মুগ

মুগ (Mungbean)  অন্যতম সুপরিচিত ডাল, Fabaceae গোত্রের প্রজাতি, Vigna radiata। মুগের দুটি জাত; একটি aureus, হলুদ বা সোনালি রঙের বীজ, সোনামুগ। পাতা কিছুটা ফ্যাকাশে, শুঁটি বোঁটার দিকে উল্টানো এবং ভঙ্গুর। পশুখাদ্য ও সবুজ সারের জন্যই প্রধানত চাষ। অন্যটি typica সবুজ মুগ, বীজ সবুজ রঙের, শুঁটি ততটা ভঙ্গুর নয়, বীজের জন্যই চাষ। আরও দুটি জাত আছে grandis (কালো বীজ) ও bruncus (বাদামি বীজ), ভারত উপমহাদেশে কিছুটা চাষ হয়ে থাকে।

মুগ গাছ

মুগের উৎপত্তিস্থল সম্ভবত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া; ব্যাপক চাষ হয় ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, চীন ও ইন্দোনেশিয়ায়। তবে পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ায়ও ফলানো হয়।

মুগ খাড়া বা অর্ধ-গড়ানো বর্ষজীবী গুল্ম। যৌগপত্র একান্তর, ত্রিপত্রিক, কখনওবা ৪-৫ পত্রিক। অনিয়ত মঞ্জরিতে ১০-২০টি ফুল হয়। ফুল প্রজাপতিসম (papilionacious)। শুঁটি সরু, লম্বা, বেলনাকার, বীজস্থানে সামান্য স্ফীত, ৫-৯ সেমি লম্বা, আগা ঠোঁটালো, গাঢ় বাদামি বা কালো, রোমশ, বীজ সংখ্যা ৫-১৫। বীজ সরু, উপবৃত্তাকার, ০.৩-০.৫  ০.২-০.৪ সেমি এবং হলুদ, সবুজ বা হালকা বাদামি রঙের।

মুগ বেলে-দোঅাঁশ, লেটেরাইট, পলিজ ও ভারি কাদামাটিতে চাষ করা যায়। মুগের জন্য জলাবদ্ধতা অত্যন্ত ক্ষতিকর, তাই সুনিষ্কাশিত জমি আবশ্যক। সর্বোত্তম ফসল ফলে গভীর ও সুনিষ্কাশিত পলিজ দোঁআশ জমিতে।

বাংলাদেশে সচরাচর শীতের মৌসুমেই মুগ চাষ হয়। কিন্তু অধিক ফলনের জন্য এখন গরমের মাসগুলিতেও মুগ চাষ বাড়ছে। মুগ দেশের সর্বত্র জন্মালেও বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, দিনাজপুর এবং কুমিল্লা প্রধান উৎপাদনকারী এলাকা। বর্তমানে মুগচাষাধীন জমি প্রায় ৫৪,৯৮২ হেক্টর এবং বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৩৪,৪০০ মে টন। হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদন প্রায় ৬১০ কেজি।

মুগের নানা রোগের কারণ ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও মাইকোপ্লাজমা। সর্বাধিক রোগ ঘটায় ছত্রাক, অতঃপর ক্রমান্বয়ে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও মাইকোপ্লাজমা।

গোটা বা ভাঙা মুগ নানাভাবে রান্না করা হয়। মিষ্টি বানিয়ে, তেলে ভেজেও খাওয়া যায়। কচি মুগ উত্তম শাক। কোন কোন অঞ্চলে এটি পশুখাদ্য ও সবুজ সার হিসেবে ব্যবহূত হয়। শুকনা গাছ ও শুঁটির বাকল পশুখাদ্যে ব্যবহার্য। [মোঃ ইমদাদুল হক এবং নিশীথ কুমার পাল]

আরও দেখুন ডাল