মিটামইন উপজেলা

মিটামইন উপজেলা (কিশোরগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ২২২.৯১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°২২´ থেকে ২৪°৩০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°০০´ থেকে ৯১°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ইটনা ও আজমিরিগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে অষ্টগ্রাম উপজেলা, পূর্বে বানিয়াচং ও অষ্টগ্রাম উপজেলা, পশ্চিমে করিমগঞ্জ ও নিকলি উপজেলা।

জনসংখ্যা ১২২০২৬; পুরুষ ৬১৮৩১, মহিলা ৬০১৯৫। মুসলিম ১১৪১৩০, হিন্দু ৭৭৭৩, খ্রিস্টান ৬ এবং অন্যান্য ১১৭।

জলাশয় প্রধান নদী: ধনু ও কালাই। বড়গোপ বিল, গজারিয়া বিল, দেওদরি বিল, শ্রীঘর বিল, রতি বিল ও নিকলি বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন মিটামইন থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৫৬ ১৩৫ ১২৬০০ ১০৯৪২৬ ৫৪৭ ৪১.৯ ২৯.৫
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৯.১৫ ১২৬০০ ১৩৭৭ ৪১.৯
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কেওড়জরি ৬৭ ৭৪৬৩ ৭৩০০ ৭১০৩ ২৮.৯
খাটখাল ৫৪ ৬১০৬ ৭৭২১ ৭৪১৮ ১৯.৮
গোপদীঘি ৪০ ৯৫১৪ ৯৯৯৯ ১০০৩২ ৩১.৩
ঘাগড়া ২৭ ৭৫০৮ ১০৬১২ ১০৫৭৩ ৩১.৬
বৈরাতি ১১ ৪৫৫১ ৬২১১ ৫৭৪৪ ২৭.৪
ঢাকি ১৩ ১০৭৬৭ ১০০৬৪ ১০০৪০ ৩৪.৫
মিটামইন ৮১ ৯১৭৫ ৯৯২৪ ৯২৮৫ ৩৭.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ঘটনা ১৯৭১ সালের ১ নভেম্বর পাকসেনারা এ উপজেলার ধুবাজুরা গ্রামের ১৮ জন এবং তেলিখাই গ্রামের ৩ জনকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে উপজেলা এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ না হলেও উপজেলার কাটখাল ইউনিয়নে ‘দিল্লির আখড়া’ নামে পরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি আখড়া ছিল এবং উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর নৌযান ধ্বংস করতে এম্বুশ করতেন। উপজেলা সংলগ্ন অন্যান্য কয়েকটি স্থানে অপারেশন পরিচালনা করেন। উপজেলার বয়রা গ্রামে একটি বধ্যভূমি রয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন মিটামইন উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৮।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৯৭, মাযার ৩, মন্দির ২, আখড়া ৩। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: হযরত শাহ তমিজ উদ্দিন (রহঃ) মাযার, মালিকের দরগা, দিল্লীর আখড়া, ঘাগড়া গোধর গোস্বামীর আখড়া।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩০.৯%; পুরুষ ৩৩.৬%, মহিলা ২৮.২%। কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭৬, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১০, মাদ্রাসা ২৫।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ৩০।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৮২.৪৮%, অকৃষি শ্রমিক ২.৩২%, শিল্প ০.২০%, ব্যবসা ৭.২৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ০.২৪%, চাকরি ২.৩৩%, নির্মাণ ০.৫৬%, ধর্মীয় সেবা ০.২১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২০% এবং অন্যান্য ৪.২০%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬০.৩৪%, ভূমিহীন ৩৯.৬৬%। শহরে ৬৩.৩৩% এবং গ্রামে ৬০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, সরিষা, আলু, খিরাই, চীনাবাদাম, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, কাউন।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ২২, হাঁস-মুরগি ২৬।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৮ কিমি, আধা-পাকা রাস্তা ২ কিমি, কাঁচারাস্তা ৬০ কিমি; নৌপথ ৩২ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি।

শিল্প ও কলকারখানা বরফকল, বেকারি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১১। মিটামইন বাজার, গোপদীঘি বাজার ও ঢাকি বাজার উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, চীনাবাদাম, আলু, খিরাই।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৩.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৭৯.৭% এবং অন্যান্য ২০.৩%। এ উপজেলার ২০.৫০% অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ১৮.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৬৫.৩% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ১৫.৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১, ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, কমিউনিটি ক্লিনিক ১৪।

এনজিও প্রশিকা, আশা। [মোকাররম হোসেন শোকরানা]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মিটামইন উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।