মুখোপাধ্যায়, ঠাকুরদাস

মুখোপাধ্যায়, ঠাকুরদাস (১৮৫১-১৯০৩) সম্পাদক, সাহিত্যিক। ১৮৫১ সালের খুলনা জেলার সাতক্ষীরা  মহকুমার অধীন কপোতাক্ষ তীরবর্তী সারসা গ্রামে ঠাকুরদাসের জন্ম হয়। তাঁর বাবার নাম নবকুমার মুখোপাধ্যায়।

একটু বেশি বয়সে, প্রায় চৌদ্দ বৎসর বয়সে ঠাকুরদাসের পাঠারম্ভ হয়। তিনি ২৪ পরগনা গোবরডাঙ্গার ইংরেজি স্কুলে অধ্যয়ন করেন। কৃতি ছাত্র হিসেবে স্কুলে তাঁর বেশ সুনাম ছিল। এন্ট্রাস পরীক্ষার সময় তাঁর বাবা মারা গেলে পরীক্ষা দেওয়া আর সম্ভব হয়নি এবং প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখাও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তাঁর অধ্যয়ন স্পৃহা চিরদিন বলবৎ ছিল। তাঁর ভাষ্যমতে- ‘পাশ্চাত্য পন্ডিত ও কবিগণের মধ্যে আমি মেকলে কার্লাইল, এমার্সন, বায়রন ও স্কট এবং দেশীয়গণের মধ্যে মুকুন্দরাম, মাইকেল, হেমচন্দ্র, দীনবন্ধু, কেশব, বঙ্কিম, কালীপ্রসন্ন এবং অক্ষয়চন্দ্রের নিকট ঋণী।’

সম্ভবত ১৮৭৩ সালে স্বগ্রামের মাইনর স্কুলের প্রধান শিক্ষকরূপে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয। পরে বিহারের ছাপরা স্কুলের শিক্ষকের পদে কাজ করেন। ১৮৭৬ সালে তিনি দ্বারভাঙ্গা মহারাজের কোর্ট-অব-ওয়ার্ড সের অধীন ১৮৯১ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। পরে তিনি বঙ্গবাসী’র সহকারী সম্পাদক পদে আড়াই বছর কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। আনুমানিক ১৮৯৮ সালে তিনি জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে দ্বারকানাথ ঠাকুরের স্টেটে কিছুদিন চাকরি করেন। তাছাড়া স্বল্প সময়ের জন্য তিনি বঙ্গনিবাসী সাপ্তাহিক পত্রের সম্পাদকের কাজ করেন। তাঁর শেষ চাকরি ছিল যশোর চৌগাছার ঘোষবাবুদের বাড়িতে ম্যানেজার পদে।

তাঁর সাহিত্য প্রতিভা সম্পর্কে বলা যায় একদিকে তিনি ছিলেন সমালোচক, প্রবন্ধ লেখক, অন্যদিকে ছিলেন রঙ্গরস রসিকতায়, শ্লেষ-ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে এবং রসাল ভাষার গাঁথুনিতে সিদ্ধহস্ত। তাঁর ভাষা সম্পূর্ণরূপে নিজস্ব স্টাইলের; আলালী ও সাগরা ভাষার মতো তাঁর ভাষাকে ঠাকুরদাসী ভাষা বলা যায়। তিনি পান্ডিত্যপূর্ণ ব্যঙ্গে ও সুরসিকতায় ছিলেন অতিশয় দক্ষ। প্রচার, নবজীবন, প্রবাহ, পাক্ষিক সমালোচক, মালঞ্চ, নব্যভারত, সাহিত্য, জন্মভূমি, অনুসন্ধান, ভারতী, প্রদীপ প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর সত্তরের অধিক রচনা ছাপা হয়েছে। তাছাড়া তিনি পাক্ষিক সমালোচক ও মালঞ্চ পত্রিকা দুটি প্রকাশ করেন। সাহিত্যে তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা: দুর্গোৎসব (১৮৮৩), সাহিত্যমঙ্গল (১৮৮৮), সাত-নরী (১৮৮৮), সহর-চিত্র (১৯০১), সোহাগ- চিত্র (১৯০১)। ১৯০৩ সালের ২৮ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়।  [শামীমা আক্তার]