মুল্ক

মুল্ক  সুলতানি আমলে বাংলার একটি প্রশাসনিক বিভাগ। মুল্ক মূলত আরবি শব্দ। এর বাংলা প্রতিশব্দ জনপদ বা রাজ্য। সুলতানি প্রশাসনে রাজ্যের প্রদেশগুলোকে মুল্ক অভিধায় চিহ্নিত করা হয়েছে। ইলিয়াসশাহী সুলতানদের সময়ে মুদ্রা ও শিলালিপিতে উল্লেখিত আরসাহ, ইকলিম ও মুল্ক শব্দ দ্বারা প্রদেশকে নির্দেশ করা হয়েছে। হোসেন শাহী শাসনামলে প্রতিটি প্রদেশ আরসাহ, ইকলিম ও মুল্ক এই ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত ছিল।  সুলতান সিকান্দর শাহের একটি মুদ্রায় ‘মুল্ক চৌলিস্তান উর্ফ আরসাহ কামারু’ নামের প্রয়োগ থেকে এটা সুস্পষ্ট যে তখন প্রদেশের অভিধা ‘মুল্ক’ ও ‘আরসাহ’ অভিন্ন ছিল। হোসেনশাহী আমলে রাজ্যের ইকলিম নামীয় বিভক্তি ছিল আরসার অনুরূপ। প্রদেশের বিশেষণ হিসেবে ইলিয়াসশাহী আমলে ইকলিম ও আরসাহ শব্দের প্রয়োগ, এবং হোসেনশাহী আমলে আরসাহ, ইকলিম ও মুল্ক শব্দের ব্যবহার থেকে এমনটি ধারণা করা যায় যে, সমগ্র বাংলায় প্রদেশগুলোর নাম বা বিশেষণ নির্ধারণে অভিন্ন রীতি অনুসরণ করা হয়নি। অঞ্চলভেদে এদের নামকরণ ছিল ভিন্নতর। দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গে প্রদেশগুলোর বিশেষণ ছিল আরসাহ এবং পূর্ববঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব বাংলায় এদের নামকরণ হয়েছে ইকলিম। এ আমলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গে প্রদেশগুলোর সুনির্দিষ্ট কোনো অভিধার উল্লেখ পাওয়া যায়নি। মরক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা এর বিবরণে সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারক শাহের অধীনে মূল্ক সাদকাওয়ান (চট্টগ্রাম) নামে এক প্রদেশের উল্লেখ রয়েছে। এর থেকে স্পষ্টতই বোঝা যায় যে, তখন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গে প্রদেশের অভিধা ছিল মুল্ক।

ইলিয়াসশাহী শাসনামলে প্রদেশের শাসনকর্তার পদবি ছিল সর-ই-লস্কর ওয়া ওয়াজির এবং হোসেনশাহী আমলেও সর-ই-লস্কর ওয়া ওয়াজির এবং কখনো শুধুই ওয়াজির। এমতাবস্থায় প্রতীয়মান হয় যে, মুল্ক-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত শাসনকর্তার পদবি ছিল সর-ই-লস্কর ওয়া ওয়াজির। কিন্তু ইবনে বতুতার বিবরণে সুলতান ফখরুদ্দীনের অধীনস্থ প্রদেশ মুল্ক সাদকাওয়ান নায়েব উপাধিধারী একজন শাসনকর্তার অধীনে ন্যস্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি স্পষ্টতই ইলিয়াসশাহী এবং হোসেনশাহী ব্যবস্থা থেকে ব্যতিক্রম।  [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]

গ্রন্থপঞ্জি  A H Dani, Bibliography of the Muslim Inscriptions of Bengal, Appendix to JASB, vol.ii, 1957; Muazzam Hussain Khan, Fakhruddin Mubarak Shah of Sonarganw, Dhaka, 2005.