্দযুক্ত গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত। অভ্যন্তরভাগে প্রতিটি দেয়ালে স্থাপিত দুটি করে নিমগ্ন স্তম্ভ (pilaster) থেকে উৎসারিত এবং কেন্দ্রীয় মিহরাব ও তিন অক্ষের প্রবেশপথের উপরের নিরেট খিলানগুলির সঙ্গে বাংলা পেন্ডেন্টিভ ও উপরস্থ কোণগুলিতে সৃষ্ট অর্ধগম্বুজাকৃতির স্কুইঞ্চের উপর গম্বুজটি ন্যস্ত। বাইরে থেকে গম্বুজের নিম্নাংশে একটি অষ্টকোণাকার ড্রাম দেখা যায়। প্যারাপেটগুলি ও গম্বুজের ভেতর দিকটি বদ্ধ মারলোনের সারি দ্বারা অলঙ্কৃত এবং প্রতিটি মিহরাব ফ্রেমের শীর্ষভাগ বদ্ধ মারলোনের একটি করে ফ্রিজ দ্বারা সজ্জিত। এগুলি আদি অলঙ্করণ নয়। মসজিদের বাইরের দেয়ালটি পোড়া মাটির ফলকে অলঙ্কৃত ছিল, কিন্তু বর্তমানে সবই হারিয়ে গেছে। মসজিদটি বর্তমানে সিমেন্টের পলেস্তরায় আবৃত।

একটি আরবি শিলালিপি পূর্বদেয়ালের কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের উপর নিবদ্ধ ছিল, বর্তমানে শিলালিপিটি ‘পশ্চিমপাড়া মসজিদ’ নামে পরিচিত নিকটবর্তী একটি নবনির্মিত মসজিদের বহির্দেয়ালে নিবদ্ধ রয়েছে। এই শিলালিপি অনুযায়ী সুলতান সুলায়মান কররানীর শাসনামলে ১৫৬৯ খ্রিস্টাব্দে জনৈক আমীন খান ফকির মিয়ার পুত্র মালিক আব্দুল মিয়া মসজিদটি নির্মাণ করেন।

এ মসজিদের স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্যাবলি- মোটা দেয়াল, বৃহৎ গম্বুজ, দ্বি-কেন্দ্রিক খিলানপথ এবং ইটের নিমগ্ন স্তম্ভ থেকে উৎসারিত নিরেট খিলান এর সঙ্গে পেন্ডেন্টিভ ও অর্ধগম্বুজাকৃতি স্কুইঞ্চের মাধ্যমে গম্বুজ স্থাপন নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ের গোয়ালদি মসজিদ ও বন্দরের বাবা সালেহ মসজিদের সাথে খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ।  [মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন]