মৃত্তিকা নিষ্কাশন

মৃত্তিকা নিষ্কাশন (Soil Drainage)  মৃত্তিকা থেকে পানির বহির্মুখী প্রবাহ। বাংলাদেশে নিষ্কাশন দ্বারা প্রাকৃতিকভাবে বা যথাযথ কৃত্রিম মাধ্যমে মৃত্তিকার পৃষ্ঠ থেকে পানির অপসারণকে অধিকতর সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ করা হয়। নিষ্কাশনকে ব্যাপক অর্থে দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়, যথা- পৃষ্ঠ নিষ্কাশন এবং অন্তর্ভূ-পৃষ্ঠ বা ভূ-জল নিষ্কাশন। কৃত্রিম নিষ্কাশন ব্যবস্থা সাধারণত বাংলাদেশে দেখা যায় না। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক নিষ্কাশনকে বর্ণনা করার জন্য কতগুলো শব্দ ব্যবহার করা হয়: সুনিষ্কাশিত (উত্তম); মধ্যম সুনিষ্কাশিত (মধ্যম মানের উত্তম); অসম্পূর্ণভাবে নিষ্কাশিত/কিছুটা (অসম্পূর্ণ/কিছুটা অপ্রতুল); অপ্রতুল নিষ্কাশিত (অপ্রতুল) এবং অতি অপ্রতুলভাবে নিষ্কাশিত (অত্যন্ত অপ্রতুল)। এসব শব্দমালার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মৃত্তিকাকে মৌসুমমাফিক প্লাবিত এবং সবিরামভাবে প্লাবিত মৃত্তিকা বলা হয়। সুনিষ্কাশিত মৃত্তিকাতে পানি মৃত্তিকা থেকে বা মৃত্তিকার মধ্য দিয়ে পরিমিত পরিমাণে দ্রুত সরে যেতে পারে, যার ফলে একটানা অল্প কয়েক ঘণ্টারও কম সময় মৃত্তিকা পৃষ্ঠের উপর পানি জমা থাকে এবং ভারি বারিপাতের পর দুই থেকে তিন দিনের চেয়ে অধিক সময় মৃত্তিকা-পৃষ্ঠ থেকে পরিলেখের ৬০-৯০ সেন্টিমিটার গভীরতা পর্যন্ত পানি দ্বারা সম্পৃক্ত থাকে না। মধ্যম সুনিষ্কাশিত মৃত্তিকাতে ভারি বারিপাতের পরবর্তী অল্প কয়েক দিন সময় পর্যন্ত মৃত্তিকা পৃষ্ঠের উপর পানি জমা থাকতে পারে এবং বর্ষাকালে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত পৃষ্ঠ থেকে মৃত্তিকা পরিলেখের ৯০ সেন্টিমিটার গভীরতা পর্যন্ত মৃত্তিকা পানি সম্পৃক্ত থেকে যেতে পারে। অসম্পূর্ণ নিষ্কাশিত মৃত্তিকা বর্ষাকালে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত ভিজা থাকে এবং ভারি বারিপাতের পরবর্তী এক থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত পানি জমা থাকে। অপ্রতুলভাবে নিষ্কাশিত মৃত্তিকা বর্ষাকালে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত ভিজা থাকে এবং অসম্পূর্ণভাবে নিষ্কাশিত মৃত্তিকার মতো ভারি বারিপাতের পরবর্তী এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় পর্যন্ত পানি জমা থাকতে পারে।

সুনিষ্কাশিত ও মধ্যম সুনিষ্কাশিত মৃত্তিকা সাধারণত উত্তম সংযুতিসম্পন্ন এবং মধ্যম গ্রথনের মৃত্তিকা। উঁচু ভূমিতে জন্মে এমন শস্য, যেমন- গম, ভুট্টা, গোল আলু, মটর ইত্যাদি জন্মানোর জন্য এসব মৃত্তিকা উপযোগী। কিন্তু অসম্পূর্ণভাবে, অপ্রতুলভাবে ও অতিঅপ্রতুলভাবে নিষ্কাশিত মৃত্তিকার সংযুতি ততটা ভালো নয় এবং মৃত্তিকা ভারি গ্রথনের হয়ে থাকে। মৌসুমমাফিক প্লাবিত মৃত্তিকাগুলো সাধারণত বৃষ্টির পানি বা নদীর পানি দ্বারা বর্ষাকালে অল্প কয়েকদিন জলমগ্ন থাকে। অন্যদিকে, সবিরামভাবে প্লাবিত মৃত্তিকাগুলো বৃষ্টির পানি বা নদীর পানি দ্বারা একটানা অল্প কয়েক দিন প্লাবিত থাকে, কিন্তু বর্ষাকালে বিরতিসহ কয়েক দিন পর্যন্ত প্লাবিত থাকে। অধিকাংশ জেনারেল সয়েল টাইপ (একই প্রকারে উৎপন্ন ও সাধারণভাবে দেখতে সদৃশ মৃত্তিকা একটি গ্রুপ) কেবলমাত্র একটি নিষ্কাশন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, বাদামি পাহাড়ি মৃত্তিকা সুনিষ্কাশিত; চুনযুক্ত বাদামি পললভূমি মধ্যম সুনিষ্কাশিত; কালো তরাই মৃত্তিকা ও বাদামি কর্বুরিত (mottled) মৃত্তিকা অসম্পূর্ণভাবে নিষ্কাশিত; অগভীর ধূসর সোপান, গভীর ধূসর সোপান ও ধূসর উপত্যকা মৃত্তিকা অপ্রতুল নিষ্কাশিত এবং পিট মৃত্তিকা অত্যন্ত অপ্রতুল নিষ্কাশিত শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত। আবার কোন কোন সয়েল টাইপে দুই ধরনের নিষ্কাশন ব্যবস্থা দেখা যায়। গভীর লাল বাদামি সোপান মৃত্তিকা মধ্যম সুনিষ্কাশিত থেকে উত্তম সুনিষ্কাশিত শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত; অগভীর লাল বাদামি সোপান মৃত্তিকা মধ্যম সুনিষ্কাশিত থেকে অসম্পূর্ণভাবে নিষ্কাশিত শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত এবং এসিড সালফেট মৃত্তিকা ও এসিড অববাহিকা এঁটেল মৃত্তিকা অপ্রতুল এবং অত্যন্ত অপ্রতুল নিষ্কাশন শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত।

উঁচুভূমিতে অবস্থিত যেসব মৃত্তিকার পৃষ্ঠ ভারি বারিপাত বা সেচের সময় জলমগ্ন হয়, সেসব মৃত্তিকা উন্মুক্ত নালা বা টাইল নিষ্কাশন পদ্ধতি দ্বারা নিষ্কাশিত হতে পারে। মধ্যম মাত্রায় ধীর বা মধ্যম মাত্রায় দ্রুত অন্তর্মৃত্তিকা প্রবেশ্যতা গুণাবলি সম্পন্ন মৃত্তিকাতে জন্মে এমন শুষ্ক ভূমির রবিশস্যও ভূমি নিষ্কাশন দ্বারা উপকৃত হয়। বর্ষা মৌসুমে উন্মুক্ত নিষ্কাশন কেবল গভীর মৃত্তিকাতে প্রয়োজনীয় হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে মৃত্তিকা নিষ্কাশন ব্যবস্থা সীমিত।  [আমিনুল ইসলাম]