রানীশংকাইল উপজেলা

রানীশংকাইল উপজেলা (ঠাকুরগাঁও জেলা)  আয়তন: ২৮৭.৫৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৪৮´ থেকে ২৬°০৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°০৮´ থেকে ৮৮°২১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বালিয়াডাঙ্গী ও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা, দক্ষিণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, পূর্বে পীরগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা, পশ্চিমে হরিপুর উপজেলা।

জনসংখ্যা ২২২২৮৪; পুরুষ ১১২১৯৫, মহিলা ১১০০৮৯। মুসলিম ১৭৪১৬৩, হিন্দু ৪৫৮৭০, বৌদ্ধ ৪৭, খ্রিস্টান ১০৭৪ এবং অন্যান্য ১১৩০।

জলাশয় প্রধান নদী: কুলিক, নাগর, তিরনাই।

প্রশাসন রানীশংকাইল থানা গঠিত হয় ১৮৩৭ এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮২ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১২৪ ১২৪ ১৭৭৬২ ২০৪৫২২ ৭৭৩ ৫৯.৮ ৪৫.৪
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৯.১৫ ১৮ ১৭৭৬২ ১৯৪১ ৫৯.৮
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কাশিপুর ৫৫ ৭০৮৫ ১১৭৬৭ ১১৫৭৮ ৪১.৭
ধর্মগড় ৩১ ৯৭৫৬ ১৩৭৫৪ ১৩৬৪৩ ৩৮.৩
নন্দুয়ার ৭১ ৮৯২৩ ১৩৬১৯ ১৩৫০৪ ৫২.১
নেকমরদ ৭৯ ৯৩৪৬ ১৩৪৭৭ ১৩১৬৯ ৫০.৪
বাচোর ১৫ ৮৫৬৭ ১৪৭৮১ ১৪৬৯৩ ৪৪.১
রাতোর ৮৭ ৮২৫২ ৯৭২৩ ৯৫৯৮ ৫০.৯
লেহেম্বা ৬৩ ৮৮৪৩ ১৩৯৭১ ১৩৪৫১ ৪৫.৯
হোসেনগাঁও ৪৭ ৮০৩৩ ১১৯৯১ ১১৮০৩ ৪০.২

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ রাজা টংকনাথের রাজবাড়ী (মালদুয়ার), জগদলে রাজা বীরেন্দ্রনাথের রাজবাড়ী, নেকমরদে পীর শাহ নাসিরউদ্দীনের (রঃ) মাযার (মুগল আমল), গোরক্ষনাথ মন্দির, রামরাই দীঘি, বাংলা গড়, রাণী দীঘি ও শিব দীঘি।

ঐতিহাসিক ঘটনা তেভাগা আন্দোলনে এ উপজেলার লোকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের সময়ে রাজাকার ও পাকবাহিনী সাধারণ মানুষের উপর অকথ্য নির্যাতন চালায়। এ সময় এ এলাকায় ব্যাপক লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যা সংঘটিত হয়। উপজেলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো সরাসরি যুদ্ধ হয়নি। তবে তারা সক্রিয় থেকে রাজাকার ও পাকসেনাদের নানা সময় বিভিন্নভাবে প্রতিরোধে সক্রিয় ছিলেন। খুনিয়ার দীঘি নামক স্থানে ১টি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিস্তারিত দেখুন রানীশংকাইল উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৪৬৩, মন্দির ২০, গির্জা ৫, মাযার ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: মহলবাড়ি মসজিদ, নেকমরদের পীর নাসিরউদ্দীনের (র.) মসজিদ ও মাযার, গোরক্ষনাথ মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৬.৬%; পুরুষ ৫০.২%, মহিলা ৪২.৯%। কলেজ ১২, কারিগরি কলেজ ৬, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩৯, কমিউনিটি স্কুল ১০, মাদ্রাসা ১১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রানীশংকাইল ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), রানীশংকাইল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), নেকমরদ আলীমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩২), রানীশংকাইল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১৭), আবাদ তাকিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৭৬)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী অবলুপ্ত: উত্তর হাত, এসময়।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৬৩, ক্লাব ৮৪, নাট্যদল ১, যাত্রাদল ১, মিলনায়তন ১, সিনেমা হল ৪।

দর্শনীয় স্থান নেকমরদ, গোরকই, জগদল জমিদার বাড়ি, টংকনাথ রাজার বাড়ি, বাংলাগড় উল্লেখযোগ্য।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৮.৯৩%, অকৃষি শ্রমিক ২.৫৯%, শিল্প ০.৫১%, ব্যবসা ৯.১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৯%, চাকরি ৩.২৪%, নির্মাণ ০.৫%, ধর্মীয় সেবা ০.১১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২১% এবং অন্যান্য ২.৯১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৬.৯৫%, ভূমিহীন ৪৩.০৫%। শহরে ৪১.১৪% এবং গ্রামে ৫৮.৬১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আখ, ভুট্টা, ডাল, আলু।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, যব, পাট।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, তরমুজ।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ৩২, হাঁস-মুরগি ২১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১২৬ কিমি, কাঁচারাস্তা ৭০০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা হাসকিং মিল ৩৫০, অয়েলমিল ২, স’মিল ৮, চিড়ার মিল ৩, আইস ফ্যাক্টরি ২, বিস্কুট ফ্যাক্টরি ৫, চানাচুর ফ্যাক্টরি ২, জুতার কারখানা ১, ওয়েল্ডিং কারখানা ১১।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ, পাটের কাজ, সেলাই কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২০, মেলা ১৮। রানীশংকাইল হাট, নেকমরদ হাট, বলিদারা হাট, ভরনিয় হাট, মহারাজা হাট, বাগরাডাঙ্গি হাট, কাউন্সিল হাট, সিধার হাট, গাজীর হাট এবং নেকমরদ মেলা, গোরকই বান্নির মেলা ও কাতিহার মাঘী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, চাল, ডাল, আলু, আম, কাঁঠাল, তরমুজ, লিচু।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৭.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৮.৩%, ট্যাপ ০.৩% এবং অন্যান্য ১.৪%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২৯.৬% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৫.৪% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২৫.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১০, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৮।

এনজিও ব্র্যাক, আরডিআরএস।  [আবু মো. ইকবাল রুমী শাহ]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; রানীশংকাইল উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।