রাজস্থলী উপজেলা

রাজস্থলী উপজেলা (রাঙ্গামাটি জেলা)  আয়তন: ১৪৫.০৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°১৭´ থেকে ২২°২৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০৬´ থেকে ৯২°২২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কাপ্তাই উপজেলা, দক্ষিণে বান্দরবান সদর ও রোয়াংছড়ি উপজেলা, পূর্বে বিলাইছড়ি উপজেলা, পশ্চিমে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৬০৮৩; পুরুষ ১৩৫৯৫, মহিলা ১২৪৮৮। মুসলিম ৫২৬৫, হিন্দু ২০২৫, বৌদ্ধ ১৫৫৬৮, খ্রিস্টান ৩২১১ এবং অন্যান্য ১৪। এ উপজেলায় চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, চাক, খুমি, লুসাই, পাংখোয়া প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: কর্ণফুলি।

প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯০৯ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮০ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১০৬ ৩০৮০ ২৩০০৩ ১৮০ ৪৯.২ ৪৩.৫
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৪.২৫ ৩০৮০ ২১৬ ৪৯.২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
গাইন্দা ৭১ ১০০৮০ ৪১৯১ ৩৯৬৫ ৩৮.৭
ঘিলাছড়ি ৪৬ ১৪২৪০ ৪৩২৬ ৩৯৮২ ৩৬.২
বাঙ্গালহালিয়া ২৩ ৬৬৮৮ ৫০৭৮ ৪৫৪১ ৫৫.৪

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকবাহিনী এ উপজেলায় ব্যাপক হত্যা, নির্যাতন, লুন্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। মিজোরাম রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র মিজো গেরিলারা পাকবাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করে। গাইন্দা ইউনিয়নে বান্দরবান জেলার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৫ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।

বিস্তারিত দেখুন রাজস্থলী উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৬, মন্দির ৩, গির্জা ২, প্যাগোডা ২৮।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৪.২%; পুরুষ ৫০.৭%, মহিলা ৩৭.২%। কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩২, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৩। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রাজস্থলী কলেজ, বাঙ্গালহালিয়া কলেজ, রাজস্থলী তাইতংপাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বাঙ্গালহালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৮, লাইব্রেরি ৫, সিনেমা হল ২, যাত্রাপার্টি ২, মহিলা সংগঠন ৯, খেলার মাঠ ১৬।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৮.৩৩%, অকৃষি শ্রমিক ১২.৬৯%, ব্যবসা ১২.৪৫%, চাকরি ৬.৪৯%, নির্মাণ ০.৭১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৫৩% এবং অন্যান্য ৮.৮০%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভুমিমালিক ৪৮.০১%, ভূমিহীন ৫১.৯৯%। শহরে ৩৯.৩৯% এবং গ্রামে ৬৫.৪৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল আখ, ভুট্টা, ডাল, তুলা, তামাক, অড়হর, আদা, হলুদ, বাঁশ, বেত।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, কাউন।

প্রধান ফল-ফলাদি কাঁঠাল, লেবু, কলা, কমলা, তরমুজ, আনারস, পেঁপে, সুপারি।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৬, গবাদিপশু ২২, হাঁস-মুরগি ৬৫। এ উপজেলায় কাপ্তাই হ্রদ থেকে ভিন্ন প্রজাতির প্রচুর মাছ ধরা হয়।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ২০৮ কিমি। ব্রিজ ১৫, কালভার্ট ৩০।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল ২,  ডালকল ১, বস্ত্রকল ৫, যন্ত্রপাতি মেরামত  শিল্প ১, প্রকৌশল শিল্প ৫।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প ৮০, মৃৎশিল্প ২, দারুশিল্প ৪, বাঁশ ও বেতের কাজ ২০।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৩, মেলা ২। রাজস্থলী বাজার, কামালছড়ি বাজার, ইসলামপুর বাজার, বলিপাড়া বাজার, গাইলামুখ বাজার, সখিপুর হাট, কাকড়াছড়ি হাট উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  আনারস, কলা, লেবু, কমলা, তরমুজ, কাঁঠাল, সেগুন কাঠ, বেত, বাঁশ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৭.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৬২.২%, ট্যাপ ১.৪% এবং অন্যান্য ৩৬.৪%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৩.৮% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৩.৪% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২২.৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ক্লিনিক ৩, পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক ৩, পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, সিএইচসিপি, গ্রীণ হিল, সিডিএফ, আই ডিএফ।  [গৌতম চন্দ্র মোদক]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; রাজস্থলী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।