মির্জাপুর উপজেলা

মির্জাপুর উপজেলা (টাঙ্গাইল জেলা)  আয়তন: ৩৭৩.৮৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°০১´ থেকে ২৪°১৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫৮´ থেকে ৯০°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে সখীপুর ও বাসাইল উপজেলা, দক্ষিণে কালিয়াকৈর ও ধামরাই উপজেলা, পূর্বে কালিয়াকৈর উপজেলা, পশ্চিমে দেলদুয়ার ও নাগরপুর উপজেলা।

জনসংখ্যা ৪০৭৭৮১; পুরুষ ১৯৫২৫৬, মহিলা ২১২৫২৫। মুসলিম ৩৫৫৬৩৬, হিন্দু ৫১৮৬৭, বৌদ্ধ ২২, খ্রিস্টান ২১১ এবং অন্যান্য ৪৫।

জলাশয় বংশী, তুরাগ ও ফুটজানি নদী উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন মির্জাপুর থানা গঠিত হয় ১৯১৩ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮২ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৪ ২০২ ২১৯ ৩৫৪১৪ ৩৭২৩৬৭ ১০৯১ ৫৯.৯ (২০০১) ৫৪.২
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার(%)
৮.৫৮ (২০০১) ১৭ ২৮৬০২ ২৭৪৩ (২০০১) ৬৯.৭
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.৯২ (২০০১) ৬৮১২ ৮৬৭ (২০০১) ৬৬.৪
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আজগানা ১৩ ১০৭৭৫ ১৬০৭৭ ১৬৮৭২ ৫১.২
আনাইতারা ১৫ ৬০৮৫ ১১৬৫৩ ১৩২৫৯ ৫৩.৫
ওয়ার্শী ৯৪ ৬৮৭১ ১৩০২৭ ১৪৫৮৪ ৫৯.৮
গড়াই ৫৫ ৭৩০১ ২৮৬৩৪ ২৯২৬৩ ৫৯.৪
জামুর্কী ৬৩ ৫২১৪ ১৬১২৭ ১৭৩৬৬ ৫৭.৭
তরফপুর ৮৭ ৬৫০০ ১১০০৭ ১২১৬২ ৪৭.৩
ফতেপুর ৪৭ ৪৯৫৮ ৯৭৩৩ ১১০৮০ ৫০.২
বহুরিয়া ২৩ ৫১৭০ ১০১৮০ ১১২২৪ ৫২.২
বাঁশতৈল ৩৪ ১১৯৮৩ ১৪৩০৬ ১৫৪৭৫ ৪০.৪
বানাইল ৩১ ৫৬৬০ ১১১৩৯ ১২২৬৯ ৫৮.৩
ভাওড়া ৩৬ ৩৫৬০ ৮৫০২ ৯৩৭০ ৬১.৫
ভাতগ্রাম ৩৯ ৪৮৮৭ ১০৪০৮ ১১৪৬১ ৫৪.৫
মহেড়া ৭১ ৪৪১৩ ১৩৪৭০ ১৩৬৭৪ ৫৬.৮
লতিফপুর ৬৭ ৫০৪২ ৭৮৪৬ ৯০১১ ৫৫.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ পাকুল্লার তিন গম্বুজবিশিষ্ট প্রাচীন মসজিদ (অষ্টাদশ শতাব্দী)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল এ উপজেলার গোড়ান সাটিয়াচড়ায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে বেশ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয় এবং ৩৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। উপজেলার অন্যান্য যেসব স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয় সেসবের মধ্যে রামপুর, পাথরঘাটা, নয়াপাড়া প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। উপজেলার পাকুল্লায় ১টি বধ্যভূমি এবং গোড়ান-সাটিয়াচড়ায় ১টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিস্তারিত দেখুন মির্জাপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৮।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩০৬, মন্দির ১০৫। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: পাকুল্লার মসজিদ, পাকুল্লার মঠ, ছাওয়ালীর কালী মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৫.৫%; পুরুষ ৫৯.২%, মহিলা ৫২.২%। কলেজ ৬, মেডিকেল কলেজ ১, ক্যাডেট কলেজ ১, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার ১, নার্সিং ইনস্টিটিউট ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৫৯, মাদ্রাসা ১৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ (১৯৬৫), কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ (২০০১), মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং স্কুল (১৯৭০), মহেড়া আনন্দ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৯০), জামুর্কী নবাব স্যার আব্দুল গণি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), মির্জাপুর এস কে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫), মৈশামূড়া বি কে উচ্চবিদ্যালয় (১৯২০), গস্থামাটিয়া এস সি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৭), বরাবি নরদানা বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৮), ভাতগ্রাম দয়াময় চতুষ্পাঠি।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: বংশাই (অনিয়মিত)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান নাট্যমঞ্চ ১, ক্লাব ৬০, খেলার মাঠ ৫০।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৪.৯৪%, অকৃষি শ্রমিক ৩.০২%, শিল্প ১.০৬%, ব্যবসা ১২.৫৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.০২%, চাকরি ১১.৬%, নির্মাণ ১.২৬%, ধর্মীয় সেবা ০.১৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৪.০১% এবং অন্যান্য ৯.৩৭%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৬.০৫%, ভূমিহীন ৩৩.৯৫%। শহরে ৫০.৯০% এবং গ্রামে ৬৭.২৪% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, সরিষা, আলু, গম, ডাল, আখ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি মটর, খেসারি, মিষ্টি আলু, তিল, মাষকলাই।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২৫০, গবাদিপশু ৭৮, হাঁস-মুরগি ৩৫০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৩২ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৮ কিমি, কাঁচারাস্তা ৮০০ কিমি; রেলপথ ১২ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ডুলি, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা কটন মিল, স্পিনিং মিল, জুট মিল, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, ব্যাটারি কারখানা, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, কাঁসাশিল্প, মৃৎশিল্প, বুননশিল্প, কাঠের কাজ।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   আলু, পাট, আখের গুড়।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬৩.৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯১.৭%, ট্যাপ ৩.৫% এবং অন্যান্য ৪.৮%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬৫.০% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৮.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৬.১% পরিবারের কোনো স্যানিটেশন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১২, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৬, ক্লিনিক ১২।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলার অনেক লোক প্রাণ হারায়। এছাড়া ১৯৮৮ সালের বন্যায় ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা। [মলয় সাহা]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মির্জাপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।