মৃত্তিকা উপাদান অপসারণ

মৃত্তিকা উপাদান অপসারণ (Soil Nutrient Mining)  মৃত্তিকার ভৌত, রাসায়নিক এবং জৈব ধর্মাবলির অবনতি। এটি মৃত্তিকা জৈবপদার্থের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং পুষ্টি উপাদানের হ্রাস- এ দুইয়ের সমন্বয়ে ঘটে। মৃত্তিকাতে বিদ্যমান গাছের পুষ্টি উপাদান ব্যবহারের উপর শস্য উৎপাদন নির্ভরশীল। যদিও গাছের পুষ্টি উপাদানের প্রয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবুও অধিকাংশ শস্যের উৎপাদন মৃত্তিকার কিছু বা অধিকাংশ পুষ্টি উপাদান আহরণের উপর নির্ভরশীল। কোন একটি পুষ্টি উপাদান যোগ করা ব্যতীত পূর্বে ফলন হ্রাস ব্যতীত কত সময় ব্যাপী মৃত্তিকাতে শস্য উৎপাদন করা যায় সেই ভিত্তিতে মৃত্তিকাগুলোতে বেশ পার্থক্য বিদ্যমান। মৃত্তিকাতে কখন পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করতে হবে তা নির্ণয় করতে গাছে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতির লক্ষণ শনাক্তকরণ এবং সেই সঙ্গে মৃত্তিকা ও গাছ পরীক্ষণের মতো কৌশল সাহায্যকারী হিসেবে প্রয়োজনীয়।

বাংলাদেশে মৃত্তিকা পুষ্টি উপাদান অপসারণ প্রধানত মৃত্তিকাতে গাছের পুষ্টি উপাদানের যথাযথ নতুন সরবরাহ ব্যতীত ভূমি ব্যবহারের কারণে ঘটে। যথোপযুক্ত ভূমি ব্যবস্থাপনা ব্যতীত নিবিড় ভূমি ব্যবহারের ফলে এ সমস্যাটি বৃদ্ধি পায়। এ সমস্যাটি সেসব এলাকাতে মারাত্মক আকার ধারণ করে, যেখানে স্বল্প ও ভারসাম্যহীন সার এবং সামান্য বা জৈব চক্রায়ণ ব্যতীত উচ্চ ফলনশীল জাতের শস্য উৎপাদন করা হয়। শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধি এবং আধুনিক জাতের শস্য চাষাবাদের কারণে নিবিড় চাষাবাদের অধীন এলাকাতে পুষ্টি উপাদানের নিট অপসারণের (নাইট্রোজেন-N, ফসফরাস-P, পটাশ-K এবং সালফার-S) পরিসর ১৮০ থেকে ২৫০ কেজি/হেক্টর/বছর। উঁচু ও মধ্যম উঁচুভূমি এলাকার অধিকাংশ মৃত্তিকা, বিশেষ করে যেসব এলাকায় N, P, K ও S-এর ঘাটতি রয়েছে সেসব এলাকায় মৃত্তিকার উর্বরতার মাত্রা কম। সম্প্রতি, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, গাজীপুর জেলা ও বরেন্দ্র অঞ্চলের কিছু কিছু এলাকাতে ম্যাগনেসিয়াম (Mg), দস্তা (Zn), বোরন (B) এবং মলিবডেনামের (Mo) ঘাটতি দেখা গিয়েছে। স্বল্প উর্বরতা বা অধিক পরিমাণে পুষ্টি উপাদান অপসারণকারী এসব এলাকা দেশের মোট চাষাবাদযোগ্য ভূমির (প্রধানত নিবিড়ভাবে চাষাবাদকৃত এলাকা) প্রায়-৬০ শতাংশ।

বাংলাদেশে কৃষিতে ব্যবহূত মোট পুষ্টি উপাদানের ৮০ শতাংশই নাইট্রোজেন। অন্যদিকে P ও K -এর ব্যবহার যথাক্রমে কেবল ৬.০-৬.৬ শতাংশে সীমিত। সাম্প্রতিককালের উপাত্ত থেকে দেখা যায় যে, ফসফরাস সংবলিত সারের ব্যবহার ১৯৮০-৮১ সালের ১২ শতাংশ থেকে লক্ষণীয়ভাবে ১৯৯৬-৯৭ সালে ৬ শতাংশে নেমে গিয়েছে। এ হ্রাসের সম্ভাব্য কারণগুলো হলো সারের অধিকমূল্য এবং বাজারে লভ্য স্বীকৃত আদর্শ মানের ফসফরাস সংবলিত সার। ফিল্ড নাইট্রোজেন সারের ব্যবহার এ সময়ের মধ্যে নিয়মিতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যা N, P2O5 ও K2O (Original)-এর ব্যবহারের মধ্যে বিদ্যমান অনুপাতকে ভারসাম্যহীন করে তুলেছে।  [মোঃ মোসলেম উদ্দিন মিয়া]