মৃত্তিকা পিএইচ

মৃত্তিকা পিএইচ (Soil pH)  মৃত্তিকার একটি অনন্য ভৌত রাসায়নিক ধর্ম, যা মৃত্তিকা এসিডীয় নিরপেক্ষ বা ক্ষারীয় বিক্রিয়া সম্পন্ন কিনা তা নির্দেশ করে। রাসায়নিকভাবে পিএইচ হলো মৃত্তিকা দ্রবণের হাইড্রোজেন আয়ন সক্রিয়তার ঋণাত্মক লগারিদম। হাইড্রোজেন আয়ন সক্রিয়তাকে মোল/লিটার হিসেবে প্রকাশ করা হয়। মৃত্তিকার পিএইচ মান ৬.৬-এর নিচে হলে এসিডীয় এবং ৭.৩-এর উপরে হলে ক্ষারীয় বিক্রিয়া-সম্পন্ন হয়। যেসব মৃত্তিকার পিএইচ মান ৬.৬ থেকে ৭.৩-এর মধ্যে সেসব মৃত্তিকার বিক্রিয়া নিরপেক্ষ।

বাংলাদেশের অধিকাংশ পলল যখন প্রথম অবক্ষেপিত হয়, তখন এদের বিক্রিয়া নিরপেক্ষ মানের কাছাকাছি থেকে মধ্যম ক্ষারীয় হয়ে থাকে। তদুপরি গঙ্গা ও লোয়ার মেঘনা নদীর অবক্ষেপ চুনযুক্ত। কালো তরাই মৃত্তিকার উপরের দিকের স্তরগুলো মধ্যম থেকে প্রবল এসিডীয়, কিন্তু অন্তঃস্তর তুলনামূলকভাবে কম এসিডীয়। চুনহীন বাদামি পললভূমি মৃত্তিকার পৃষ্ঠমৃত্তিকা প্রধানত মধ্যম থেকে প্রবল এসিডীয়, কিন্তু অন্তঃমৃত্তিকার বিক্রিয়া মধ্যম এসিডীয় থেকে নিরপেক্ষ। চুনযুক্ত বাদামি পললভূমি মৃত্তিকার অধিকাংশ পৃষ্ঠমৃত্তিকা চুনহীন পাললিক মৃত্তিকার মতোই নিরপেক্ষ থেকে মধ্যম ক্ষারীয় বিক্রিয়া সম্পন্ন। ধূসর পললভূমি মৃত্তিকার বিক্রিয়া মধ্যম এসিডীয় থেকে মধ্যম ক্ষারীয়। চুনযুক্ত গাঢ়ধূসর পললভূমি মৃত্তিকা ভিজা অবস্থায় নিরপেক্ষ মানের কাছাকাছি এবং যখন শুকিয়ে যায় তখন প্রবল এসিডীয় হয়ে পড়ে। অম্ল অববাহিকা এঁটেল প্রবল থেকে চরম বিক্রিয়া প্রদর্শন করে। পিটকে শুকানো হলে এর বিক্রিয়া মধ্যম থেকে প্রবল এসিডীয় পরিসরে থাকে। এসিড সালফেট মৃত্তিকাকে যদি শুকানো হয় তবে এর বিক্রিয়া বিষক্রিয়া সম্পন্ন এসিডে পরিণত হয়। ধূসর পর্বত পাদদেশীয় মৃত্তিকার বিক্রিয়া মধ্যম থেকে প্রবল এসিডীয়, যা দেখা যায় যখন ধূসর সোপান ও উপত্যকা মৃত্তিকা শুষ্ক অবস্থায় থাকে। গভীর ও অগভীর লাল-বাদামি সোপান মৃত্তিকা, বাদামি কর্বুরিত সোপান মৃত্তিকা এবং বাদামি পাহাড়ি মৃত্তিকা সর্বাংশে প্রবল এসিডীয়। গঙ্গা নদী পললভূমির পশ্চিম অংশে প্রধানত যশোর অঞ্চলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিচ্ছিন্ন এলাকাতে ক্ষার মৃত্তিকা পাওয়া যায়। এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এলাকার পললভূমি অবক্ষেপ সম্ভবত কয়েক হাজার বছরের পুরানো।  [রামেশ্বর মন্ডল]