রামকমল সেন

রামকমল সেন (১৭৮৩-১৮৪৪)  পন্ডিত, লেখক, অভিধান প্রণেতা। ১৭৮৩ সালের ১৫ মার্চ হুগলি জেলার গরিফা গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা গোকুলচন্দ্র সেন ছিলেন ফারসি বিশেষজ্ঞ। স্বগৃহে রামকমলের বিদ্যারম্ভ হয়; পরে স্বগ্রামের এক পাদ্রির স্কুলে এবং কলকাতার কলুটোলার রামজয় দত্তের স্কুলে তিনি ইংরেজি শেখেন।

রামকমল সেন ১৮০০ সাল থেকে তিন বছর কলকাতার চিফ ম্যাজিস্ট্রেট নেমীর অধীন চাকরি করেন। ১৮০৪ সালে তিনি উইলিয়ম হান্টারের হিন্দুস্থানী প্রিন্টিং প্রেসে কম্পোজিটর হিসেবে কাজ করেন এবং ১৮১১ সালে এর পরিচালক নিযুক্ত হন। কিছুদিন তিনি  এশিয়াটিক সোসাইটি (কলকাতা) ও সংস্কৃত কলেজের হিসাবরক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর পান্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ সেন এশিয়াটিক সোসাইটির সেক্রেটারি এবং সংস্কৃত কলেজের সেক্রেটারি ও সুপারিনটেন্ডেন্ট (১৮৩৫) পদে আসীন হন। ১৮২১ সালে রামকমল হিন্দু কলেজের অধ্যক্ষ পদ লাভ করেন। পরে তিনি উইলসনের অধীন টাকশালের দেওয়ান (১৮২৮) এবং বেঙ্গল ব্যাংকের দেওয়ান (১৮৩২) পদে নিযুক্ত হন। ১৮৩৮ সালে তিনি ‘জমিদার সভা’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার সভাপতি নিযুক্ত হন।

রামকমল সেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, সরকারি বীমা কোম্পানির সাব-কমিটির একমাত্র বাঙালি সভ্য, সেভিংস ব্যাঙ্ক কমিটির সভ্য, ডিস্ট্রিক্ট চ্যারিটেবল সোসাইটির সভ্য এবং সোসাইটির হাসপাতালের অধ্যক্ষ ছিলেন। পাদ্রি কেরীর সহায়তায় তিনি ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড হরটিকালচারাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৮৩৭ সালে এর সহসভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁরই সহায়তায় ওয়ালচ নামে জনৈক দিনেমার উদ্ভিদবিদ কলকাতা জাদুঘরের সূচনা করেন।

রামকমল তৎকালীন সমাজে প্রচলিত অনেক কুসংস্কার দূরীকরণে সহায়তা করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় মুমূর্ষু ব্যক্তিদের গঙ্গায় ডুবিয়ে মারা এবং চড়কে শূলে বিদ্ধ হওয়ার মতো অমানবিক প্রথা নিবারিত হয়। তবে তিনি হিন্দু কলেজের শিক্ষক  ডিরোজিও এবং তাঁর অনুসারীদের গঠিত ইয়ং বেঙ্গলের বিরোধী ছিলেন। কলেজ থেকে ডিরোজিওর অপসারণে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল।

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে রামকমলের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ১৮১৭ থেকে ১৮৩৪ সাল পর্যন্ত সতেরো বছর যাবৎ দেশীয় পন্ডিতদের দ্বারা দুই খন্ডে ইংরেজি-বাংলা অভিধান সংকলন করানো তাঁর এক অসাধারণ অবদান। তিনিই প্রথম এ কৃতিত্বের অধিকারী হন। এ কাজে তিনি ফেলিক্স কেরীর সহায়তা পেয়েছিলেন। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ: নীতিকথা (১ম ভাগ, ১৮১৮), ঔষধসার-সংগ্রহ (১৮১৯), হিতোপদেশ (১৮২০) ইত্যাদি। ব্রাহ্মসমাজের অন্যতম নেতা  কেশবচন্দ্র সেন ছিলেন তাঁর পৌত্র। ১৮৪৪ সালের ২ আগস্ট রামকমলের মৃত্যু হয়। [মোঃ হারুন-অর-রশীদ]