মুখোপাধ্যায়, বিশু

মুখোপাধ্যায়, বিশু (১৯২১-১৯৭৪)  নাট্যব্যক্তিত্ব। ঢাকায় জন্ম। নাটক রচনা বা নাটকের অভিনয়ে তিনি অংশগ্রহণ করেননি বটে, কিন্তু নাটকের সফল মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে সাজ-সজ্জাদি আনুষঙ্গিক বিষয়ে উদ্ভাবনী শক্তি ও সৃজনশীল কর্মকান্ডের জন্য তিনি বাংলা নাট্যাভিনয় জগতে খ্যাত হয়ে আছেন।

বিশু মুখোপাধ্যায় নাট্যাভিনয় সংক্রান্ত এই অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তাঁর পিতা রমেশ মুখোপাধ্যায়ের নিকট থেকে। রমেশ মুখোপাধ্যায় ১৯৪০ সালে ঢাকার ‘মঞ্চমায়া’ (২৮ জোড়পুর লেন, দক্ষিণ মৈশুন্ডি) নাট্যমঞ্চে প্রথম দৃশ্যসজ্জা, পোশাক-পরিচ্ছদ ও রূপসজ্জার কাজ শুরু করেন। এই সূত্রে বিশু মুখোপাধ্যায়ও এ কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন এবং ১৯৫০ সালে পিতার মৃত্যুর পর এর সম্পূর্ণ দায়িত্ব তিনি গ্রহণ করেন। নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার ফলে একসময় তিনি এ বিষয়ে খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন। তাঁর রূপসজ্জাকৃত সফল নাটকগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখেযোগ্য কয়েকটি হলো: টিপু সুলতান, বঙ্গে বর্গী, সাজাহান, সিরাজদ্দৌলা ইত্যাদি। পরবর্তীকালে তিনি এ কাজ ছেড়ে মঞ্চে দৃশ্যসজ্জার কাজ শুরু করেন।

বিশু মুখোপাধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, আহ্সানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তন, ওয়াপদা মিলনায়তন, লালকুঠি মিলনায়তন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান বা মঞ্চে অভিনীত নাটকসমূহের দৃশ্যসজ্জা নির্মাণ ও প্রতিস্থাপনের কাজে দক্ষতার পরিচয় দেন।

বিশু মুখোপাধ্যায়ের বিশেষ কৃতিত্ব হলো, তিনি নাটকের গতানুগতিক সেটের পরিবর্তন এনে সাজেস্টিভ সেট ব্যবহার শুরু করেন। ঢাকার নাট্যমঞ্চে প্রথম দোতলা বাড়ির সেট নির্মাতা ছিলেন তিনিই। এছাড়া নদীর ঢেউয়ের ওপর দিয়ে নৌকা চালানো, পোড়োবাড়ি থেকে কঙ্কাল দৃশ্যমান করে ঊর্ধ্বে উঠিয়ে নেওয়া, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সামান্য ক্ষতি নৃত্যনাট্যে বস্তি জ্বালিয়ে দেওয়া ইত্যাদি দৃশ্য-পরিকল্পনায় তিনি অসাধারণ মঞ্চকুশলতার পরিচয় দেন।  [জিল্লুর রহমান জন]