রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা

রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা (রাঙ্গামাটি জেলা)  আয়তন: ৫৪৬.৪৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৩০´ থেকে ২২°৪৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০৪´ থেকে ৯২°২২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নানিয়ারচর ও লংগদু উপজেলা, দক্ষিণে কাপ্তাই ও বিলাইছড়ি উপজেলা, পূর্বে বরকল ও জুরাছড়ি উপজেলা, পশ্চিমে কাউখালী উপজেলা।

জনসংখ্যা ১২৪৭২৮; পুরুষ ৬৬২১২, মহিলা ৫৮৫১৬। মুসলিম ৪৮৫৮৩, হিন্দু ১৩৫২৩, বৌদ্ধ ৬১৯৩২, খ্রিস্টান ৪৮৪ এবং অন্যান্য ২০৬। এ উপজেলায় চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, খুমি, চাক, লুসাই, পাংখো প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় কর্ণফুলি নদী ও  কাপ্তাই হ্রদ উল্লেখযোগ্য। এ উপজেলার মোট আয়তনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ জুড়ে রয়েছে কাপ্তাই লেক।

প্রশাসন রাঙ্গামাটি সদর থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
২১ ১৭৮ ৮৪০০০ ৪০৭২৮ ২২৮ ৭৩.১ ৪৬.৫
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬৪.৭৫ ৫৫ ৮৪০০০ ১২৯৭ ৭৩.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কুতুকছড়ি ৫৪ ১১৫২০ ৩১৮৮ ৩১৩১ ৪৩.৫
জীবতলী ৪০ ১৩৪৪০ ২৬৪২ ১৮২৪ ৬৩.৭
বন্দুকভাঙ্গা ১৩ ২০৪৮০ ৪২১৭ ৪১০৫ ৫৫.২
বালুখালী ২৭ ৩৫৪৫০ ৪২৫৮ ৩৯৮৩ ৩৭.৮
মগবান ৬৭ ২০৪৮০ ৩৭৫৯ ৩৪৪২ ৪২.০
সাপছড়ি ৮১ ৯৬০০ ৩২২৩ ২৯৫৬ ৪২.০

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের সময় এ উপজেলা ১ নং সেক্টরের অধীন ছিল। ২৭ মার্চ স্টেশন ক্লাবের মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ট্রেনিং ক্যাম্প খোলা হয়। ২৯ মার্চ ৬০ জনের ১টি দল যুদ্ধ প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য ভারতে যায়। ২ এপ্রিল তৎকালীন জেলা প্রশাসক হোসেন তৌহিদ ইমাম রাজকোষ থেকে প্রচুর অর্থ এবং পুলিশ, আনসার ও ইপিআরদের অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দেন। ১০ এপ্রিল ১ম দল যুদ্ধ প্রশিক্ষণ শেষে ফিরে আসে এবং পরবর্তিতে তারা বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ প্রশিক্ষণ প্রদান করে। ১৯৯২ সালের ২০ মে আদিবাসী বাঙ্গালী সংঘর্ষ ঘটে। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তিচুক্তি অনুযায়ী তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে গঠন করা হয় আঞ্চলিক পরিষদ যার সদর দপ্তর রাঙামাটি শহরে অবস্থিত। উপজেলার স্টেশন ক্লাবের মাঠে ১টি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

দর্শনীয় স্থান রাঙামাটি হ্রদ, চাকমা রাজবাড়ি, রাজবন বৌদ্ধ বিহার, পর্যটন ঝুলন্ত ব্রিজ, শুভলং ঝর্ণা, ফুরামোন পর্বত, উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ও জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩১, মন্দির ১৪, গির্জা ২, প্যাগোডা ৪০, তীর্থস্থান ১, মাযার ১, সেবাশ্রম ৩।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬৪.৫%; পুরুষ ৬৯.৭%, মহিলা ৫৮.৬%। কলেজ ২, পালি কলেজ ৩, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ১, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৪, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৬, কিন্ডার গার্টেন ৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ, রাঙ্গামাটি সরকারি মহিলা কলেজ, রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬২), নারানগিরি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রানী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়, সাপছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়, মোনঘর আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়, লেকার্স পাবলিক স্কুল, রাঙ্গামাটি সিনিয়র মাদ্রাসা।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: গিরি দর্পণ, রাঙ্গামাটি, পার্বত্য বার্তা; সাপ্তাহিক: বনভূমি, পার্বত্য বার্তা; মাসিক: স্কুল বার্তা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৩১, লাইব্রেরি ২, সিনেমা হল ১, শিল্পকলা একাডেমি ১, শিশু একাডেমি ১, মহিলা সংগঠন ১৬, সাহিত্য সংগঠন ১, সাংস্কৃতিক সংগঠন ৩, খেলার মাঠ ৭। উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট (১৯৭৬), জুম ঈসথেটিক কাউন্সিল উল্লেখযোগ্য।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ২৮.২৭%, অকৃষি শ্রমিক ৭.৫১%, ব্যবসা ১৯.২৫%, চাকরি ২৫.১২%, নির্মাণ ২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.৩৩% এবং অন্যান্য ১৬.৫২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৮.০১%, ভূমিহীন ৫১.৯৯%। শহরে ৩৯.৩৯% এবং গ্রামে ৬৫.৪৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আখ, ভুট্টা, ডাল, তুলা, তামাক, আলু।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি সরিষা, কাউন।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, লেবু, আনারস, পেঁপে, লেবু।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৩৩, গবাদিপশু ১৯, হাঁস-মুরগি ৬৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৯১.২৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৬০ কিমি, কাঁচারাস্তা ২১০ কিমি; নৌপথ ১০০ কিমি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, কাঠের কাজ, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৭, মেলা ২। মানিকছড়ি হাট, রাঙ্গাপানি হাট, জীবতলী হাট, আওলাদ হাট, বন্দুকভাঙ্গা বাজার, বড় মাইনীমুখ বাজার ও রাঙ্গামাটি নতুন বাজার উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য কাঠ, কাঁঠাল, লেবু, আনারস।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৭৫.৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৫৭.১%, ট্যাপ ১৭.৬% এবং অন্যান্য ২৫.৩%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭০.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৮.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ২, ক্লিনিক ৩, পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক ৩।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, আদিবাসী উন্নয়ন কেন্দ্র।  [বি.এইচ সোহরাওয়ার্দী]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।