রক্ত থিনার

রক্তথিনার (Blood Thinner) হলো এমন কিছু ঔষধ যা রক্তবাহী নালীর ভিতর দিয়ে সহজে রক্ত চলাচলে সহায়তা করে। এগুলো বিদ্যমান জমাট-বাঁধা রক্তের পরিমাণ বাড়তে দেয় না। হৃৎপিন্ডের অভ্যন্তরে, শিরায় বা ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে হার্টঅ্যাটাক, স্ট্রোক এবং হৃৎপিন্ডে ব্লক হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, রক্তথিনারগুলো রক্তকে পাতলা করে না অথবা জমাট-বাঁধা রক্ত দ্রবীভুত করে না; কিন্তু তারা স্বাধীনভাবে রক্ত প্রবাহ বজায় রাখে যেন নতুনভাবে জমাট বাঁধতে না পারে এবং বিদ্যমান জমাট রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি কমিয়ে রাখতেও সক্ষম। রক্তথিনার দুই প্রকার: (১) জমাটরোধকসমূহ, যেমন- হেপারিন, ওয়ারফারিন, ফন্ডাপারিনাক্স, ডালটিপারিন এবং ইনক্সাপারিন ত্বকের নিচে অথবা শিরায় ইঞ্জেকশন হিসেবে প্রদান করে রক্ত জমাট বাঁধার গতি কমানো হয়; (২) অণুচক্রিকারোধক ঔষধসমূহ, যেমন- অ্যাসপিরিন অথবা সিলোসটাযল ট্যাবলেট রক্তের অণুচক্রিকাকে জমাট-বাঁধার উদ্দেশ্যে একত্রে জমায়েত হতে বাধা দেয়।

যে সমস্ত ব্যক্তির পূর্বেই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়েছে তাদের রক্তথিনার প্রয়োজন, কারণ এগুলো একই ঘটনা দ্বিতীয় বার হবার ঝুঁকি কমায়। যে সমস্ত রোগীর হৃদরোগ, রক্তবাহী নালীর রোগ, হৃৎপিন্ডের অনিয়মিত গতি, লুপাস অথবা গভীর শিরায় থ্রম্বোসিস আছে (এক প্রকার জটিল সমস্যা যা সচরাচর পায়ে জমাট-বাঁধা রক্তের কারণে সৃষ্ট) তাদেরও রক্তথিনার প্রয়োজন। কোনো কোনো জমাটরোধক রক্ত জমাট প্রক্রিয়ার ফ্যাক্টর তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিনকে এর সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়, যেগুলোর সাহায্যে রক্তের কোষ এবং অণুচক্রিকা একে অন্যের সাথে সংযুক্ত হয়ে রক্তবাহী নালীর গায়ে আটকে গিয়ে রক্তপাতে বাধা দেয়। রক্তথিনার ব্যবহারের প্রচুর ঝুঁকিও রয়েছে; কারণ এগুলো কোনো ব্যক্তির শরীরে কোথাও সামান্য কেটে গেলে স্বাভাবিক অবস্থায় যে পরিমাণ রক্তপাত হয় তার তুলনায় দীর্ঘক্ষণ রক্তক্ষরণ ঘটায়। এটা নিশ্চিত হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কি পরিমাণ রক্তথিনার ব্যবহার করলে রক্ত জমাট বাঁধবে না, কিন্তু এমন বেশিও নয় যা রক্তপাত ঘটাতে পারে। [লায়লা নূর ইসলাম]

আরও দেখুন রক্ত, রক্তচাপ