মুখোপাধ্যায়, জয়কৃষ্ণ

মুখোপাধ্যায়, জয়কৃষ্ণ (১৮০৮-১৮৮৮)  জমিদার, বিদ্যোৎসাহী, সমাজসেবী। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় তাঁর জন্ম। উত্তরপাড়ার জমিদারবংশ তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর পিতা জগন্মোহন মুখোপাধ্যায় ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা।

জয়কৃষ্ণ কলকাতার হিন্দু কলেজে কিছুদিন অধ্যয়ন করার পর পিতার কর্মস্থল মীরাটে চলে যান। সেখানে তিনি সামরিক অফিসে চাকরি করে প্রচুর অর্থোপার্জন করেন এবং সে অর্থে নিজ গ্রাম উত্তরপাড়ায় বিস্তর ভূসম্পত্তি ক্রয় করেন। পরে ১৮৩৫ সালে চাকরি পরিত্যাগ করে তিনি বিষয়-সম্পত্তি সংরক্ষণে মনোনিবেশ করেন। এভাবে নিজ প্রচেষ্টায় জয়কৃষ্ণ জমিদারির পত্তন করেন।

জয়কৃষ্ণের জমিদারি সে সময় আত্মমঙ্গলের পাশাপাশি সমাজমঙ্গলেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। জয়কৃষ্ণ নিজে স্বল্প শিক্ষিত হলেও শিক্ষা বিস্তারের প্রতি তাঁর ঐকান্তিক আগ্রহ ছিল। তাই তাঁরই উৎসাহ ও অর্থে উত্তরপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়, কলেজ এবং একটি সাধারণ পাঠাগার। ১৮৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ পাঠাগার ছিল তখন বাঙালির এক গৌরবের বিষয়। ১৮৬৯/৭০ সালে গ্রন্থাগার স্থাপনের জন্য তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৫০০০ টাকা দান করেন। সে সময় তাঁর অর্থসাহায্যে মোট একত্রিশটি বিদ্যালয় পরিচালিত হতো।

শিক্ষার উৎকর্ষ বিধানের জন্য তিনি বিভিন্ন প্রকার পুরস্কার ঘোষণা করেন। একবার তাঁর ঘোষণা অনুযায়ী কৃষকদের জীবনযাত্রাভিত্তিক Govinda Samanta বা History of Bengali Rayat শীর্ষক গ্রন্থ রচনা করে পাঁচশত টাকা পুরস্কার পেয়েছিলেন হুগলি কলেজের অধ্যাপক  লালবিহারী দে (১৮২৪-১৮৯৪)।

জয়কৃষ্ণ প্রজাদের, বিশেষত কৃষকদের মঙ্গলের জন্য নানারকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে তিনি উত্তরপাড়ায় স্থাপন করেছিলেন একটি গণহাসপাতাল। এটি ছিল তাঁর অন্যতম মহৎ কীর্তি। দরিদ্র প্রজাদের জন্য তিনি একটি দাতব্য চিকিৎসালয়ও স্থাপন করেছিলেন।

প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী জয়কৃষ্ণ দেশ ও সমাজের বিভিন্ন প্রকার উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তিনি কলকাতায়  ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন গঠনে অন্যতম উদ্যোক্তার ভূমিকা পালন করেন। পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের (১৮২০-১৮৯১) বিধবাবিবাহ আন্দোলনকে তিন সমর্থন করেন এবং ১৮৭৮ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গৃহীত ভারতে ব্রিটিশদের জন্য অবাধ বাণিজ্যনীতির বিরোধিতা করেন। ভারতীয় কংগ্রেসের সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। ১৮৮৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনে তিনি অভ্যর্থনা-সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৮৮ সালের জুলাই মাসে তাঁর মৃত্যু হয়।  [দুলাল ভৌমিক]